‘নেইমারই ব্রাজিলের একমাত্র তারকা নয়’, ‘ব্রাজিলের তরুণ প্রজন্ম নেইমারের কাঁধের বোঝা নামিয়ে দেবে’... এতসব কথা ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শুরুর আগে শোনা গিয়েছে হরহামেশাই। যে দলে ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রাফিনিয়া, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, রিচার্লিসনদের মতো উঠতি তারকারা আছেন, সে দল নিয়ে এসব বলা মোটেও অত্যুক্তি নয়।
তবে সেসব কথার এবার প্রমাণ দেওয়ার সময় চলে এসেছে। আজ ব্রাজিল যখন নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে, তখন যে পাবে না নেইমারকে! গোড়ালির চোটের কারণে পিএসজি তারকাকে গ্রুপ পর্বে আর পাওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই পাঁচ বারের বিশ্বকাপজয়ীদের।
নেইমার না থাকায় তার জায়গায় খেলবেন কে, এ নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। তবে নেইমারের খেলার ধরনের কারণে তার বিকল্প খুঁজে পাওয়াটা দুষ্করই হবে কোচ তিতের জন্য। তিতে যেমন কাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নেইমার নিঃসন্দেহে এক্সটা অর্ডিনারি খেলোয়াড়। একটি ম্যাচে তিন-চারটি বিশেষ মুহূর্ত আসে। সেই মুহূর্ত তৈরি করার ক্ষেত্রে নেইমারের অবদান থাকে।’
তবে বাকিদের ওপরও সমানভাবেই আস্থা রাখছেন কোচ, ‘আমাদের সব খেলোয়াড়ই মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত। সবারই সমান সামর্থ্য আছে।’ কোচ তিতে অবশ্য যতই বলুন যে সবারই সমান সামর্থ্য আছে, নেইমারের সামর্থ্যটা যে ব্রাজিল দলের আর সবার চেয়ে বেশি তা কারোই অজানা নয়।
বলের দখল, দারুণ সব ড্রিবল, পাসে সুযোগ সৃষ্টি করা, দারুণ ফিনিশিং মিলিয়ে নেইমার ব্রাজিলের জন্য একটা ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’। গেল কোপা আমেরিকার কথাই ধরুন, প্রতি ম্যাচে সেবার নেইমারের প্রত্যাশিত গোলে অবদান ছিল ১.৭, যা সেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির প্রায় দুই গুণ! আর নেইমার এমন সব কাজ অবশ্য করে যাচ্ছেন শেষ দশ-বারো বছর ধরেই। এমন একজনের বিকল্প খুঁজে বের করাটা যে চাট্টিখানি কথা নয়!
তবে আমরা কথা বলছি ব্রাজিল নিয়ে, যে দলে খেলেছেন পেলে, গারিঞ্চা, জিকো-সক্রেটিস-ফ্যালকাও, রোনালদো-রিভালদো-রোমারিও, রোনালদিনিও-কাকাদের মতো তারকারা। এত জনের নাম নেওয়ার পরেও বাদ পড়ে যাওয়াদের তালিকা নেহায়েত কম নয়। ব্রাজিলে যে কখনোই প্রতিভার কমতি ছিল না, এখনো নেই!
ব্রাজিল দলে নেইমার খেলতেন বাম উইংয়ে। সেটা যদি এই বিশ্বকাপেও তার ভূমিকা হতো, তাহলে সরাসরি বেশ কয়েকটা বিকল্প হাতে ছিল কোচ তিতের।
তবে শেষ কিছু দিনে কোচ তাকে ব্যবহার করেছেন খানিকটা জটিল এক ভূমিকায়। নেইমারের বাম উইংয়ে পাঠিয়েছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। আর নেইমারকে নামিয়ে এনেছেন খানিকটা নিচে, পিএসজি তারকাকে এখন দেখা যায় প্রতিপক্ষ বক্সের সামনে ‘জোন ১৪’ অঞ্চল থেকে লেফট হাফ স্পেসের আশেপাশে। যেখানে নেইমার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেন, গোলে সহায়তা করতে পারেন, আবার করতে পারেন গোলও। উইঙ্গার থেকে ভূমিকাটা হয়ে গেছে তার ‘ইনসাইড প্লেমেকার’এর।
এমন একজনের বিকল্প খুঁজে পাওয়াটা তিতের জন্য একটু কঠিনই হয়ে পড়েছে, নেইমারের মতো সর্বগুণসম্পন্ন খেলোয়াড় যে পৃথিবীতেই বিরল! নেইমারের ফেলে যাওয়া একাদশের জায়গাটায় দেখা যেতে পারে রদ্রিগো গোয়েজকে। তবে রিয়াল মাদ্রিদে তাকে দেখা যায় বিপরীত পাশে, ডান উইংয়ে, ফলে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে তাকে দিয়ে এমন কিছু করানোর সিদ্ধান্ত না-ও নিতে পারেন তিতে।
লুকাস পাকেতাকে দেখা যেতে পারে এই ভূমিকায়, প্রতিপক্ষে জোন ১৪ অঞ্চল থেকে লেফট হাফ স্পেসে ইনসাইড প্লেমেকার হিসেবে। ক্লাব দল ওয়েস্ট হ্যামেও এই ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। পাকেতাকে তার আগের ভূমিকায় রেখে ব্রুনো গিমারেসকেও দেখা যেতে পারে নেইমারের জায়গায়। তবে নিউক্যাসল মিডফিল্ডার ক্লাবে যত ভালো পারফর্মই করুন না কেন, কোচ তিতের বিশ্বাসটা অর্জন করতে পারেননি বিশ্বকাপের আগের ‘অগুরুত্বপূর্ণ’ সব প্রীতি ম্যাচেও, সেই তিতে তাকে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে নেইমারের জায়গায় খেলিয়ে দেবেন, সেটা তাই দূর কল্পনাই হয়ে যায়।
তবে নেইমারের জায়গায় যাকেই খেলান না কেন, তার মতো পরিপূর্ণ প্যাকেজ হিসেবে পাবেন না কাউকেই। আর এই কারণেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলকে হাঁটতে দেখা যেতে পারে ভিন্ন রাস্তায়। ফরোয়ার্ড হোক বা মিডফিল্ডার, সবাইকেই নিতে হবে বাড়তি দায়িত্ব, যেটা নেইমার নিতেন, সবাইকেই এখন ভাগাভাগি করে নিতে হবে সেটা। তাতে সফল হলেই বর্তে যাবে ব্রাজিল, হেক্সা মিশনে এগিয়ে যাবে আরও একটু দূর।