ঢাকা, রবিবার ১৯ মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে ঘূর্নিঝড় 'মোখা' মোকাবেলায় প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি

মু.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ,লক্ষ্মীপুর । | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৩ মে ২০২৩ ০৮:২৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

 
 
লক্ষ্মীপুরে ঘূর্নিঝড় 'মোখা' মোকাবেলায় প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ,তবে প্রশাসনের প্রস্তুতিতেও আগ্রহ নেই তীরবর্তী বাসিন্দাদের সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে। এদিকে লক্ষ্মীপুরে সকল নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এতে লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলাকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
 
লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় ১৮৫টি (আশ্রয়-কেন্দ্র) সাইক্লোন শেল্টার খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ।
 
 অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল রুটের মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাট থেকে সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
 
শুক্রবার (১২ মে) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটের ট্রাফিক সুপার ভাইজার শরীফুল ইসলাম ও ফেরীঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম রাজু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
 
মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটের ট্রাফিক সুপার ভাইজার শরীফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ রুটে ৫টি লঞ্চ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সবগুলো লঞ্চই ঘাটে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আমাদের ঘাটে, দুটি বরিশাল ও ১টি ভোলার ইলিশাঘাটে রয়েছে। ট্রলার, স্পিডবোটও বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
মজুচৌধুরীরহাট ফেরীঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম রাজু বলেন, আমাদের এ রুটে ৬ টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ২টি আমাদের ঘাটে রয়েছে। বাকিগুলো ইলিশাঘাটে রয়েছে। রাত ১০টার দিকেই ফেরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
 
 বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন লক্ষ্মীপুরের মেঘনার উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে নিজেদের গবাদিপশু রক্ষা নিয়ে চিন্তিত তারা।
 
 
যদিও শনিবার (১৩ মে) এ পর্যন্ত মেঘনার তীরবর্তী এলাকার আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মেঘনায় স্বাভাবিক নিয়মেই জোয়ার-ভাটা হচ্ছে।
 
 
মৎস্যজীবীরা শুক্রবার (১২ মে) রাত থেকেই মাছ ধরার ট্রলার বা নৌকা নিয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন।
এখন পর্যন্ত উপকূলীয় বাসিন্দাদের কাউকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়ে যেতে দৃশ্যত চোখে পড়েনি।
 
 
তবে মেঘনার বুকে জেগে উঠা চরে থাকা গৃহপালিত পশুগুলো নদীর তীরবর্তী স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসতে অনেককেই ট্রলারে করে দুর্গম চরের দিকে রওনা হতে দেখা গেছে।
 
মেঘনার তীরবর্তী মতিরহাট এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বির বিরির চরে তাদের মহিষ, গরু, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগে এসব পশুকে রক্ষা নিয়ে তারা চিন্তিত।
 
নির্দিষ্ট কোনো উঁচু টিলা বা আশ্রয়স্থল না থাকায় সেগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রাখবেন বলে জানান তারা। তবে গবাদি পশু ছেড়ে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহ তাদের।
 
তারা বলেন, চরের গবাদি পশুগুলো আমরা তীরে নিয়ে আসব। নিজেরাও বাড়িতে থাকব। চরে আমাদের প্রায় দুইশ মহিষ আছে। নদীতে ভাটা পড়লে মহিষগুলো তীরে নিয়ে আসব। উঁচু টিলা না থাকায় বাঁধের ওপর মাহিষগুলো রেখে দেব।
 
মতিরহাট এলাকার বাসিন্দা মো. ইস্রাফিল  বলেন, মেঘনা নদীর বির বিরির চরে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রায় তিন শতাধিক মহিষ, ৫ শতাধিক গরু, দুই-আড়াইশ ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। চরে অন্তত দুইশ লোকের বসবাস। তারা সেখানে গবাদি পশু পালনের পাশাপাশি কৃষি কাজ করে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত দেখা দিলে চরের বাসিন্দারা গবাদি পশু নিয়ে উপকূলে চলে আসে। কারো আবার যাবার ব্যবস্থা না থাকলে গবাদিপশু নিয়েই চরেই থেকে যায়। তবে জলোচ্ছ্বাস হলে অনেকের গবাদিপশু ভেসে যাবার শঙ্কা থাকে।
 
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে সর্তক করা হয়েছে বাসিন্দাদের।
 
জেলা প্রশাসক মোঃআনোয়ার হোছাইন আকন্দ  জানান, সাইক্লোন শেল্টারের পাশাপাশি ৬৪টি মেডিকেল টিম থাকবে। এছাড়া দূর্যোগকালীন ত্রাণ তহবিলে ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা ও ৪২০ মেট্টিক টন চাল রয়েছে। একটি জরুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও হেল্পলাইন নাম্বার চালু করা হবে।সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্যোগকালীন কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দূর্যোগ থেকে মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণী রক্ষায় ফায়ার সার্ভিস, জনপ্রতিনিধি ও রেড ক্রিসেন্টসহ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবে।
 
প্রসঙ্গত, মেঘনা নদী হয়ে মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চ ও ফেরিঘাট ভোলা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে