ঢাকা, মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জুনিয়র লিডারসিপের সেকশন কমান্ডারের দায়িত্বে সরদার আজিজুর রহমান

এমএ রহিম, সিলেট: | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৭ মে ২০২৩ ০৯:৩৪:০০ পূর্বাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন




৩০ জুলাই বেসিক প্রশিক্ষণ শেষ হয়। সকলের অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সবাই জমা দেন অস্ত্র। ১ আগস্ট ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসাররা এলেন। জানিয়ে দিলেন পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে।


১ আগস্ট থেকে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে দৈনিক বায়ান্নের কাছে তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ জানালেন এবার সম্মুখ যুদ্ধে যেতে হবে। সম্মুখ যুদ্ধে যাওয়ার জন্যে কয়েকটি দলে বিভক্ত করা হলো। আগে থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ ওই তালিকা তৈরি করে রেখেছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হলো বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে। কিন্তু সরদার আজিজসহ ৩০ জনকে রেখে দেয়া হলো ক্যাম্পে। এই ত্রিশজনকে জানানো হলো তাদেরকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই উচ্চতর প্রশিক্ষণের নাম হচ্ছে জুনিয়র লিডারসিপ প্রশিক্ষণ। সবাইকে সম্মুখযুদ্ধে পাঠিয়ে দিয়ে ৩০ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশে অবস্থিত জুনিয়র লিডারসিপ উইং ক্যাম্পে। যার সংক্ষেপ নাম জেএল উইং ক্যাম্প। সেখানে গিয়ে দেখলেন আরো ৪০ জন আছেন জেএল প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্যে।
 
সরদার আজিজ জানান, বেসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা ছিল তেরপালের ঘরে। এবার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে ছনের ঘরে। ঘরের ভেতরে বাঁশ দিয়ে তিন তলার মাচান তৈরি করে বিছানা তৈরি করা হয়েছে। প্রতি তলায় একজন করে থাকবেন। তিন তলা ও দ্বিতীয় তলায় উঠার জন্যে বাঁশের তৈরি মই আছে। জঙ্গেল ভেতরে প্রচুর বাঁশ থাকায় মাচানসহ অন্যান্য জিনিস তৈরিতে সহজে বাঁশ পাওয়া যেত।  উইং ক্যাম্পের ৭০ জনের মধ্যে তিন ছিলেন বিএ পাস। এই তিনজন থেকে একজনকে উইং কমান্ডার ও একজনকে ডেপুটি ইউং কমান্ডার করা হয়। সরদার আজিজকে করা হয় ২১ সদস্যের দলের এক নম্বর সেকশন কমান্ডার। সেকশন কমান্ডার করা হয় মোট ৫ জনকে। রান্নার জন্যে এবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৩ জন বাবুর্চি নিয়োগ দেয়া হয়। সপ্তাহে দুইদিন গোস্ত দেয়া হতো। বাকি ৫ দিন ডাল, সবজি দেয়া হতো।


তিনি জানাচ্ছিলেন, ৭০ জনের সবাইকে একটি করে এসএমজি দেয়া হয়। ৭০ জনকে চারজন-তিনজনের গ্রæপে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক গ্রæপে বরাদ্দ করা হয় একটি করে এলএমজি। সকলকে দেয়া হয় একটি করে খাতা একটি করে কলম। এর পরপরই জানিয়ে দেয়া হলো ২ আগস্ট থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

বীর মুক্তযোদ্ধা আজিজ জানান, ২ আগস্ট সকাল ৮ টার দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সুবেদার এলেন। তিনি সবাইকে লাইনে দাঁড় করালেন। তারপর নিয়ে গেলেন পাশের একটি ছনের ঘরে। ওই ঘরে গিয়ে সবাই মেঝেতে বসলেন। ঘরের একদিকে একটি বোর্ড ঝুলানো ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে এলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন মেজর। তিনি থিওরি ক্লাস করাতে শুরু করলেন। বোর্ডের মধ্যে বিস্ফোরক সম্পর্কে লিখে ধারণা দিতে শুরু করলেন। সবাই তা খাতায় লিখে নিচ্ছিলেন। বিস্ফোরক কিভাবে ব্যবহার করতে হয় হয় তারও বিবরণ দিলেন। যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার বিভিন্ন কৌশল শেখাতে লাগলেন। প্রতি সপ্তাহে এভাবে দুইদিন থিওরি ক্লাস হলো। বাকি ৫ দিন ছিল প্রাক্টিক্যাল। এই পাঁচদিন অস্ত্র নিয়ে গভীর জঙ্গলে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতেন। দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় শত্রæ পক্ষকে কিভাবে ঘায়েল করতে হয় তা শেখাতে লাগলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী।

সরদার আজিজ বললেন, একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম বেসিক প্রশিক্ষণের সময় বলা হতো ‘তোমাদের’। কিন্তু জুনিয়র লিডারসিপ প্রশিক্ষণে বলা হতো ‘তুমি’। এর মানে হলো বেসিক প্রশিক্ষণে সমষ্টিগত যুদ্ধে নিজেদের রক্ষার কৌশল শেখানে হয়। আর জুনিয়র লিডারসিপ প্রশিক্ষণে শেখানে হয় এককভাবে আত্মরক্ষার। বাস্তবে কিভাবে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে হয় তা শেখানো হলো হাতে-কলমে। গ্রেনেড-৩৬, এন্টি ট্যাংক মাইন, এন্টি পারসনাল মাইনসহ নানান ধরণের বিস্ফোরক ব্যবহারের নিয়ম শেখানো হলো। দুর্যোগময় মূহুর্তে নিজকে রক্ষার কৌশল শেখানো হয়। এর পরপরই জানিয়ে দেয়া হয় এই উইংয়ের ৩০ দিনের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়েছে। ওই ঘোষণার আগে উইং কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডার, সেকশন কমান্ডার পর্যায়ের ৭ জনের হাতে একটি করে সাতটি রিভলবার তুলে দেয়া হয়। এর আগে রিভলবার পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের শেষ দিনে ৩০ আগস্ট জানিয়ে দেয়া হয় সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে সবাইকে সম্মুখ যুদ্ধে পাঠানো হবে।