ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

রাহ্মণবাড়িয়ায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশের সময় : বুধবার ৯ অগাস্ট ২০২৩ ০৭:০৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত। গত চব্বিশ ঘন্টায় জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। আক্রান্তের সংখ্যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত এক মাসে জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৮ জন। তবে, জেলায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আবার আক্রান্তের পাশাপাশি সুস্থ্য হওয়ার সংখ্যাও একেবারে কম নয়। জেলা সদর হাসপাতালসহ জেলার সবক'টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কীট NS1 রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ।
 
 
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত চব্বিশ ঘন্টায় (০৯ আগস্ট দুপুর ১২ টা নাগাদ) জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। তাদের মধ্যে জেলা সদর তথা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল জাসপাতালেই ১০ জন। তাছাড়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় চারজন, কসবা ও নবীনগর উপজেলায় তিনজন করে এবং বিজয়নগর উপজেলায় একজন আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির দিকেই প্রবাহমান। এই সংখ্যা গত ০৮ আগস্ট সোমবার ছিলো ১২ জন, তার আগেরদিন রোববার ছিলো ১৮ জন, শনিবার ১৪ জন, শুক্রবার ১৮ জন, বৃহস্পতিবার ০৯ জন এবং গত বুধবার (০৩ আগস্ট) ছিলো ১২ জন। গত জুলাই মাসের ৪ তারিখ থেকে ০৯ আগস্ট মঙ্গলবার পর্যন্ত এক মাসে জেলায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৮ জন। তবে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলায় কেউ মারা যায়নি বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করেছেন।
 
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বর্তমানে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬১জন। তন্মথ্যে জেলা সদরস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালেই ভর্তি আছেন ২০ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জেলার নাসিরনগর উজেলা। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১৯জন। তাছাড়া জেলার নবীনগর উপজেলা হাসপাতালে নয়জন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা হাসপাতালে পাঁচজন, কসবা উপজেলা হাসপাতালে তিনজন, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলা হাসপাতালে দুইজন করে এবং আশুগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন আছেন। অপরদিকে গত ২৪ ঘন্টায় চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮জন। তাদের মধ্যে জেলার সদর উপজেলারই ০৯ জন। এছাড়া নাসিরনগর উপজেলার দুইজন, কসবা উপজেলার চারজন, বাঞ্ছারামপুর, আশুগঞ্জ এবং নবীনগর উপজেলার একজন করে চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
 
 
চিকিৎসক সূত্রে প্রকাশ, ডেঙ্গু এডিস মশা বাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ। জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, বমি হওয়া, শরীরে লালচে দানা দেখা দেওয়া, শরীরের কোথাও রক্তক্ষরণ ইত্যাদি ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ। এসবের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা জরুরি। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর সেরে যাওয়ার পরবর্তী সময়টা খুবই ভয়ঙ্কর বলে চিকিৎসকরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। এসময় তীব্র পেট ব্যথা, বারংবার বমি, পাতলা পায়খানা অথবা শরীরের যেকোনো স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আবশ্যক। তাছাড়া জ্বর হলে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে তরল খাবার খাওয়া দরকার বলে চিকিৎসকদের অভিমত। তাছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে অফিস কিংবা বাসা-বাড়িতে রাখা ফুলের টব, চারপাশে পড়ে থাকা পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, চিপস্'র খালি প্যাকেট, পলিথিন, পরিত্যক্ত ফুড কন্টেইনার ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে ফেলে দেয়া কিংবা পরিস্কার করা একান্ত আবশ্যক।
 
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ্ জানান, 'দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাতেও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, তবে আশঙ্কাজনক নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত পরীক্ষার কীট তথা ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কীট  NS1 জেলা সদর হাসপাতালসহ জেলার সবক'টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যাপ্ত রয়েছে। আক্রান্ত যেমন হচ্ছে তেমনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়িও ফিরছেন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামলে রাখতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি চলমান আছে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম।