ঢাকা, শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সিলেট-থেকে করিমগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক-এ-এলাহী খাঁন

এমএ রহিম, সিলেট : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২১ অগাস্ট ২০২৩ ০৩:৪৫:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

২৬ মার্চ দিনগত রাত ২ টা ১০ মিনিট। দক্ষিণ সুরমার হবিনন্দিতে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের উপর দাঁড়িয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক-এ-এলাহী খাঁনসহ ৭-৮ জন সঙ্গি।

এসময় দেখতে পেলেন জকিগঞ্জমুখি একটি ট্রাক আসছে। কিন্তু ট্রাকটির প্রকৃতি আন্দাজ করতে পারছিলেন না। ওই অবস্থায় তাঁরা রাস্তার পাশের ঝোপে আশ্রয় নেন।

কাছাকাছি আসতে বুঝতে পারলেন ট্রাকটি খালি। দ্রæত রাস্তায় বেরিকেড দেন। বেরিকেডে আটকা পড়ে ট্রাক। চালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় ট্রাকটি নিয়ে কোথায় যাওয়া হবে। চালক জানিয়েছিলেন, শেওলা পর্যন্ত যাবেন।

মালিকের কাছে ট্রাক বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে। মাসুক এলাহী চাপচাপি করলেন তাঁদেরকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্যে। কিন্তু চালক রাজি হলেন না। শেওলা পর্যন্ত ট্রাকে করে মাসুক এলাহীসহ সঙ্গিরা যেতে পারবেন বলে জানালেন ট্রাক চালক। তাঁরা শেওলা পর্যন্ত গেলে ট্রাকে চেপে। ভাড়া দিলেন।

কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ভাড়া নিলেন না চালক। তখন রাত সাড়ে চারটা হবে। মাসুক এলাহী সঙ্গিদের সাথে নিয়ে কুশিয়ারা নদীর তীর ধরে জকিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন পায়ে হেঁটে। ২৭ মার্চ সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে মাসুক এলাহী এক সঙ্গিকে নিয়ে জকিগঞ্জ থানা সদরে পৌঁছেন। অন্য সঙ্গিদের বাড়ি ছিল পথিমধ্যে। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান।    


রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক-এ-এলাহী খাঁন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সিলেট থেকে জকিগঞ্জ রওয়ানা হওয়ার কথা তুলে ধরেন দৈনিক বায়ান্নের কাছে।


তিনি জানান, জকিগঞ্জে পৌঁছার পর ২-৩ ঘন্টা বিশ্রাম নেন। সকাল ১০ টার দিকে জকিগঞ্জ সদরে জড়ো হন মাসুক এলাহীসহ ফয়জুর রহমান মাস্টার বরম, খলিলুর রহমান চাষী উরফে দামান খলিল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম আলী হায়দার, আবিদুর রহমানসহ অনেকেই। তাঁরা সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে জকিগঞ্জের আবাসিক ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের সামনে যান। ওই কার্যালয়ের সামনে পাকিস্তানের পতাকা উড়ছিল। পাকিস্তানের পতাকা নামানো হয়। ওই পতাকা নিয়ে বাজারের চৌমহনায় আসেন তারা। সেখানকার তেরা মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে জ¦ালিয়ে দেয়া হয় পতাকাটি। ওই সময়ের ছাত্রনেতা বদর উদ্দিন চৌধুরীর বদইয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশের মানচিত্রওয়ালা পতাকা তৈরি করা হয়। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে চৌমহনায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়।


বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক-এ-এলাহী খাঁন জানান, বেলা আড়াইটার দিকে একদল হানাদার জকিগঞ্জে পৌঁছে। বাজারে অবস্থান নিয়ে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে হানাদার বাহিনী। হানাদারের গুলিতে প্রাণ হারায় এক কিশোর। বাজারের দোকানপাটসহ বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিতে থাকে হানাদার বাহিনী। বাজারসহ আশপাশ এলাকার মানুষজন নিরাপদ স্থানের দিকে ছুটতে থাকেন। জকিগঞ্জের বিপরীতে ভারতের করিমগঞ্জ। কুশিয়ারা নদী পারি দিলেই ওই করিমগঞ্জ। বেলা তিনটার দিকে নৌকায় পাড়ি দিয়ে করিমগঞ্জে পৌঁছেন মাসুক এলাহী। মামা আবদুস শুকুর লস্করের এলংজুরির বাড়িতে উঠেন তিনি। একইভাবে শতশত নারী পুরুষ নৌকায় কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে করিমগঞ্জে গিয়ে আশ্রয় নেন।