রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাত আর সমাজে জেঁকে বসা অন্যায় ও দুর্নীতির মূলোৎপাটনের ঘোষণা দিয়ে রীতিমতো বিদ্রোহে নেমেছে দেশটির ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার। শনিবার বিদ্রোহের ঘোষণা দেওয়ার পর এই বাহিনীর সৈন্যরা ইতোমধ্যে রাশিয়ার তিনটি শহরে ঢুকে পড়েছে। দিনভর এগিয়ে চলার পর শনিবার রাশিয়ার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ওয়াগনারের সৈন্যরা উত্তরে মস্কোর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার বিকেলের দিকে মস্কোর দক্ষিণে লিপেটস্ক অঞ্চলের গভর্নর ওয়াগনারের সৈন্যরা এই অঞ্চলটি অতিক্রম করছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে ওয়াগনারের একটি সামরিক বহরকে লিপেটস্ক অঞ্চলের ভেতর দিয়ে মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে দেখা গেছে।
রুশ কর্তৃপক্ষ গুরুতর উদ্বেগের মধ্যে আছে বলে মনে হচ্ছে; কারণ ওয়াগনার সৈন্যরা শিগগিরই মস্কোতে পৌঁছাবে। সন্ধ্যার দিকে টেলিগ্রামে এই সৈন্যদের মস্কোমুখী বহরের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে বলেছে, ভিডিওতে দেখা গেছে, মস্কোর উপকণ্ঠ থেকে মাত্র ৯৭ কিলোমিটার (৬০ মাইল) দূরের একটি সেতু লরি দিয়ে অবরোধ করা হয়েছে।
মস্কোর মেয়র ‘সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান’ শুরু করার ঘোষণাও দিয়েছেন। তার এই ঘোষণার পর মস্কোজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিবিসি বলছে, মস্কোর মেয়র রাজধানীর চারপাশে লোকজনের চলাচল সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহীরা শহরের দিকে আসছে বলে মনে হচ্ছে
এর আগে, সকালের দিকেও মস্কোর বিভিন্ন সড়কে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও যানবাহনে তল্লাশির মাঝেও মানুষের জীবন স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। কিন্তু সন্ধ্যা হতে হতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ায় মস্কো এখন কিছুটা ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে।
শহরের চারপাশের কিছু সেতু একেবারে বন্ধ করা হয়েছে।
ক্স মস্কোতে কী ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন সন্ধ্যার দিকে ঘোষণা দিয়েছেন, সোমবার শহরে ছুটি থাকবে। শহরের চারপাশে জনগণকে চলাচল সীমিত করতে বলেছেন তিনি। ওয়াগনার বিদ্রোহের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে, রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ মস্কো শহর, মস্কো অঞ্চল এবং দক্ষিণের ভোরোনেজ অঞ্চলে ‘সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান’ শুরুর ঘোষণা দেয়।
এই ঘোষণার ফলে মস্কোর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ কিছু ক্ষমতা পেয়েছে :
ক্স জনসাধারণ ও যানবাহনের চলাচল সীমিত করা হয়েছে
ক্স নাগরিকদের যোগাযোগের ওপর নজরদারি ও কড়াকড়ি আরোপ
ক্স শহরে চলাচলকারী লোকজন ও যানবাহনে তল্লাশি
ক্স প্রয়োজনে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া
টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, পরিস্থিতি কঠিন। ঝুঁকি কমাতে শহরের চারপাশে যতটা সম্ভব ভ্রমণ করা থেকে বাসিন্দাদের বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শহরের নিরাপত্তা পরিষেবা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
শহরের কিছু রাস্তা বা আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।