ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কে হচ্ছেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী?

নিউজ ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২১ অক্টোবর ২০২২ ১২:৫০:০০ অপরাহ্ন | আন্তর্জাতিক

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। মাত্র মাস দেড়েক আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া এই নেতা বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) এই ঘোষণা দেন। এতে করে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পাটির পরবর্তী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নির্ধারণের জন্য এখন আরেকটি নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।

লিজ ট্রাসের স্থানে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনের এই প্রতিযোগিতা আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তার আগপর্যন্ত দায়িত্বপালন করবেন ট্রাস।

বিবিসি বলছে, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে কোনো প্রার্থীর সহকর্মী টোরি এমপিদের থেকে কমপক্ষে ১০০ জনের মনোনয়নের বা সমর্থনের প্রয়োজন হবে। সেই হিসাবে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন এই দলের মধ্যে নতুন নেতা হওয়ার দৌড়ে তিনজনের বেশি দাঁড়াতে পারবেন না।

কারণ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ৩৫৭ জন টোরি এমপি রয়েছে। তবে বাস্তবিকভাবে মাত্র দু’জনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; এমনকি সেটি একজনও হতে পারে। আর সেরকম হলে একক সেই প্রার্থী দলীয় সদস্যদের ভোট ছাড়াই নেতা হয়ে উঠবেন।

অবশ্য লিজ ট্রাস পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পাটির পরবর্তী নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় কে নামবেন তা এখন পর্যন্ত কেউ-ই নিশ্চিত করেনি। তবে এখানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম তুলে ধরা হলো।

ঋষি সুনাক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের পর ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রার্থী হয়েছিলেন এবং কনজারভেটিভ এমপিদের সর্বাধিক সমর্থন পেয়ে লিজ ট্রাসের পাশাপাশি চূড়ান্ত দু’জন প্রার্থীর একজন হিসাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

নেতৃত্ব বাছাইয়ের সেই প্রচারণার সময় সুনাক সতর্ক করেছিলেন যে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী লিজ ট্রাসের ট্যাক্স পরিকল্পনা অর্থনীতির ক্ষতি করবে। কিন্তু তার সেই বার্তা পার্টির সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে ব্যর্থ হয় এবং তিনি ২১ হাজার ভোটে হেরে যান।

ঋষি সুনাক রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ার নির্বাচনী এলাকা থেকে ২০১৫ সালে কেবল এমপি হয়েছিলেন। আর তাই ওয়েস্টমিনস্টারের বাইরে খুব কম লোকই তার কথা শুনেছিল, কিন্তু তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্রিটিশ রাজকোষের চ্যান্সেলর অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

তবে তার স্ত্রীর ট্যাক্স বিষয়ক বিতর্কের কারণে সুনাকের সুনাম নষ্ট হয় এবং তার কিছুদিন পরেই লকডাউনে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জরিমানার মুখোমুখি হন তিনি। কনজারভেটিভ এমপি অ্যাঞ্জেলা রিচার্ডসন ইতোমধ্যেই সুনাকের প্রতি তার সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পেনি মর্ডান্ট
বিবিসি বলছে, ব্রিটেনের পার্লামেন্টে একটি জরুরি প্রশ্নের সময় লিজ ট্রাসের পক্ষে দাঁড়িয়ে এই সপ্তাহের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন পেনি মর্ডান্ট। বরিসের পদত্যাগের পরও নেতৃত্ব নির্বাচনের সর্বশেষ প্রতিযোগিতায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং নিজের সহকর্মী এমপিদের কাছ থেকে জোরালো সমর্থনও অর্জন করেছিলেন।

কিন্তু শেষের দিকে সমর্থনের অভাবে সেসময় চূড়ান্ত দু’জন প্রার্থীর একজনে পরিণত হতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে লিজ ট্রাসকে সমর্থন করার পর তিনি হাউস অব কমন্সের নেত্রী এবং প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। এর ফলে তিনি নতুন রাজার অ্যাকসেসন কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেন।

এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন পেনি মর্ডান্ট। এখন পর্যন্ত এমপিদের মধ্যে জন ল্যামন্ট, মারিয়া মিলার, বব সিলি এবং ড্যামিয়ান কলিন্সের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন মর্ডান্ট।

বরিস জনসন
লিজ ট্রাস পদত্যাগ করার পর চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় প্রার্থী হিসেবে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন শামিল হবেন বলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদিও জনসন এখন পর্যন্ত নিজে থেকে এ সম্পর্কে কিছু বলেননি। তবে তার ঘনিষ্টজনরা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ও এমপিদের গণবিদ্রোহের পর গত জুলাই মাসে বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। ডাউনিং স্ট্রিটে করোনা মহামারির লকডাউনের মধ্যে পার্টি এবং অন্যান্য বিতর্ক নিয়ে কয়েক মাসের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস।

উক্সব্রিজ-এর এই সংসদ সদস্য প্রিভেলেজ কমিটির তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। এতে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে লকডাউন নিয়মগুলো অনুসরণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি কমন্সে আইনপ্রণেতাদের বাধা দিয়েছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকি পরবর্তীকালে কোভিড বিধি লঙ্ঘনের জন্য জনসনসহ অন্যদের জরিমানাও করা হয়েছিল।

যাইহোক, পার্লামেন্ট এবং সাধারণভাবে দলের সদস্যপদ উভয় ক্ষেত্রেই বরিস জনসনের এখনও মিত্র রয়েছে। বরিসের দীর্ঘদিনের সমর্থক নাদিন ডরিস যুক্তি দিয়েছেন, তার (বরিস জনসন) ফিরে আসা উচিত, কারণ ২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্রিটিশ জনগণের কাছ থেকে দেশ শাসনের ম্যান্ডেট পেয়েছেন তিনি।

