ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘আমি বাংলাদেশ’। এসময় ভারতীয় মিডিয়ার বাংলাদেশ বিষয়ক অপতথ্য সম্প্রচারের প্রতিবাদও করা হয়।
গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরের লন্ডনের ভারতীয় হাইকমিশন (ইন্ডিয়া হাউস, অ্যাল্ডউইচ) এর সামনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
আয়োজকরা বলেন, এই নৃশংস হামলা শুধু একটি স্থাপনার উপর নয়, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা এবং জাতীয় গৌরবের উপর সরাসরি আঘাত।
বক্তারা আরও বলেন, ত্রিপুরার বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনে হামলা বাংলাদেশ-বিরোধী আগ্রাসনের একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ। এসময় তারা দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা,কাটা তারে ফেলানী খাতুনের নির্মম মৃত্যু,এবং তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চনা, এসব ঘটনাগুলো ভারতের বাংলাদেশ-বিরোধী নীতির ধারাবাহিক চিত্র প্রকাশ করে।
প্রতিবাদের অন্যতম আয়োজক সংগঠন “আমি বাংলাদেশ”- এর প্রধান আহ্বায়ক ব্যারিস্টার শরীফ হায়দার মৃদুল বলেন, ভারতের সরকারের উচিত আগরতলা বাংলাদেশ হাইকমিশন অফিস হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং প্রশ্ন তোলেন কেন আগরতলা হামলার সময় পুলিশ এবং ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা সেদিন নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিবেশীদের কাছে সম্মানের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই যেখানে থাকবে আশা এবং শান্তির বার্তা, থাকবে না কোনো আগ্রাসন।
বাংলাদেশ থেকে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হামজা মাহবুব টেলি কনফারেন্স এর মাধ্যমে বক্তৃতা রাখেন। তিনি প্ৰবাসী বাংলাদেশিদেরকে ধন্যবাদ দেন জুলাই বিপ্লব থেকে এখন পর্যন্ত সবসময় তাদের পাশে থাকার জন্য। উল্লেখ্য ‘আমি বাংলাদেশ’ জুলাই এবং আগস্ট মাসে বাংলদেশ এ বিপ্লবের সর্মথনে লন্ডনস্থ আলতাব আলী পার্ক এবং ট্রাফালগার স্কয়ারে হাজার মানুষের সমাগম করে বিপ্লবের পক্ষে জনমত তৈরী করেছে এবং এখনো একই চেতনায় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কে সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টায় আছে।
আমি বাংলাদেশ এর মুখপাত্র মাসকসুদুল হক শাকুর বলেন, ফেলানির মতো হাজারো বাংলদেশী ইন্ডিয়ান বর্ডার এ গত পাঁচ দশক এ খুন হয়েছে ইন্ডিয়ান BSF দ্বারা, এর বিচার হতে হবে এবং এধরনের সকল হত্যা বন্ধ করতে হব।
লন্ডন কমিটির আহ্বায়ক নাইমুল ইসলাম (আতিফ) বলেন, ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট সকল এলিগেশান বন্ধ করে ৭৮ জন নাবিককে ফেরত দিতে বলে।
এসময় আরও বক্তব্য দেন, জাহানারা আক্তার শিমলা, আবু তাইয়েব, সৌরভ, সেলিম মাহমুদ, মোঃ কামরুল হাসান ভুইঁয়া, মোঃ ফারুক, আরাফাত শেখ প্রমূখ।
এসময় প্রতিবাদকারীরা ৭ দফা দাবী পেশ করেন। দাবীগুলো হলে-
১। ত্রিপুরার হামলার জন্য ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।
২। সীমান্তে সকল বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৩। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে।
৪। কাটা তারের মৃত্যুফাঁদ অবিলম্বে সরাতে হবে।
৫। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বর্বর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬। ত্রিপুরার হামলায় জড়িত উগ্র হিন্দুত্বাদী নেতাদের আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৭। ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আয়োজকেরা একটি স্মারকলিপি দেয়ার জন্য চেষ্টা করলেও তা পরবর্তীতে ‘Indian High Commission, Indian House’ তা গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানান।
উল্লেখ্য, “আমি বাংলাদেশ”একটি তৃণমূল মানবাধিকার সংগঠন, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এর প্রচার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, এবং দেশের জনগণের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে।
বায়ান্ন/এসএ