লোয়ারবন ক্যাম্পে পরদিন সকাল ৮ টার আগে সবাই জেগে উঠলেন। দুই দলে ক্যাম্পে ছিলেন ৩০০ জন। তাদের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে। তবে অধিকাংশের বয়স ছিল ২৫ বছরের নিচে। ৪-৫ ছিলেন ৩০ বছর বয়সী। ক্যাম্পটি ছিল মূলত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
দৈনিক বায়ান্নের কাছে লোয়ারবন ক্যাম্পের অবস্থা বর্ণনা করলেন সরদার আজিজুর রহমান। তিনি জানালেন, সকাল আটটার দিকে একজন ভারতীয় এলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন নিজেদের খাবার নিজেরা তৈরি করতে হবে। ওই নির্দেশনা পেয়ে খাবার তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হলো। প্রতি দলের খাবার রান্না করার জন্যে ৪-৫ জন করে বাছাই করা হলো। এরা একবেলা রান্না করবেন। পরেরবার অন্যরা রান্না করবেন। এই অবস্থা চালুর পর সকাল ১০ টার মধ্যে খাবার রান্না সম্পন্ন হয়। ভাত, ডাল আর সবজি দিয়ে খাবার খাওয়া হলো। এর পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্য ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হলেন। এর মধ্যে অফিসার ছিলেন ২ জন। তারা জানিয়ে দিলেন ৩০০ জনকে দুই ভাগে ভাগ করে দুইটি কোম্পানি করা হবে। করা হলোও তাই। কোম্পানি দুইটির নাম দেয়া হলো এক নম্বর কোম্পানি ও দুই নম্বর কোম্পানি। এক নম্বর কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হলো সরদার আজিজুর রহমানকে। তাবুর মেঝেতে থাকার জন্যে ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু অনেকেই তাতে ভিন্নমত পোষণ করেন। মেঝেতে থাকতে অনিহা প্রকাশ করেন। বাঁশ দিয়ে অনেকে মাচা তৈরি নেন।
তিনি জানান ক্যাম্পে অবস্থানের দ্বিতীয় দিনে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। ক্যাম্পে আনা হয় ৩০০ রাইফেল, ২০ টি এসএমজি ও ১০ টি এলএমজি। সকলের নামে রাইফেল বরাদ্দ করা হয়। স্বাস্থ্যবানদের নামে বরাদ্দ হয় এসএমজি ও এলএমজি। অস্ত্র রাখার জন্যে স্থান তৈরি করা হলো মাটি খুরে গর্তর মধ্যে রাখার। গর্তের মধ্যে আবার বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি করা হয় হ্যাঙ্গার। ওই হ্যাