ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না যুক্তরাষ্ট্র। এমন কথাই জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। অবশ্য সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে রক্ষা করবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সংঘাত চায় না বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘকে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইরান বা তার প্রক্সিরা যে কোনও জায়গায় মার্কিন সেনাদের ওপর আক্রমণ করলে ওয়াশিংটন দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য দেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যকার সংঘাত পুরো অঞ্চলে বিস্তৃত যুদ্ধ হিসেবে ছড়িয়ে পড়তে পারে, লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও এতে যোগ দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে আশঙ্কা রয়েছে, তার মধ্যেই জাতিসংঘে এই বৈঠক হয়।
এদিন ব্লিংকেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে সংঘাত চায় না। আমরা চাই না যে এই যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হোক। কিন্তু ইরান বা তার প্রক্সিরা যদি কোথাও মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা করে, তাহলে কোনও ভুল করবেন না: আমরা আমাদের জনগণকে রক্ষা করব, আমরা আমাদের নিরাপত্তা রক্ষা করব - দ্রুত এবং কঠোরভাবে।’
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অন্য কোনও ফ্রন্টে সংঘাত শুরুর কথা বিবেচনা করছে এমন দেশ বা গোষ্ঠীগুলোকে মঙ্গলবার ঐক্যবদ্ধ বার্তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘আগুনে জ্বালানি নিক্ষেপ করবেন না।’
অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি পরে নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ব্লিংকেন ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষের জন্য ইরানকে ভুলভাবে দোষারোপ করার চেষ্টা করেছেন এবং তেহরান স্পষ্টভাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ প্রত্যাখ্যান করছে।
তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অটুট রয়েছে। নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন পরিচালনাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রকাশ্যে নিজেকে দাঁড় করিয়ে চলমান সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।’
এদিকে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি জাতিসংঘে সাংবাদিকদের বলেছেন, চলমান সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার যে হুমকি রয়েছে সেটি ‘প্রকৃত অর্থেই বিপদ’। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই এটা এড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজার চলমান এই সংঘাত পশ্চিম তীরে, লেবাননে ও অন্যান্য ফ্রন্টে বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা কেউই তা চাই না, আমরা সবাই এর বিরুদ্ধে কাজ করছি।’
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। তাদের অবিরাম নির্বিচার এই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
এছাড়া ইসরায়েলের হামলায় গাজায় শুধুমাত্র গত একদিনে ৭০৪ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদিও ইসরায়েল দাবি করছে তারা হামাসের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। তবে হামাসের যোদ্ধাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা।