ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ের তিন মাসেই লাশ হলো কিশোরী সালমা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০১:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

হাতের মেহেদীর রং এখনো শুকাইনি। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে সহ্য করতে হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের সময় যৌতুকের কোনো কথা ছিল না। তারপরও দুই লাখ টাকা  এবং একটি মোটরসাইকেল দাবি করে স্বামী সম্রাট হোসেন (২৬)। এই দাবি মেটাতে না পারায় জীবন দিতে হলো কিশোরী নববধূ সালমা খাতুনকে (১৩)। 

 

 

ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামে। সালমা খাতুন সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের মো. আশিক মন্ডলের মেয়ে। স্বামী একই ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামের জালাল উদ্দিন ছেলে সম্রাট হোসেন।

 

 

জানা যায়, সালমা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডুগডুগি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশুনা করতো। স্কুলে যাওয়া আসার পথে সম্রাটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই এক পর্যায়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে প্রায় তিনমাস আগে তাদের বিয়ে হয়। সালমা ও সম্রাটের বিয়ের সময় যৌতুক দেওয়ার কথা ছিল। তখন যৌতুক দিতে পারেনি সালমার পরিবার। বিবাহের পর ২ লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল যৌতুক দাবি করেন স্বামী সম্রাট হোসেন। এসব নিয়ে প্রায়ই জামাই সম্রাট সালমাকে মারধর করত। সোমবার সকালে ঘরেই ছিল সালমা খাতুন। দুপুরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সালমার বাবা-মাকে জানান সে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এরপর শ্বশুর লোকজন নিয়ে তাকে ভ্যানে করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসছিলেন। পথিমধ্যে হারিজের মোড় এলাকায় পৌঁছালে সালমার বাবার বাড়ির লোকদের দেখে ভ্যানে মরদেহ রেখেই পালিয়ে যান তারা।

 

 

মৃত সালমার খালা জোছনা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই জামাই সম্রাট সালমাকে মারধর করত। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করত। রমজান মাসে শুরুতে বাবার বাড়ি আসার কথা কিন্তু তার স্বামী ও শাশুড়ি আসতে দেয়নি। ২৫ রমজানে বাড়িতে আসার কথা। এরি মধ্যে গত শুক্রবার দুপুরে সালমাকে নিয়ে পুকুরে গোসল করতে যায় তার স্বামী সম্রাট। দুজন মিলে গোসল করতে গেলে সেখানেই সালমাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার চেষ্টা করে সম্রাট। সেখানে দুজন দেখে ফেলায় সেই হত্যা চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সোমবার সালমাকে মারতে মারতে তাকে মেরে ফেলে। মারার পর আত্মহত্যা বলে নাটক সাজাতে গিয়ে মরদেহ রেখে পালিয়ে গেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

 

 

মধুহাটি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আয়ুব হোসেন বলেন, গত তিন মাস আগে গ্রামের আশিকের মেয়ের বিয়ে হয় পাশের বড়বাড়ি গ্রামের জালাল উদ্দিন ছেলে সম্রাটের সাথে। সালমাকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে মরদেহটি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে , পোস্টমর্টেম এর পরেই বোঝা যাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে কি না।

 

 

মধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা কাছে অভিযোগ ছিল, বিবাহের পর থেকেই সালমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল সম্রাট। এর আগেও তাকে পুকুরে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করে হয়েছে বলে অভিযোগ করে সালমার পরিবার। ছালমা আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাই। তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক তদন্তে বেরিয়ে আসবে হত্যা না আত্মহত্যা।

 

 

ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিন উদ্দীন জানান, লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে কি না।