ভারত সীমান্ত সংলগ্ন সমস্ত ট্রাক টার্মিনালের দায়িত্ব নিচ্ছে রাজ্য সরকার। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ট্রাক টার্মিনাল নিয়ে নেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ দফতর। সীমান্তে ট্রাক টার্মিনালগুলি থেকে রাজ্য সরকারের কোষাগারে যে রাজস্ব আসার কথা তা আসছে না।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) নেতাজি ইন্ডোরের প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাস খানেক আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন ট্রাক টার্মিনাল গুলো পরিদর্শন করেন বিভিন্ন জেলার প্রশাসকসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। তাদের রিপোর্টের পর পরই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ভরতের পেট্রাপোল, হিলি, চ্যাংড়াবান্দা, ঘোজাডাঙ্গাসহ যেসব সীমান্ত রয়েছে, সেখানকার বিষয়টি দেখার জন্য পরিবহন দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওখান থেকে সরকারের যে রোজগার হওয়া উচিত সেটা হয় না। কিছু লোক এবং কিছু আধিকারিকদের জন্য এই রোজগার সরকার পাচ্ছে না। ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমস্ত পুরসভা যেন এনওসি দিয়ে দেয়। পার্কিং লট তৈরি করার জন্য জমি প্রয়োজন। সেই জমির এনওসি দিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। গোটা বিষয়টি পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দেখার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে নিতে বলেন, বন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও।
মমতা এদিন বোঝাতে চান, সরকার জনকল্যাণে প্রচুর স্কিম নিয়েছে। সরকারের রাজস্ব আদায় না হলে সেগুলি চলবে কী করে। তার স্পষ্ট নির্দেশ, প্রশাসন একটু শক্ত হলেই, সীমান্তবর্তী জেলা থেকে টাকা আসবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরের বিপরীতে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক টার্মিনাল সৃস্টি করে একটি সিন্ডিকেট বাংলাদেশে রফতানিমূখী পণ্যবাহী ট্রাক থেকে হাজার হাজার টাকা আদায় করছে। যা দিতে হয় বাংলাদেশী আমদানিকারকদের। কোন কোন স্থানে এক একটি ট্রাক এক মাসেরও বেশি সময় আটকে রাখা হয়। এর ফলে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আসতে রফতানি শিপমেন্ট তারিখ পার হয়ে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ট্রাক টার্মিনালে দালালচক্র চলছে। প্রাইভেটের নাম করে ‘করে খাওয়া’ হচ্ছে। সীমান্তে ট্রাক টার্মিনালে টাকার নয়ছয় হচ্ছে। ট্রাক টার্মিনালে কেউ কেউ টাকা তুলছেন, এতে ব্যক্তির পকেট ভরলেও সরকারের কোষাগারের কোনও সুবিধা হচ্ছে না। এসব আর চলবে না।” সীমান্ত এলাকায় লরি দাঁড় করিয়ে তোলাবাজি চলছে। টাকা দিতে না পারলে লরিচালককে হেনস্তা করা হয় বলেও অভিযোগ আছে।
মুখ্যসচিব জানান, এ বিষয়ে সাতটি জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকরা ছিলেন। যোগ দেন মন্ত্রীরাও। বনগাঁ পুরসভার দু’টি এবং তিন-চারটি বেসরকারি ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে। মুখ্যসচিবের দাবি, বনগাঁ পুরসভা একটি এনওসি দিয়েছে। তবে সেটিতে কিছু ভুল ক্রটি রয়েছে।
মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্রাচার্যের দাবি, বনগাঁ পুরসভা থেকে যেটি দেওয়া হয়েছে, সেটি কোনও এনওসি-ই নয়। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “কোনও পুরসভা এনওসি না দিলে বা ভুল থাকলে ডায়রেক্ট করে দেবে।” আগামী তিন দিনের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ মূখ্যমন্ত্রীর।
ওপারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিরিয়ালের নামে বনগাঁর এর অধীনে বন্দরের ভারতীয় অংশে পার্কিং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেনাপোল বন্দরগামী পণ্যবাহী ট্রাক ৩০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকগুলি পেট্রাপোলে প্রবেশের ৩০ থেকে ৩৫ দিন আগে জোর করে বনগাঁ পৌরসভার নামে তৈরি করা পার্কিংয়ে রাখা হয়, যার ফলে আমদানিকারকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। পার্কিংয়ে যে কয়দিন পণ্যবাহী ট্রাক থাকবে সে কয়দিনের টাকা ভারতের রফতানিকারকরা বাংলাদেশী আমদানিকারকদের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে। পার্কিং এ থাকার জন্য বনগাঁ পৌরসভাকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিতে হয় ট্রাক মালিকদের। ওখান থেকে প্রতিদিন নিজেদের ইচ্ছেমত কবে কোন ট্রাক বাংলাদেশে যাবে তা তারাই নির্ধারণ করে দেয়ালে কাগজ সেটে দেন।
সেখান থেকে সিরিয়াল দিয়ে প্রবেশের দিন থেকে একমাস পর ছাড়া পেয়ে আসতে হয় পেট্রাপোল সেন্টাল পার্কিংএ। অথচ সেন্ট্রাল পার্কিংএ ২ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক রাখার জায়গা থাকলেও সেন্ট্রাল পার্কিং থেকে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকের চাহিদা পাঠায় বনগা পার্কিংএ। এর ফলে দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে আমদানিকৃত পণ্যগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তদুপরি, শিল্পের কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় পৌঁছাতে না পারায় শিল্প কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।