ব্যাটারিচালিত রিকশার বৈধতা ও লাইসেন্স নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিতর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনটি দাবি করেছে, নীতিমালা চূড়ান্ত করে দ্রুত লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদানের ব্যবস্থা না করলে সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
গত সপ্তাহে হাইকোর্ট থেকে এক আদেশে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা তিন দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এটি প্যাডেলচালিত রিকশা সংগঠনের রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ থেকে আসে। কিন্তু এর আগেও ২০২২ সালের এপ্রিলে সুপ্রিমকোর্ট একটি রায়ে মহাসড়ক ছাড়া অন্য সব সড়কে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহনের বৈধতা দিয়েছিল।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সমাবেশে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের নির্দেশ সুপ্রিমকোর্টের পূর্ববর্তী রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, "আপিল বিভাগের রায় বহাল থাকা অবস্থায় হাইকোর্ট কিভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে রায় দেয়? এটি এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়।"
তিনি আরও বলেন, "নীতিমালা চূড়ান্ত করার কথা জানানো হলেও এখনও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটছে না। আমরা লাইসেন্স, রুট পারমিট এবং পৃথক লেন দাবি করছি। এ দাবি বাস্তবায়ন হলে ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন থেকে বিপুল রাজস্ব আদায় সম্ভব।"
হাইকোর্টের আদেশের পরদিন থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। দয়াগঞ্জ, মহাখালী, মিরপুর, রামপুরা, এবং মালিবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন চালকরা। শুক্রবার জুরাইনে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন কয়েকজন।
সংগঠনটি অভিযোগ করে, "বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন গ্যারেজে হামলা হয়েছে। চালকদের ওপর হামলার পেছনে কারা রয়েছে, তা তদন্ত হওয়া উচিত।"
খালেকুজ্জামান লিপন ঘোষণা দেন, "সাত দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে আগামী ৩০ নভেম্বর ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলায় সমাবেশ করা হবে।" তিনি আরও জানান, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা আহত-নিহতদের পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল জানান, "হাইকোর্টের রায়ের বিপরীতে রিভিউ করা একমাত্র পথ।" তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান সড়ক বাদ দিয়ে বিকল্প লেনে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর সুযোগ দেওয়া হোক।"
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, "যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে মানুষের নিজের তৈরি উপায় বন্ধ করার অধিকার কারও নেই।"
রিকশা শ্রমিক নেতা আফজাল হোসেন বলেন, "কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে আমরা রিকশা চালানো বন্ধ করব। কিন্তু কর্মসংস্থান ছাড়া রিকশা বন্ধ করা অমানবিক।"
বক্তারা সরকারের কাছে ব্যাটারিচালিত রিকশার আধুনিকায়ন, লাইসেন্স প্রদান, রুট পারমিট, এবং আলাদা লেনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। তারা সতর্ক করে বলেন, "নীতিমালা ছাড়া হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিলে লাখ লাখ পরিবার চরম অনিশ্চয়তায় পড়বে।"
ব্যাটারিচালিত রিকশাকে পরিবেশবান্ধব দাবি করে সংগঠনটি জানিয়েছে, "এক মাসেই নিবন্ধন থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসতে পারে। এই বিপুল অর্থনৈতিক সুযোগকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানানো হয়।"
এই সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রিকশাচালক-মালিকরা। দাবি আদায়ের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলা হলেও তাদের বক্তব্যে ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলনের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
বায়ান্ন/এএস/একে