ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

ছোট ঋণ: বড় দায়

কামরুল হাসান: | প্রকাশের সময় : সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

সাধারণত ঋণ বলতে দেনা, দায়, ধার, কর্জ ও হাওলাত প্রভৃতিকে বুঝায়। অনেক সময় সামান্য ঋণেরও অনেক বড় দায় থাকে। এ বিষয়টির প্রকৃষ্ট উদাহরণস্বরূপ বাস্তবমুখী জীবনী নির্ভর একটি গল্প তুলে ধরছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর অর্থনীতিবিদ ড: আতিউর রহমান স্যারের জীবনীই হলো সেই বাস্তব গল্প। গল্পটাই একটি ইতিহাস। একটি শিক্ষণীয় অধ্যায়। যা দেশের বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে। আমরা বই-পুস্তকে পড়েছি- ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি ও মানুষ নিজেই তার ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক। এ গল্পটা তার বাস্তব উদাহরণ। স্যার নিজেই তাঁর এ জীবনী গল্পে উল্লেখ করেছেন- অনেক ঋণ আছে, যা শোধ হবার নয়। কিন্তু মাত্র ১৫০ টাকার ঋণ জীবন উৎসর্গ করলেও শোধ হবে না। স্যার নিঃসঙ্কুচে তা প্রকাশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। স্যারের লেখা জীবনীমূলক গল্পটি দেশের বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উপদেশ, উদাহরণ, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ প্রদান, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দৃঢ়তাসহ নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভে সহায়তা করবে।

ড. আতিউর রহমান স্যারের জন্ম জামালপুর জেলার এক অজপাড়া গাঁয়ে। ১৪ কিলোমিটার দূরের শহরে যেতে হতো পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে। পুরো গ্রামের মধ্যে একমাত্র মেট্রিক পাস ছিলেন তাঁর চাচা মফিজউদ্দিন। স্যারের বাবা ছিলেন একজন অতি দরিদ্র ভূমিহীন কৃষক। স্যারেরা পাঁচ ভাই, তিন বোন। কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো তাঁদের।

তাঁর দাদার আর্থিক অবস্থা ছিলো মোটামুটি। কিন্তু তিনি স্যারের বাবাকে তাঁর বাড়িতে ঠাঁই দেননি। দাদার বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটা ছনের ঘরে তাঁরা এতগুলো ভাই-বোন আর বাবা-মা থাকতেন। স্যারের মা তাঁর বাবার বাড়ি থেকে অর্থাৎ স্যারের নানার সম্পত্তির সামান্য অংশ পেয়েছিলেন। তাতে তিন বিঘা জমি কেনা হয়। চাষাবাদের জন্য অনুপযুক্ত ওই জমিতে বহু কষ্টে তাঁর বাবা যা ফলাতেন, তাতে বছরে  ৫/৬ মাসের খাবার জুটতো। দারিদ্র্য কী জিনিস, তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন- খাবার নেই, পরনের কাপড় নেই; কী এক অবস্থা !

স্যারের মা সামান্য লেখাপড়া জানতেন। তাঁর কাছেই স্যারের পড়াশোনার হাতেখড়ি। তারপর বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু‘ তাঁর পরিবারে এতটাই অভাব যে, তিনি যখন তৃতীয় শ্রেণীতে উঠলেন, তখন আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলো না। স্যারের বড় ভাই আরো আগে স্কুল ছেড়ে কাজে ঢুকেছেন। তাকেও লেখাপড়া ছেড়ে রোজগারের পথে নামতে হলো।

তাঁদের একটা গাভী আর কয়েকটা খাসি ছিল। তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওগুলো মাঠে চরাতেন। বিকেল বেলা গাভীর দুধ নিয়ে বাজারে গিয়ে বিক্রি করতেন। এভাবে দুই ভাই মিলে যা আয় করতেন, তাতে কোন রকমে দিন কাটছিল। কিছুদিন চলার পর দুধ বিক্রির আয় থেকে সঞ্চিত আট টাকা দিয়ে তিনি পান-বিড়ির দোকান দেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকানে বসতেন। পড়াশোনা তো বন্ধই, আদৌ করবেন কিনা- সেই স্বপ্নও ছিল না!

এক বিকেলে স্যারের বড় ভাই বললেন, আজ স্কুল মাঠে নাটক হবে। স্পষ্ট মনে আছে, তখন তাঁর গায়ে দেওয়ার মতো কোন জামা নেই। খালি গা আর লুঙ্গি পরে তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে নাটক দেখতে চলেছেন। স্কুলে পৌঁছে তিনি তো বিস্ময়ে হতবাক! চারদিকে এত আনন্দময় চমৎকার পরিবেশ! তাঁর মনে হলো, তিনিও তো আর সবার মতোই হতে পারতেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁকে আবার স্কুলে ফিরতে হবে।

নাটক দেখে বাড়ি ফেরার পথে বড় ভাইকে বললেন, তিনি কি আবার স্কুলে ফিরতে পারবেন না? স্যারের বলার ভঙ্গি বা করুণ চাহনি দেখেই হোক কিংবা অন্য কোন কারণেই হোক কথাটা স্যারের ভাইয়ের মনে ধরলো। তিনি বললেন, ঠিক আছে কাল হেডস্যারের সঙ্গে আলাপ করবো।

পরদিন দুই ভাই আবার স্কুলে গেলেন। বড় ভাই তাঁকে হেডস্যারের রুমের বাইরে দাড় করিয়ে রেখে ভিতরে গেলেন। তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট শুনছেন, ভাই বলছেন তাঁকে যেন বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগটুকু দেওয়া হয়। কিন্তু হেডস্যার অবজ্ঞার ভঙ্গিতে বললেন, সবাইকে দিয়ে কি লেখাপড়া হয়! হেডস্যারের কথা শুনে তাঁর মাথা নিচু হয়ে গেল। যতখানি আশা নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলেন, হেডস্যারের এক কথাতেই সব ধুলিস্মাৎ হয়ে গেল। তবু স্যারের বড় ভাই অনেক পীড়াপীড়ি করে তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি যোগাড় করলেন। পরীক্ষার তখন আর মাত্র তিন মাস বাকি। বাড়ি ফিরে মাকে বললেন, তাঁকে তিন মাসের ছুটি দিতে হবে। তিনি আর এখানে থাকবেন না। কারণ ঘরে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই- তাঁর কোন বইও নেই, কিন্তু তাঁকে পরীক্ষায় পাস করতে হবে।

স্যারের মা বললেন, কোথায় যাবি? তিনি বললেন, তাঁর এককালের সহপাঠী এবং এখন ক্লাসের ফার্স্টবয় মোজাম্মেলের বাড়িতে যাবো। ওর মায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। যে ক’দিন কথা বলেছি, তাতে করে খুব ভালো মানুষ বলে মনে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমাকে উনি ফিরিয়ে দিতে পারবেন না।

দুরুদুরু মনে মোজাম্মেলের বাড়ি গেলেন। সবকিছু খুলে বলতেই খালাম্মা সানন্দে রাজি হলেন। তাঁর খাবার আর আশ্রয় জুটলো; শুরু হলো নতুন জীবন। নতুন করে পড়াশোনা শুরু করলেন। প্রতিক্ষণেই হেডস্যারের সেই অবজ্ঞাসূচক কথা মনে পড়ে যায়, জেদ কাজ করে মনে; আরো ভালো করে পড়াশোনা করার।

যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু হলো। তিনি এক-একটি পরীক্ষা শেষ করছেন আর ক্রমেই যেন উজ্জীবিত হচ্ছেন। তাঁর আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যাচ্ছে। ফল প্রকাশের দিন তিনি স্কুলে গিয়ে প্রথম সারিতে বসলেন। হেডস্যার ফলাফল নিয়ে এলেন। স্যার লক্ষ্য করলেন, পড়তে গিয়ে তিনি কেমন যেন দ্বিধান্বিত। আড়চাখে স্যারের দিকে তাকাচ্ছেন। তারপর ফল ঘোষণা করলেন। স্যার প্রথম হয়েছেন ! খবর শুনে বড় ভাই আনন্দে কেঁদে ফেললেন। শুধু তিনি নির্বিকার যেন এটাই হওয়ার কথা ছিল।

