ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাখাইনে বেশিরভাগ মানুষের প্রাণ গেছে জলোচ্ছ্বাসে

নিউজ ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৮ মে ২০২৩ ১২:০০:০০ অপরাহ্ন | আন্তর্জাতিক

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গত ১৪ মে প্রবল শক্তি নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়া এ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়েছিলেন বলে বুধবার (১৭ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, হতাহতের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষ। রাখাইনের রাজধানী সিট্যুয়ের কাছে শরণার্থী ক্যাম্পে ছিলেন তারা। এসব ক্যাম্পে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ছিলেন। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সময়ও তাদের নিজ মাতৃভূমিতে বন্দি দশার ভেতর রাখা হয়েছিল। একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, যদি তাদের সেখান থেকে বের হতে দেওয়া হতো তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি হতো না।

স্থানীয় সাংবাদিক, ক্যাম্প প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমার জান্তা রোহিঙ্গাদের সরাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের আগে লাউড স্পিকারে যেসব সতকর্তা বার্তা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ছিল বার্মিজ ভাষায়। যা রোহিঙ্গারা বোঝেন না। ফলে তারা সতর্কতা বার্তা থেকেও কিছু জানতে পারেনি।  

এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সতর্ক থাকার বিষয়টিও পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে অনেকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে সরে যাননি।

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার দুইদিন পর মিয়ানমার নাউয়ের সাংবাদিকরা রাখাইনের বে দার এবং বাসারে গ্রামে যান। তারা সেখানে গিয়ে জানতে পারেন নিহতদের বেশিরভাগই জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন। তীব্র বাতাসের কারণে জলোচ্ছ্বাসের পানিতেও বিশালাকার ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছিল।

বাসারে গ্রামের প্রশাসক রশিদ জানিয়েছেন, শুধুমাত্র তার গ্রামে ছয়জন নারী, দুজন শিশু ও দুজন পুরুষ নিহত হয়েছেন।

রশিদ আরও জানিয়েছেন, যখন জলোচ্ছ্বাসের পানি হাঁটু সমান হয়ে যায়, তখন সাধারণ মানুষ সিট্যুয়ে বিমানবন্দরে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই সময় অনেক দেরি হয়ে যায়। তখন আর তারা পালাতে পারেননি।

তিনি বলেছেন, ‘যখন ঝোড়ো বাতাস শুরু হয় অনেকে পানিতে পড়ে যান। পানি তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।’

পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন ২৫ বছর বয়সী নারী জুবি এবং তার চার সন্তান। তারা পানির হাত থেকে বাঁচতে অন্যদিকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু একটা সময় সবাই ভেসে যান।

জুবির ভাই কাউ হলা সিন বলেছেন, ‘আমার বোন তার চার সন্তানকে ধরে রেখেছিল, এরপর সে পানিতে পড়ে যায়। আমি তাকে আর তুলতে পারিনি।’

এই ঘূর্ণিঝড়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, চার বছরের সন্তানসহ পরিবারের আরও দুই সদস্যকে হারিয়েছেন বে দার গ্রামের মোং সিন। তার আপনজনেরাও মারা গেছেন জলোচ্ছ্বাস ও তীব্র ঢেউয়ে। সেই ভয়াবহ মুহূর্তের ঘটনা বর্ণনা করে মোং সিন বলেছেন, ‘আমি এর আগে কখনো এমন কিছু দেখিনি। আমি ভাবতেও পারিনি এটি এত শক্তিশালী হবে। বাতাসের সঙ্গে বড় বড় ঢেউ এসেছে। ঢেউ শুধু বড় থেকে বড় হয়েছে। যা আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।’

পরিবারের অন্য সদস্যদের খুঁজে পেলেও এখনো নিজের চার বছর বয়সী সন্তানকে পাননি তিনি।

বাকিরা প্রাণ হারালেও তিনি কেন বেঁচে আছেন এমন প্রশ্ন রেখে আক্ষেপ করে এই যুবক বলেছেন, ‘শুধুমাত্র আল্লাহই জানে কেন আমি বেঁচে রইলাম।’

সূত্র: মিয়ানমার নাউ