ঢাকা, শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
এ লজ্জা রাখবো কোথায়!

স্বাধীনতার সূর্য সন্তানরাই আজ নিজ ভূমে পরাধীন!

কামরুল হাসান, জামালপুর: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৩৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

কাজী নজরুল ইসলামের কথায়- ‘হেথা সবে সম পাপী, আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি।’ দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার ভিড়ে দুয়েকটা ঘটনার সাথে কাজী নজরুল ইসলামের সে কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তার একটি প্রকৃত উদাহরণ গত জুলাইয়ের শেষ দিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের কর্মচারী কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি। বর্তমানে ওই সমিতির অধীনে সরিষাবাড়ী ও তারাকান্দি দুইটি উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৯৯ হাজার ৬’শ ৩২ জন গ্রাহককে সেবা প্রদান করে আসছে। সে সময়কার মাত্রাতিরিক্ত তাপদাহের ফলে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে বিদ্যুৎ অফিস। এজন্য ঘন ঘন অসহনীয় লোড শেডিং এর কবলে পড়ছে গ্রাহকরা। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য উপজেলার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরিষাবাড়ী জোনাল অফিসের জরুরি ফোন নাম্বারে অন্তত: ২৫ বার ও ডিজিএমকে ১৫ বার ফোন করেন। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেন নি। পরে বিষয়টি জানানোর জন্য প্রথমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিরেক্টরকে পরবর্তীতে সরিষাবাড়ীর ইউএনওকে ফোন দিলেও কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নি মুক্তিযোদ্ধারা। অথচ পরে ইউএনও’র সাথে যোগাযোগ হয়। এক ফাঁকে সরিষাবাড়ী থানার ওসির সাথে কথা হয় তাঁদের। ঘটনার দিন গেল জুলাইয়ের শেষ সোমবার সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ লতীফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন মুসা ও বীর  মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলীসহ কয়েকজন সরিষাবাড়ী পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডিজিএম নূরুল হুদার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করতে যান। আলোচনার এক পর্যায়ে ডিজিএম আগন্তুক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন মুসা ক্ষেপে যান। তখন ডিজিএম নূরুল হুদা তার অফিসের কর্মচারী সোলায়মানকে ডেকে বলেন, ওরা সব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা। তাই তাদেরকে অফিস থেকে বের করে দিতে হুকুম দেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন মুসাকে লাঞ্ছিত করে ওই কর্মচারী। পরে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং নতুন করে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে অবস্থান করে। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমসহ সকলের প্রতি ঘৃণাসহ তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। পরে জেলা প্রশাসক ইমরান আহম্মেদ সরিষাবাড়ীর ইউএনও শারমিন আক্তারকে ও পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান সরিষাবাড়ীর তদানিন্তন ওসি মহব্বত কবীরকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়টি নিয়ে অতি সত্ত্বর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেন। দুপুরেই ইউএনও শারমিন আক্তার তার কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পাঠান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোফাজ্জল হোসেন, সরিষাবাড়ী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিষয়ক প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান লুলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ লতীফ ও ওসি মহব্বত কবীর প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনার এক ফাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ লতীফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মত যারা ‘মায়ে খ্যাদানো ও বাপে তাড়ানো’ তারাই জীবনকে তুচ্ছ করে দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধ করেছে। আর এ জন্যই অনেকে আজকের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নামের স্বাধীন দেশের বড় বড় কর্মকর্তা হতে পেরেছেন। তাই বলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এমন অন্যায় আচরণ মেনে নেব, এখনও এমন দুর্দিন আসেনি। পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান লুলু প্রস্তাব রাখেন, সরিষাবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের অধীনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে স্ব-স্ব উদ্যোগে এ উপজেলা থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যেতে হবে। সর্ব সম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিভিন্ন মহলের মন্তব্য- যাঁরা করলেন চক্ষুদান, তাঁরাই হলেন অপমান। সচেতন মহলের অভিমত- এখনও স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ বঞ্চিত সরিষাবাড়ীর মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীনতার সূর্য সন্তানরা আজ নিজ ভূমেই পরাধীন। এ লজ্জা রাখবো কোথায়!