এছাড়া অন্যান্য যেসব এমপি ইতোমধ্যে জনসনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ফিরে আসার পক্ষে এসেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন: পল ব্রিস্টো, ব্রেন্ডন ক্লার্ক-স্মিথ, আন্দ্রেয়া জেনকিন্স এবং মাইকেল ফ্যাব্রিক্যান্ট।

বেন ওয়ালেস
যদিও টোরি দলের অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির মধ্যে নতুন নেতা নিয়ে বিভক্তি রয়েছে, তারপরও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসকে ব্রিটিশ এমপিরা ব্যাপকভাবে নিরাপদ নেতৃত্ব বলেই মনে করে থাকেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে বেন ওয়ালেস ক্রমবর্ধমান ভাবে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। কারণ তার অধীনেই যুক্তরাজ্য কিয়েভকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ব্রেক্সিটের বিরোধিতা সত্ত্বেও বরিস জনসনের প্রধান একজন সমর্থক ছিলেন ওয়ালেস এবং এই কারণে ২০১৯ সালে মন্ত্রিসভায় আসন পেয়ে পুরস্কৃত হন তিনি।

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদ হওয়ার আগে জার্মানি, সাইপ্রাস, বেলিজ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে একজন সৈনিক হিসাবে কাজ করেছিলেন বেন ওয়ালেস। এসব জায়গায় ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা চালাতে আইআরএ-এর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেন তিনি।

গত জুলাইয়ে জনসন পদত্যাগ করার পর বেন ওয়ালেস নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এমন ইঙ্গিত থাকলেও এর পরিবর্তে তিনি লিজ ট্রাসকে সমর্থন করেন এবং ট্রাসের জয়ের পর মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন হলেও ওয়ালেসের পদ অক্ষুণ্ন ছিল।

কেমি ব্যাডেনোচ
ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির সাম্প্রতিকতম নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রার্থী ছিলেন কেমি ব্যাডেনোচ। বরিসের পদত্যাগের পর হওয়া সেই প্রতিযোগিতায় যদিও তিনি জিততে পারেননি তবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা তার প্রোফাইলকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত জুনিয়র মন্ত্রী হলেও সেসময় ব্যাডেনোচ সিনিয়র কনজারভেটিভ মাইকেল গভের সমর্থন পেয়েছিলেন এবং তথাকথিত ‘উইক’ সংস্কৃতির ওপর তার আক্রমণের মাধ্যমে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

কেমি ব্যাডেনোচ দক্ষিণ লন্ডনের উইম্বলডনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং নাইজেরিয়াতে বেড়ে ওঠেন। মূলত সেখানে তার মা মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করতেন। পার্লামেন্টে আসার আগে তিনি বেসরকারি ব্যাংক ‘কউটস’ এবং দ্য স্পেক্টেটর ম্যাগাজিনে কাজ করেছিলেন।

ব্যাডেনোচ ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারে এটিই তার সবচেয়ে বড় পদে দায়িত্বপালন।

সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান
সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গত বুধবার লিজ ট্রাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তিনি ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং এর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন লিজ ট্রাস।

যদিও ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে ব্র্যাভারম্যানের প্রস্থানের দৃশ্যত কারণ ছিল সরকারি নিয়মের ‘প্রযুক্তিগত লঙ্ঘন’। তবে তার ক্ষুব্ধ পদত্যাগপত্র অভিবাসন নিয়ে মতবিরোধের ইঙ্গিত দেয়। সুয়েলা সম্প্রতি ভারতীয়দের নিয়ে বলেন, ‘ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ভারতীয়দের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।’

পদত্যাগের পদ ব্র্যাভারম্যান বলেন, তিনি একজন সহকর্মীকে অফিসিয়াল নথি পাঠানোর জন্য তার ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার করার পরে পদত্যাগ করেছেন। এটিকে সরকারি নিয়মের ‘প্রযুক্তিগত লঙ্ঘন’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। ব্র্যাভারম্যান তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন: ‘আমি একটি ভুল করেছি; আমি দায় স্বীকার করছি; আমি পদত্যাগ করেছি।’

সুয়েলা লিজ ট্রাসের কাছে নিজের ভুলের কথা স্বীকারও করেছিলেন। তবে পদত্যাগের আগে সরকারের সঙ্গে নিজের মতবিরোধের কথাও বলেন তিনি। তার দাবি, নির্বাচনী ইস্তেহারে থাকা অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারছে না লিজ ট্রাসের সরকার।

ব্রেক্সিট সমর্থক সাবেক এই ব্যারিস্টার বরিস জনসনের সরকারে অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। বরিসের পদত্যাগের পর তিনি সর্বশেষ নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়িয়েছিলেন কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটেই বাদ পড়েন।

তার বাবা-মা কেনিয়া এবং মরিশাস থেকে ১৯৬০ এর দশকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন এবং উভয়েই স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ব্র্যাভারম্যানের মা ১৬ বছর কাউন্সিলর ছিলেন।

এছাড়া ব্র্যাভারম্যান ছিলেন ব্রিটেনের প্রথম ক্যাবিনেট মন্ত্রী যিনি মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন। মূলত মন্ত্রীরা বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতে পারেন; আইন পরিবর্তন করে এমন নিয়ম জারির পর তিনি সেই ছুটি নেন। এর আগে মাতৃত্বকালীন সময়ে মন্ত্রীদের তাদের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর রীতি ছিল।