বাড়ি ফেরার পথে সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। তিনি আর তাঁর ভাই গর্বিত ভঙ্গিতে হেঁটে আসছেন। আর পিছনে এক দল ছেলেমেয়ে তাঁকে নিয়ে হৈ চৈ করছে, স্লোগান দিচ্ছে। সারা গাঁয়ে সাড়া পড়ে গেল ! তাঁর নিরক্ষর বাবা, যাঁর কাছে ফার্স্ট আর লাস্ট একই কথা- তিনিও আনন্দে আত্মহারা; শুধু এইটুকু বুঝলেন যে, ছেলে বিশেষ কিছু একটা করেছে। যখন শুনলেন স্যার ওপরের ক্লাসে উঠেছে, নতুন বই লাগবে, পরদিনই ঘরের খাসিটা হাটে নিয়ে গিয়ে ১২ টাকায় বিক্রি করে দিলেন। তারপর স্যারকে সঙ্গে নিয়ে জামালপুর শহরে গেলেন। সেখানকার নবনূর লাইব্র্রেরি থেকে নতুন বই কিনলেন।

স্যারের জীবনযাত্রা এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তিনি রোজ স্কুলে যান। অবসরে সংসারের কাজ করেন। ইতোমধ্যে স্কুলের স্যারদের সুনজরে পড়ে গেছেন। ফয়েজ মৌলভী স্যার তাঁকে তার সন্তানের মতো দেখাশুনা করতে লাগলেন। সবার আদর, যত্ন, স্নেহে তিনি ফার্স্ট হয়েই পঞ্চম শ্রেণীতে উঠলেন। এতদিনে গ্রামের একমাত্র মেট্রিক পাস মফিজউদ্দিন চাচা তাঁর খোঁজ নিলেন। তার বাড়িতে স্যারের আশ্রয় জুটলো।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি দিগপাইত জুনিয়র হাইস্কুলে ভর্তি হন। স্যারের চাচা ওই স্কুলের শিক্ষক। অন্য শিক্ষকরাও তাঁর সংগ্রামের কথা জানতেন। তাই সবার বাড়তি আদর-ভালোবাসা পেতেন।

তিনি যখন সপ্তম শ্রেণী পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণীতে উঠবেন, তখন চাচা একদিন কোত্থেকে যেন একটা বিজ্ঞাপন কেটে নিয়ে এসে তাঁকে দেখালেন। ওইটা ছিল ক্যাডেট কলেজে ভর্তির বিজ্ঞাপন। যথাসময়ে ফরম পুরণ করে পাঠালেন। এখানে বলা দরকার, স্যারের নাম ছিল আতাউর রহমান। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের ভর্তি ফরমে স্কুলের হেডস্যার তাঁর নাম আতিউর রহমান লিখে চাচাকে বলেছিলেন, এই ছেলে একদিন অনেক বড় কিছু হবে। দেশে অনেক আতাউর আছে। ওর নামটা একটু আলাদা হওয়া দরকার; তাই আতিউর করে দিলেন।

তিনি রাত জেগে পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিলেন। নির্ধারিত দিনে চাচার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে রওনা হলেন। ওই তাঁর জীবনে প্রথম ময়মনসিংহ যাওয়া। গিয়ে সবকিছু দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ ! এত এত ছেলের মধ্যে তিনিই কেবল পায়জামা আর স্পঞ্জ পরে এসেছেন! তাঁর মনে হলো, না আসাটাই ভালো ছিল। অহেতুক কষ্ট করলেন। যাই হোক পরীক্ষা দিলেন; ভাবলেন হবে না। কিন্তু দুই মাস পর চিঠি পেলেন, তিনি নির্বাচিত  হয়েছেন। এখন চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যেতে হবে।

সবাই খুব খুশি; কেবল স্যারই হতাশ। তাঁর একটা প্যান্ট নেই, যেটা পরে যাবেন। শেষে স্কুলের কেরানি কানাই লাল বিশ্বাসের ফুলপ্যান্টটা ধার করলেন। আর একটা শার্ট যোগাড় হলো। স্যার আর তাঁর চাচা অচেনা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন। চাচা শিখিয়ে দিলেন, মৌখিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে তিনি যেন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলেন: “ম্যা আই কাম ইন স্যার ?” ঠিকমতোই বললেন। তবে এত উচ্চস্বরে বললেন যে, উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

পরীক্ষকদের একজন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ এম. ডাব্লিউ পিট স্যারকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে  সবকিছু আঁচ করে ফেললেন। পরম স্নেহে তিনি তাঁকে বসালেন। মুহূর্তের মধ্যে  তিনি স্যারের খুব আপন হয়ে গেলেন। স্যারের মনে হলো, তিনি থাকলে তাঁর কোন ভয় নেই। পিট স্যার তাঁর লিখিত পরীক্ষার খাতায় চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর অন্য পরীক্ষকদের সঙ্গে ইংরেজিতে কী সব আলাপ করলেন। তিনি সবটা না বুঝলেও আঁচ করতে পারলেন যে, তাঁকে তাদের পছন্দ হয়েছে। তবে তারা কিছুই বললেন না। পরদিন  ঢাকা শহর ঘুরে দেখে বাড়ি ফিরে এলেন। যথারীতি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলেন। কারণ তিনি ধরেই নিয়েছেন তাঁর চান্স হবে না।

হঠাৎ তিন মাস পর চিঠি এলো। তিনি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মাসে ১৫০ টাকা বেতন লাগবে। এর মধ্যে ১০০ টাকা বৃত্তি দেওয়া হবে, বাকি ৫০ টাকা তাঁর পরিবারকে যোগান দিতে হবে। চিঠি পড়ে মন ভেঙে গেল। যেখানে তাঁর পরিবারের তিন বেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, তিনি তাঁর চাচার বাড়িতে মানুষ হচ্ছেন, সেখানে প্রতিমাসে ৫০ টাকা বেতন যোগানোর কথা চিন্তাও করা যায় না !

এই যখন অবস্থা, তখন প্রথমবারের মতো স্যারের দাদা সরব হলেন। এত বছর পর নাতির (স্যারের) খোঁজ নিলেন। তাঁকে অন্য চাচাদের কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, তোমরা থাকতে নাতি আমার এত ভালো সুযোগ পেয়ে পড়তে পারবে না? কিন্তু‘ তাদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো ছিল  না। তারা বললেন, একবার না হয় ৫০ টাকা যোগাড় করে দেবো, কিন্তু প্রতি মাসে তো সম্ভব নয়। দাদাও বিষয়টা বুঝলেন।

তিনি আর কোন আশার আলো দেখতে না পেয়ে সেই ফয়েজ মৌলভী স্যারের কাছে গেলেন। তিনি বললেন, তিনি থাকতে কোন চিন্তা করতে হবে না। পরদিন আরো দুইজন সহকর্মী আর স্যারকে নিয়ে তিনি হাটে গেলেন। সেখানে গামছা পেতে দোকানে দোকানে ঘুরলেন। সবাইকে বিস্তারিত বলে সাহায্য  চাইলেন। সবাই সাধ্য মতো আট আনা, চার আনা, এক টাকা, দুই টাকা দিলেন। সব মিলিয়ে ১৫০ টাকা হলো। আর স্যারের চাচারা দিলেন ৫০ টাকা। এই সামান্য টাকা সম্বল করে তিনি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হলেন। যাতায়াত খরচ বাদ দিয়ে তিনি ১৫০ টাকায় তিন মাসের বেতন পরিশোধ করলেন। তখন থেকেই শুরু হলো স্যারের অন্য এক জীবন।

প্রথম দিনেই এম. ডাব্লিউ. পিট স্যার তাঁকে দেখতে এলেন। তিনি সবকিছু খুলে বললেন। আরো জানালেন যে, যেহেতু তাঁর আর বেতন দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাই তিন মাস পর ক্যাডেট কলেজ ছেড়ে চলে যেতে হবে। সব শুনে পিট স্যার তাঁর বিষয়টা বোর্ড মিটিং-এ তুললেন এবং পুরো ১৫০ টাকাই বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই থেকে স্যারকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। এস.এস.সি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে পঞ্চম স্থান অধিকার করলেন এবং আরো অনেক সাফল্যের মুকুট যোগ হলো।

স্যারের জীবনটা সাধারণ মানুষের অনুদানে ভরপুর। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর এলাকায় স্কুল করেছেন, কলেজ করেছেন। যখন যাকে যতটা পেরেছেন, সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতাও করেছেন। কিন্তু‘ সেই যে হাট থেকে তোলা ১৫০ টাকা; সেই ঋণ আজও শোধ হয় নি। তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করলেও সেই ঋণ শোধ হবে না!

(লেখক- সাংবাদিক ও ডিরেক্টর, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা এবং সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা)