বাংলাদেশে ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশের ব্যাপারে মানুষের মনোভাব নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ ফলাফল। জরিপটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত হয় এবং এতে দেশটির জনগণের ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে পছন্দ ও অপছন্দের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৫৩.৬ শতাংশ বাংলাদেশি ভারতকে পছন্দ করেন, অন্যদিকে ৪১.৩ শতাংশ ভারতকে অপছন্দ করেন। পাকিস্তানের প্রতি পছন্দের হার তুলনামূলকভাবে বেশি, যা ৫৯ শতাংশ। তবে পাকিস্তানকে অপছন্দ করেন ২৮.৫ শতাংশ উত্তরদাতা।
ভারত-বিরোধী মনোভাবের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা। শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা এবং সম্প্রতি তার পতনের পর ভারত-বিরোধী মনোভাব বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার এই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিলেও, রাজনৈতিকভাবে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান এবং তার বক্তব্য বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
জরিপে ধর্মীয় বিভাজন স্পষ্ট। মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৪.২ শতাংশ ভারতকে অপছন্দ করেন, যেখানে অমুসলিমদের মধ্যে এই হার মাত্র ৪.২ শতাংশ। অমুসলিমদের ৯০.১ শতাংশ ভারতকে পছন্দ করেন, যা মুসলিমদের মধ্যে ৫০.৭ শতাংশ।
বয়সের ক্ষেত্রে তরুণদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি বেশি পছন্দ লক্ষ করা গেছে। ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের ৬২.১ শতাংশ পাকিস্তানকে পছন্দ করেন, যেখানে ৪৭.৮ শতাংশ ভারতকে পছন্দ করেন। তবে, ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভারতকে পছন্দ করার হার পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
পুরুষদের মধ্যে পাকিস্তানকে পছন্দ করার প্রবণতা বেশি (৬৪.৪ শতাংশ), যেখানে নারীদের মধ্যে ভারতকে পছন্দ করার হার তুলনামূলকভাবে বেশি (৫৫.৩ শতাংশ)।
বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপছন্দের দেশ মিয়ানমার। ৫৯.১ শতাংশ মানুষ মিয়ানমারকে অপছন্দ করেন, যা রোহিঙ্গা সংকটের সরাসরি প্রভাব বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জরিপে দেখা গেছে, ভারতের প্রতি বৈরী মনোভাব দীর্ঘমেয়াদে তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিজেপির ‘বাংলাদেশ কার্ড’ এবং বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগগুলো এই মনোভাবকে তীব্র করেছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান নিয়ে একটি নিরপেক্ষ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা গেছে, যা ঐতিহাসিক বাস্তবতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভাবের কারণে হতে পারে।
ড. ইউনূস ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নত করার আহ্বান জানালেও, ভারতকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিক সম্পর্কের গণ্ডি থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশের জনগণের ভারত এবং পাকিস্তানকে নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি তাদের রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতার প্রভাব বহন করে। তবে ভবিষ্যতে কূটনৈতিক নীতিগুলোর ভারসাম্য বজায় রেখে এই সম্পর্কগুলোকে আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।