ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিসে ফিরছেন ‘নিষিদ্ধ’ সোমা-মৌ

খেলাধুলা ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : সোমবার ২১ অগাস্ট ২০২৩ ০৮:৪৯:০০ অপরাহ্ন | খেলাধুলা

দেশের টেবিল টেনিসের অন্যতম সেরা দুই নারী খেলোয়াড় সোনাম সুলতানা সোমা ও সাদিয়া রহমান মৌ। গতবছর কমনওয়েলথ গেমসে নারী দ্বৈত ইভেন্টে অংশ না নিয়ে বাইরে থাকায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। এরপর এই দুই জনকে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন।

 

কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণ না করে ভিলেজের বাইরে যাওয়ায় সোমা ও মৌকে প্রথমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিন বছর এবং ঘরোয়া পর্যায়ে দুই বছর নিষিদ্ধ করেছিল ফেডারেশন। পরে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় ক্ষেত্রে এক বছর করে শাস্তি কমানো হয়। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ঘরোয়া শাস্তি বলবৎ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গেল এক বছর নিষিদ্ধ থাকায় দু’টি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারেননি তারা। তবে আগামী সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান টিটি চ্যাম্পিয়নশিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে দুই নারী টিটি খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফেডারেশন। যা নিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

 

ফুটবল ও ক্রিকেটের বাইরে দেশের অন্য সকল ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক নির্ভর। তবে গতকাল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহাঙ্গীর আলমের অনুপস্থিতিতে নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে রেখেই সভা হয়েছে। এ সভায় ফেডারেশন মেয়াদ পূরণের আগেই তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করল।

 

এর কারণ প্রসঙ্গে ফেডারেশনের অন্যতম সদস্য এবং সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সাইদুল হক সাদী বলেন, ‘তারা ইতোমধ্যে এক বছর শাস্তির আওতায় ছিলেন। ঘরোয়া পর্যায়ে দুই জনই শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। পাশাপাশি ফেডারেশনের কাছে পুনরায় শাস্তি মওকুফ চেয়ে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না করার অঙ্গীকারও করেছে। এ জন্য সামনে একটি আন্তর্জাতিক বড় টুর্নামেন্ট থাকায় সভায় আলোচনাক্রমে সবাই আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মতামত দিয়েছে।'

 

কমনওয়েলথ গেমসে ওয়াকওভার এবং ভিলেজের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে দুই খেলোয়াড় নিজেদের নির্দোষ দাবী করে তারাই আবার ফেডারেশনের কাছে ভুল স্বীকার করে একাধিক আবেদন করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান টিটি চ্যাম্পিয়নশিপে নারী দলে অংশগ্রহণ করবেন সোমা, মৌ, রহিমা ও খৈ খৈ। পুরুষ দলে রয়েছেন রামহিম লিয়ান বম, মোহতাসিন আহমেদ হৃদয়, ইমন ও নাফিজ। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন রামহিম এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা চলাকালেই তাকে কোরিয়া নেওয়ার পরিকল্পনা ফেডারেশনের।

 

এশিয়ান টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের কোচ মোঃ আলী। খেলোয়াড় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,টিটিতে শীর্ষ র‌্যাংকিংধারী খেলোয়াড়দেরই জাতীয় দলে নেওয়া হয়। পুরুষ র‌্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন মানস (সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন)। মানস না যাওয়ায় তার পরবর্তী স্থান অধিকারীকে বিবেচনা করা হয়েছে। ’

 

এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ গুরুত্বপূর্ণ আসর। সেখানে সিনিয়র খেলোয়াড়দেরই প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে ধারণা অনেকের। জাভেদের মতো খেলোয়াড়কে না নিয়ে তরুণ নাফিজকে নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফেডারেশনের যুক্তি, টিটি দল মূলত তিন জনের। ফেডারেশনের আর্থিক সামর্থ্য ও সুযোগ-সুবিধার উপর নির্ভর করে চতুর্থ খেলোয়াড়ও নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে জুনিয়র নারী ও পুরুষ চ্যাম্পিয়নকে নেয়া হচ্ছে। যা ইতোপূর্বেও হয়েছে।

 

সোমা ও মৌয়ের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক বছর শাস্তি কাটালেও ঘরোয়া অঙ্গনে এখনো শুরুই হয়নি। অতি সম্প্রতি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে তারা অংশ নিয়েছেন। এখন থেকে তাদের ঘরোয়া শাস্তি কার্যকর করার পরিকল্পনা ফেডারেশনের। টেবিল টেনিস ফেডারেশনের শাস্তির এই কার্যকারিতা ক্রীড়াঙ্গনে বেশ আলোচিত। নিষিদ্ধ ঘোষণার পর একটি শাস্তি কার্যকর আরেকটি এক বছর পর। এক্ষেত্রে অবশ্য ফেডারেশনের ব্যাখ্যা, শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তাদের সঙ্গে ক্লাব/সংস্থা চুক্তি করেছিল। সেই ক্লাব কিংবা সংস্থা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য শাস্তি দেওয়ার সময়ই চলতি মৌসুমের পরই শাস্তি বলবৎ এর কথা বলা হয়েছিল।

 

দেশ সেরা দুই টিটি খেলোয়াড়ের শাস্তি গত বছর থেকেই ক্রীড়াঙ্গনে নানা সময়ে আলোচনার ঝড় তোলে। বিশেষ করে অন্য ফেডারেশনের কয়েকজন সাধারণ সম্পাদক এই শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য অনেক চাপও সৃষ্টি করেছেন। এতদিন মৌখিকভাবে বলার পর গত মাস দেড়েক আগে আশিকুর রহমান মিকু জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের প্যাডে টিটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে শাস্তি প্রত্যাহার চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। টিটি ফেডারেশনের শাস্তির পদ্ধতি নিয়ে যেমনি আলোচনা-সমালোচনা হয় তেমনি এই চিঠিও ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

 

ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফেডারেশন শৃঙ্খলার কারণে শাস্তি বা নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাকিব, জিমি, মামুনুল, রোমানের মতো আন্তর্জাতিক তারকারা এই শাস্তির আওতায় ছিলেন অনেক সময়। বিগত ঘটনাগুলোতে জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ কোনো চিঠি দেয়নি এবং এই পরিষদের কোনো কর্মকর্তা ঐ শাস্তি নিয়ে তেমন সোচ্চারও ছিলেন না।

 

টিটিতে ঘটছে অবশ্য ব্যতিক্রম। ক্রীড়াসংশ্লিষ্টদের মতে এর কারণ, শাস্তিপ্রাপ্ত দুই খেলোয়াড়ই নড়াইলের এবং আশিকুর রহমান মিকু নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। মিকু এই বিষয়ে সোচ্চার হওয়ায় তার ঘনিষ্ঠজনরাও শাস্তি প্রত্যাহারে প্রতিবাদী ছিলেন।