ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

শৈলকুপায় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ০১:১৭:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর
গ্রাম বাংলার নানা উৎসব-পার্বণে একসময় বিনোদনের খোরাক যোগাতো লাঠিখেলা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে খেলাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। এই খেলাকে ধরে রাখতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে শৈলকুপা পৌরসভার হাবিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দয়াল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত হওয়া এতে শৈলকুপা উপজেলাসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে ৮টি লাঠিয়াল দল খেলায় অংশ নেয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা দেখতে দুপুরের পর থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে নানা বয়সী মানুষ। হাবিবপুর স্কুল মাঠে ২০/২৫ জন লাঠিয়াল একত্রিত হন। সেখানে লাঠিয়ালদের গানের তালে তালে ঢাক, ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার শব্দে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খেলায় ঢাকের তালে তালে লাঠিয়ালরা প্রথমে শারীরিক কসরত ও অঙ্গভঙ্গি দেখান। বেশ কিছুক্ষণ চলে এই কসরত। এরপরই শুরু হয় মূল আকর্ষণ। দুইজন লাঠিয়াল শব্দের তালে তালে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন একে অন্যের ওপর। এ সময় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চলে প্রতিপক্ষকে হারানোর অদম্য চেষ্টা। এমন দৃশ্য দেখে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীরা।

পলাশ খন্দকার নামে এক দর্শক বলেন, অনেক ছোট থাকতে একবার লাঠিখেলা দেখেছিলাম। অনেক দিন পর আজকে দেখে খুবই ভালো লাগলো। আজকের বিকেলটা সত্যি অনেক সুন্দর কাটল আমার।
আরেক দর্শক সুজন বিপ্লব বলেন, ছোটবেলায় আমরা গ্রামে গ্রামে লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখতে পেতাম। কিন্তু এখন সেসব খেলা হারিয়ে গেছে। অনেকদিন পরে আজকে লাঠি খেলা দেখলাম। বেশ ভালো লাগছে।

সায়মা খাতুন নামের এক দর্শক বলেন, আমি ছোটবেলায় লাঠিখেলার কথা শুনেছিলাম। আজ প্রথম দেখলাম। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য যে কত সুন্দর না দেখলে বোঝানো যাবে না। লাঠিখেলা খুবই উপভোগ করছি। খুবই ভালো লাগছে।

বৃষ্টি সুলতানা নামে ৫ বছরের এক শিশু দর্শক জানায়, এই প্রথম লাঠিখেলা দেখলাম। খুব আনন্দ লাগছে। দাদির সঙ্গে এসেছি।

লাঠিয়াল সাত্তার সর্দার বলেন, আগে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গিয়ে লাঠি খেলতাম অনেক জমজমাট হতো। লাঠি খেলে আমরাও যেমন আনন্দ পেতাম গ্রামের মানুষও আনন্দ পেতো। কিন্তু আগের মতো এখন আর এই খেলার আয়োজন হয় না। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা বন্ধু, বড় ভাই, ছোট ভাইদের নিয়ে এই খেলাটি ধরে রাখতে খেলে থাকি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে আবারও এই খেলা আগের মতো চালু হবে।

খেলোয়ার শরিফুল সর্দার বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা এসব খেলা খেলতো। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা গিয়ে লাঠি খেলা খেলেছে। কিন্তু সময় বদলের সাথে সাথে লাঠিয়ালদের কদরও কমে গেছে। এখন খেলা খুব একটা হয় না। মাঝেমধ্যে ডাক পড়লে মনে আনন্দ নিয়েই এই খেলা খেলি। এ খেলা বাঁচিয়ে রাখতে হলে বেশি বেশি খেলার আয়োজন করা দরকার।

দয়াল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লাবাবুল বাসার বলেন, কালের বিবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে বিনোদনের উৎস গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। এসব খেলাধুলাকে আবারও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এমন আয়োজন। খেলা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি দর্শকরাও মুগ্ধ হয়েছে। আগামীতে এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখা হবে।

লাঠিখেলায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৮টি লাঠিয়াল দল অংশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে বাবু সর্দারের দল প্রথম, আতিয়ার সর্দারের দল দ্বিতীয় ও রফিকুল সর্দারের দল ৩য় স্থান অর্জন করে। বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন দয়াল ফাউন্ডেশনের সদস্য রফিকুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।