ঢাকা, শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১

বছরের শেষ ‘ইত্যাদি’ ২৯ ডিসেম্বর প্রচার হবে মৌলভীবাজারে

মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৩:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

দেশ-বিদেশের অজানা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিকড়ের সন্ধানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধারণ করা হয় গণমানুষের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত অপূর্ব সুন্দর জেলা মৌলভীবাজারে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে ১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে অবস্থিত কুরমা চা বাগান আবৃত মাঠে। ঘন সবুজ অরণ্য, পাহাড়ের বুকে মুগ্ধতা ছড়ানো চায়ের বাগান, লেক আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে চা গাছ দিয়ে মোড়ানো মঞ্চে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি। অধিকাংশ সময়ই রাতের আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদি ধারণ করা হলেও এই স্থানের নৈসর্গিক রূপ রাতের বেলায় দেখানো সম্ভব নয় বলে পড়ন্ত বিকেলে ধারণ শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয় ১৫ ডিসেম্বর। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে পুরো মৌলভীবাজার জেলায় ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা। ইত্যাদির শুটিং দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করে। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় বিকাল ৩টা থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও অনেক দর্শক আশেপাশের টিলা, রাস্তা ও লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ইত্যাদির ধারণ উপভোগ করেন। ধারণ চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। তীব্র শীত উপেক্ষা করে এই দীর্ঘ সময় ধরে উপভোগ করেছেন তাদের প্রিয় অনুষ্ঠানের ধারণ। এবারের অনুষ্ঠানে মৌলভীবাজারের সন্তান কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী ও সিলেটের সন্তান তসিবা আঞ্চলিক ভাষায় একটি ভিন্নরকম প্রেমের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটির কথা লিখেছেন রামাচরণ, সুর করেছেন আকাশ মাহমুদ। উল্লেখ্য, তসিবার প্রথম টেলিভিশন যাত্রা শুরু হয়েছিলো ইত্যাদির মাধ্যমে। এছাড়াও মৌলভীবাজারকে নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায়, হানিফ সংকেতের সুরে এবং মেহেদির সঙ্গীতায়োজনে একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন মৌলভীবাজারেরই স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন খাজা সালাউদ্দিন ঝন্টু, কণ্ঠ দিয়েছেন পুলক, তানজিনা রুমা, মোমিন বিশ্বাস ও নোশিন তাবাসসুম স্মরণ। দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী, ধারণস্থান মৌলভীবাজারকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় বাঙালি ও মণিপুরী সম্প্রদায়ের কয়েকজন নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র শিল্পী। শেকড় সন্ধানী ইত্যাদি সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে মৌলভীবাজারের উপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। ব্যতিক্রমী পলিথিনের হাটের উপর রয়েছে একটি জনসচেতনতামূলক প্রতিবেদন। সবশেষে রয়েছে একজন আদর্শ মায়ের হৃদয়ছোঁয়া স্বপ্নের গল্প। এবারের বিদেশি প্রতিবেদন পর্বে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত ‘এন সিউল টাওয়ার’-এর উপর একটি প্রতিবেদন। এছাড়াও মৌলভীবাজারের মঞ্চে যথারীতি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে রয়েছে নানি-নাতির কথার মাতামাতি। চিঠিপত্র বিভাগে মুক্তিযুদ্ধের তথ্যচিত্র ও স্মারক সংগ্রাহক হিসাবে পরিচিত শ্রীমঙ্গলের বিকুল চক্রবর্তীর কার্যক্রম তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। নিয়মিত অন্যান্য পর্বসহ রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ণ নাট্যাংশ। খাঁটি মাটির মানুষ, নিত্যপণ্য মূল্যে নিম্নবিত্তের নাভিশ^াস, দুয়ারে খাবার-দুঃচিন্তায় অভিভাবক, তারকা বাজার, মূল্যহীনকে মূল্যবান বানানোর পরিণতি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের করুণ হাল, ঘরোয়া অশান্তি, অযথা কথা, উপরে ওঠার শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন। ইত্যাদির এই পর্ব একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচার হবে আগামী ২৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের সৌজন্যে এটি নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।