ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে ইসরায়েল, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৬ মার্চ ২০২৪ ০৪:০৬:০০ অপরাহ্ন | আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু আশা করছেন আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধের জন্য জরুরিভিত্তিতে সংসদে বাজেট পাস করাতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে বসতী স্থাপনকারীদের জন্য নগদ অর্থ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য বাজেট ঠিক রাখতে সামাজিকখাতে বরাদ্দ কমতে পারে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সামরিকখাতে ইসরায়েলের বাজেট দ্বিগুণ হতে পারে।

 

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে নেতানিয়াহু বারবারই পরিষ্কার করছেন যে যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে সাময়িক। যদি যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ে বা তিনি না থাকেন তারপরেও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন থাকবে।

 

সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো প্রত্যাশার চেয়ে যুদ্ধে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। গত তিন মাসের তুলনায় অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ইসরায়েলের অর্থনীতি বার্ষিক হারে এক-পঞ্চমাংশ সংকোচিত হয়েছে। একই সময়ে সাত লাখ ৫০ হাজারের বেশি শ্রমবাজার ত্যাগ করেছে, যা এক-ষষ্ঠাংশ। তাছাড়া গত মাসে রেটিং সংস্থা মুডি প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের ক্রেডিট রেটিং ডাউন করেছে। এসব কারণে প্রশ্ন উঠছে ইসরায়েল কী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে।

 

ইসরায়েলের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা অর্থনীতি। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলার সময় অর্থাৎ অক্টোবরে জিডিপির বিপরীতে ঋণ অনুপাতের হার ছিল ৬০ শতাংশ, যা ধনীদেশগুলোর তুলনায় গড়ে যথেষ্ট কম। কিন্ত গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েল তার সামরিক খাতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ বিলিয়ন ডলার বেশি ব্যয় করেছে, যা জিডিপির ২ শতাংশ। শুধু সশস্ত্র বাহিনীর জন্য যে ব্যয় হচ্ছে তা নয়, উদ্বাস্তুদের জন্য বাসস্থান, বেশ কয়েকটি ফার্লো স্কিম ও সংরক্ষিতদের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয়ও করতে হচ্ছে। ইসরায়েলের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন ৬৬ শতাংশ ঋণের অনুপাত ম্যানেজ করা সম্ভব। যদিও নেতানিয়াহু প্রশাসনের লক্ষ্য হলো জিডিপির ৬ দশমিক ৬ শতাংশ আর্থিক ঘাটতির দিকে, ফলে জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত আরও বাড়বে।

 

যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের জন্য এই ধরনের ঋণ পালে হাওয়ার মতো। কিন্তু ইসরায়েলের জন্য হতে পারে বিপরীত। কারণ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের এক চতুর্থাংশ ইনকাম ট্যাক্স ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

 

অনেকই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে নেতানিয়াহুর বাজেট বিলাসী হতে পারে। যদিও এ ধরনের সংকটের সময় সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ধার করতে পারে। ইসরায়েলের সামরিক ব্যয় যেহেতু বেশিই থাকছে তাই ঋণ স্থিতিশীল রাখতে পরিকল্পনা দরকার।

 

২০২২ সালে রাজস্ব থেকে ইসরায়েল যা আয় করে তা ছিল জিডিপির ৩৩ শতাংশ, যা ধনীদেশগুলোর গড় ৩৪ শতাংশ থেকে সামান্য কম। নেতানিয়াহুর বাজেটে অনেক কিছু বাড়ানো হতে পারে। মূল্য সংযোজন কর বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৮ শতাংশে। আয়েরভিত্তিতে স্বাস্থ্য ট্যাক্স বাড়তে পারে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। করপোরেট ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে প্রযুক্তিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন নীতিনির্ধারকরা। তাছাড়া হাউজহোল্ডের ওপর ট্যাক্স বাড়ানো হলে তাদের ব্যয় কমে যেতে পারে।

 

মূলত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই সংকটে পড়ে ইসরায়েলের অর্থনীতি। এরই মধ্যে নির্মাণখাতে প্রায় অচলাবস্থা নেমে এসেছে। খামারগুলো হারিয়েছে শ্রম শক্তি। পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলো ধুকছে। এক বছর আগের তুলনায় জেরুজালেমে ৭৭ শতাংশ কম পর্যটক ভ্রমণ করেছে।