ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফুটবল বিশ্বকাপের ১২টি কলঙ্কিত অধ্যায়

নিউজ ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৩ নভেম্বর ২০২২ ১০:২৫:০০ পূর্বাহ্ন | খেলাধুলা

পুরো বিশ্বকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে বিশ্বকাপ ফুটবল। এ এক অপার বিস্ময়।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন অনেক মুহুর্ত আছে, যা ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো। স্মৃতির মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে গোল, দুর্দান্ত সব সেভ, ড্রিবল, দল কিংবা দলের চাইতে বড় হওয়া ওঠা কোনও ফুটবলারের কীর্তি। মুদ্রার উল্টোপিঠে এমন অনেক কলঙ্কিত মুহূর্ত আছে যেগুলো ভুলে যেতে চাইবে বিশ্বের ফুটবলভক্তরা। আজ ফুটবলের তেমন ১২টি কলঙ্কিত অধ্যায়ের কথাই তুলে ধরা হচ্ছে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।

 

১. ১৯৮২ বিশ্বকাপে ফ্রান্স-কুয়েতের ম্যাচ- বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনার অন্যতম ১৯৮২ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফ্রান্স এবং কুয়েতের মধ্যকার ম্যাচ। ২১শে জুন ১৯৮২, প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুই দল। খেলার দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্স মিডফিল্ডার অ্যালান গ্রিসের এর গোলকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। কুয়েত খেলোয়াড়দের দাবি তারা বাঁশির আওয়াজ শুনে খেলা থামিয়ে দেয়। আর সেই সময় অ্যালান গ্রিসে গোলটি করেন। তারা গোল বাতিলের দাবি জানায় রেফারিকে। গ্যালারিতে বসে থাকা তৎকালীন কুয়েত ফুটবল ফেডারেশন এর প্রেসিডেন্ট শেখ ফাহাদ আল আহমাদ আল সাবাহ কুয়েতের খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে নিজেই গ্যালারি ছেড়ে মাঠে প্রবেশ করেন এবং রেফারির সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। রেফারি মিরোস্লাভ সুতুপার দীর্ঘসময় আলোচনার পর গোলটি বাতিল করেন। এ ঘটনার জন্য রেফারি মিরোস্লাভ সুতুপার আন্তর্জাতিক রেফারি সনদ হারান এবং শেখ ফাহাদ আল আহমাদ আল সাবাহকে মাত্র ১০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয়।

২. ২০০৬ বিশ্বকাপে ইতালি-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ (ফাবিও গ্রোসোর পেনাল্টি)- ২০০৬ সালে নিজেদের চতুর্থ বিশ্বকাপ জয় করেছিল ইতালি। তবে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিতে পারতেন তারা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পরেন ফাবিও গ্রোসো। তাকে ট্যাকেল করেন লুকাস নেইল। সেখানে পেনাল্টি দিয়ে বসেন ম্যাচ রেফারি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন ফ্রান্সেসকো টট্টি। ফলে ইতালির চতুর্থ শিরোপা জয়র পথ সুগম হয়ে যায়।

৩. ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্যাটেল অব নুরেমবার্গ (পর্তুগাল-নেদারল্যান্ডস)- বিশ্বকাপ ফুটবলের সবচেয়ে কলঙ্কিত ম্যাচের একটি ছিল ২০০৬ এ জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগালের মধ্যকার ম্যাচটি। রাউন্ড অফ সিক্সটিন-এ দু'দল মুখোমুখি হয়। ২৫ শে জুন ম্যাচটির দায়িত্বে ছিলেন রাশিয়ান রেফারি ভ্যালেন্টিন ইভানোভ। ম্যাচ শেষ হবার আগ পর্যন্ত রেফারিকে দুই দলের খেলোয়াড়দের মোট ১৬টি হলুদ কার্ড এবং ৪ বার লাল কার্ড দেখাতে হয়। নেদারল্যান্ডস এবং পর্তুগাল দু'দলেরই ফেয়ার প্লে'র জন্য সুনাম রয়েছে, কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের সবচেয়ে কলঙ্কিত ম্যাচের কালিমা এই দুই দেশই বহন করে চলছে। খেলা শেষে অবশ্য কেউ কেউ ম্যাচটাকে রাগবি ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ফিফার সেসময়ের প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার ম্যাচটি সম্পর্কে বলেন, ম্যাচে দুর্বল পারফরমেন্সের জন্য রাশিয়ান রেফারি ভ্যালেন্টিন'র উচিত ছিল নিজেকে নিজেই হলুদ কার্ড দেখানো।

৪. ১৯৮২ বিশ্বকাপে শুমাখারের আক্রমণ (ফ্রান্স-পশ্চিম জার্মানি)-  ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই ঐতিহাসিক শত্রু ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় ফরাসি ডিফেন্ডার প্যাট্রিক বল নিয়ে জার্মানির পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে আটকাতে এগিয়ে আসেন জার্মান গোলরক্ষক হ্যারল্ড শুখামার। প্যাট্রিক যখন বলে শট নিতে যাবেন, তখন শুখামার তাকে সজোরে আঘাত করেন। পাট্রিক অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান এবং তার ৩টি দাঁত ভেঙে যায়। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে পরবর্তীতে কোমায় চলে যান তিনি। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো রেফারি এই ঘটনায় কোনো ফাউলের নির্দেশই দেননি। ম্যাচটিতে পশ্চিম জার্মানি জয় পায় এবং ফাইনালে উঠে যায়।  

৫. ১৯৬২ বিশ্বকাপের ব্যাটল অব সান্তিয়াগো (চিলি-ইতালি)- বলা হয়ে থাকে বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে এটি সবচাইতে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ঘটেছিল সান্তিয়াগোতে ১৯৬২ বিশ্বকাপে স্বাগতিক চিলি ও ইতালির ম্যাচে। ম্যাচটিতে সংঘর্ষের ঘটনা এত বেশি ছিল যে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের খেতাব লাভ করে। তবে সূত্রপাত মাঠের ভেতরে নয়, বাইরে। দুই ইতালিয়ান সাংবাদিক তাদের সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন যে, ‘চিলিকে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে দেওয়াটা পাগলামি ছাড়া কিছুই না। ’ এমন খবর দেখে চিলির জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ক্ষোভ এতটাই চরমে পৌঁছে যে, ইতালির সাংবাদিক ভেবে আর্জেন্টিনার এক সাংবাদিককে তারা পিটিয়ে আহত করে। ঘটনা ইতালিয়ান শিবিরে পৌঁছালে খেলা শুরুর ১২ সেকেন্ডের মধ্যেই ইতালির জর্জিও ফেরেনি ফাউল করেন। ১২ মিনিটে ফেরেনি আবার ফাউল করলে রেফারি অ্যাস্টন তাকে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু তিনি রেফারিকে পাত্তা না দিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে পুলিশ ঢুকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়। সমস্যার শেষ এখানে হলেই পারতো। হয়নি, বরং ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে আরও কুৎসিত আকার ধারণ করে খেলাটি। চলেছে শেষ পর্যন্ত। কী না হয়েছে? লাথি, কিল, ঘুষি, যাচ্ছেতাই রকমের ফাউল, রেফারিকে হুমকি। শেষ পর্যন্ত চিলি ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতলেও তাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে ম্যাচ শেষে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

৬. ১৯৮২ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ- ১৯৮২ বিশ্বকাপে মাঠের খেলায় বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয় আলজেরিয়া। গ্রুপ পর্বের খেলায় দলটির প্রতিপক্ষ ছিল পশ্চিম জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া। গ্রুপ পর্বের একেবারে শেষ ম্যাচটি ছিল পশ্চিম জার্মানি এবং অস্ট্রিয়ার মধ্যকার। কিন্তু গ্রুপের সবার হাড্ডাহাড্ডি পারফরম্যান্সের ফলে ৩ দলের সমীকরণই জটিল হয়ে উঠে। সমীকরণটি এমন- অস্ট্রিয়া যদি জার্মানির বিপক্ষে ড্র করে বা জয় পায় তাহলে পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে যাবে। আর জার্মানি যদি ৩ বা তার বেশি গোলের ব্যবধানে জিতে যায় তাহলে অস্ট্রিয়া বাদ। কিন্তু যদি জার্মানি ১ বা ২ গোলের ব্যবধানে জিতে, তাহলে আলজেরিয়া বাদ পড়ে যাবে। মজার ব্যাপার হলো, ম্যাচের ১০ মিনিটেই জার্মানি ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় দু’দলের এলোমেলো বল ছোঁড়ার প্রতিযোগিতা। জার্মানি এগিয়ে যাওয়ার পর দু’দলই পুরো ম্যাচজুড়ে এদিক-সেদিক বল ছোঁড়াছুড়ি করতে থাকে। কোনো দলের মধ্যেই গোল করার প্রবণতা দেখা যায়নি। যেটা ছিল আলজেরিয়ার বিপক্ষে এক প্রকারের ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেবার বিশ্বকাপ থেকে আলজেরিয়া বাদ পড়ে যায়।

৭. ২০০২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি রেফারির পক্ষপাতিত্ব- ২০০২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনে জাপানের সঙ্গে সহ-আয়োজক ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় ইতালির মুখোমুখি হয় স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া। সেই ম্যাচে ইকুয়েডরের রেফারি বায়রন মরেনো বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনা ঘটান। সামান্য ড্রাইভ দেওয়ার অপরাধে ইতালির ফ্রান্সিসকো টট্টিকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন। অথচ পরে রিপ্লেতে দেখা যায় টট্টিকেই ফাউল করা হয়েছিল। এখানেই থামেননি মরেনো। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় ইতালির ১টি গোল অফসাইড বলে বাতিল করে দেন তিনি। যদিও সেটি অফসাইড ছিল না। তার  এমন বিতর্কিত একাধিক সিদ্ধান্তের কারণেই ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছিল দক্ষিণ কোরিয়া।  

৮. ১৯৮৬ বিশ্বকাপ: ম্যারাডোনার হ্যান্ড অব গড- দিয়েগো ম্যারাডোনা ফুটবলের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। সাফল্যের পাশাপাশি বিতর্কও ম্যারাডোনার পিছু ছাড়েনি। মাদকাসক্তি এবং নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্ক ছিল ম্যারাডোনার নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু ম্যারাডোনার ফুটবল দক্ষতা নিয়ে কারো প্রশ্ন তোলার অবকাশ ছিল না। সেই ম্যারাডোনাই জন্ম দেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিতর্কের। ম্যারাডোনার একটি গোল যা ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে পরিচিত। মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা এবং ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধ গোল শূন্য ড্র এর পর দ্বিতীয়ার্ধের ছয় মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের ডি-বক্সের ভেতর উড়ে আসা বলকে হেড দিতে লাফিয়ে উঠেন ম্যারাডোনা এবং ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিটার শিল্টন। আশ্চর্যজনকভাবে পিটার শিল্টনের থেকে ৮ ইঞ্চি খাটো ম্যারাডোনা লাফিয়ে হেড দিয়ে গোল করেন। যদিও স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিল ম্যারাডোনা হাত দিয়ে বল জালে পাঠাচ্ছেন, কিন্তু রেফারি কিংবা লাইন্সম্যান দেখতে ব্যর্থ হন। ম্যারাডোনার এই গোলটি বিশ্বকাপ ফুটবলের অন্যতম বিতর্কিত গোল হিসাবে টিকে আছে।

৯. ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়- বিতর্ক এবং আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ একই সূত্রে গাঁথা। বিশ্বকাপের দু বছর আগে সামরিক ক্যু এর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল বিশ্বকাপ আয়োজনে সংশয় দেখা দেয়। প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার প্রতিটি খেলা রাতে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে প্রথম বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সব বিতর্ককে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনা বনাম পেরুর ম্যাচে। ফাইনালে যাওয়ার জন্য আর্জেন্টিনার ৪-০ গোলে জিততে হতো, নয়তো ব্রাজিল ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। আর্জেন্টিনা ঐ ম্যাচে ৬-০ গোলে জিতে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা লাভ করে। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে আরো ৪টি গোল করে। দ্বিতীয়ার্ধে পেরুর খেলোয়াড়দের 'বডি ল্যাংগুয়েজ' অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। ঐ ম্যাচটি নিয়ে পরবর্তীতে অনেক গল্প কথা চালু হয়। কারো কারো মতে তৎকালীন সামরিক জান্তার হুমকির মুখে পেরুর খেলোয়াড়রা ম্যাচটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিশাল ব্যবধানে হেরে যায়। আবার কারো মতে আর্জেন্টিনা থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সুবিধার বিনিময়ে পেরু ম্যাচটিতে হার মানে। যদিও এ ধরনের অভিযোগের কোনও তথ্যপ্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি। তারপরও বিশ্বকাপের বিতর্কিত ম্যাচের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এই ম্যাচটি। এছাড়াও ঐ আসরে আরও কিছু বিতর্কিত ম্যাচে আছে। যেটা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

১০. ২০০৬ বিশ্বকাপে এক খেলোয়াড়কে তিন হলুদ কার্ড- ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ম্যাচে বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দেন ওই ম্যাচের রেফারি গ্রাহাম পুল। ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড় ইয়োসিপ সিমুনিককে তিনি পরপর ২ বার কার্ড দেখালেও লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরে পাঠাননি। কারণ তিনি প্রথমবার সিমুনিকে যে হলুদ কার্ডটি দেখিয়েছিলেন, সেটা ভুলক্রমে ১ জন অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়ের নামে লিপিবদ্ধ করেন। ম্যাচে রেফারির মতের বিরোধিতার কারণে সিমুনিক তৃতীয়বারের মতো রেফারি গ্রাহাম পুল হলুদ কার্ড দিয়ে মাঠ ছাড়া করেন। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র হয়। এমন অপরিনামদর্শী কাণ্ডের পরে গ্রাহাম পুলকে আর কোনো বিশ্বকাপেই ম্যাচ পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি।

১১. ২০০৬ বিশ্বকাপে জিনেদিন জিদানের ঢুস- জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ ফ্রান্স এবং জিনেদিন জিদান ভক্তদের জন্য এক মর্মপীড়াদায়ক ম্যাচ। ১৯৯৮ এর ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জিনেদিন জিদান একাই দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। খেলার প্রথমার্ধে ৭ মিনিটেই প্যানাল্টি থেকে গোল করেন জিদান। ১২ মিনিটের ব্যবধানে মার্কো মাতারেজ্জির গোলে সমতায় ফেরে ইতালি। নির্ধারিত ৯০ মিনিট আর কোনও গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় বাড়তি সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে জিদানের একটি হেড ইতালির গোলরক্ষক বুফনের হাতে লেগে ক্রসবারে আঘাত হানে। দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ১০৭ মিনিটে জিদানেরর সেই বিখ্যাত হেড অবাক করে বিশ্ববাসীকে। এবারের হেডটি বলে নয় সরাসরি মারলেন ইতালির মাতারেজ্জির বুকে। সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান ফ্রান্সের আশার প্রদীপ জিদান। প্যানাল্টি শুট আউটে ৫-৩ গোলে ইতালির কাছে হেরে যায় ফ্রান্স। মুহূর্তেই হিরো থেকে ভিলেনে পরিণত হন তিনি।

১২. জিওফ হার্স্টের হ্যাটট্রিকে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়- ৩০ জুলাই, ১৯৬৬। প্রায় ৯৭ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে গমগম করছে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। ফাইনালে মুখোমুখি স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও পশ্চিম জার্মানি। ম্যাচের শুরুতেই হলারের গোলে এগিয়ে যায় পশ্চিম জার্মানি। একটু পরেই সমতা ফেরান হার্স্ট। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ সমতায়। দ্বিতীয়ার্ধে মার্টিন পিটার্সের গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৮৯তম মিনিটে গোল শোধ করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যান ওয়েবার। সেখানে আর পেরে ওঠেনি পশ্চিম জার্মানি। ১০১তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন হার্স্ট, ১২০তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। ৪-২ গোলে জিতে বিশ্বকাপে নিজেদের একমাত্র শিরোপা জেতে ইংল্যান্ড। হার্স্ট ছাড়া এখনও পর্যন্ত ফাইনালে হ্যাটট্রিক করতে পারেননি আর কোনো খেলোয়াড়। সেই ফাইনালে হার্স্টের দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে বিতর্ক আছে। হার্স্টের শট ক্রসবারে লেগে নিচে পড়ে বেরিয়ে এসেছিল। জার্মানির দাবি ছিল, বল গোললাইন পেরিয়ে যায়নি। কিন্তু সহকারীর সঙ্গে আলোচনা করে রেফারি গোলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ২০১০ সালে জার্মানি-ইংল্যান্ড ম্যাচেও এমন একটি ঘটনা ঘটে। তবে সেটি যায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।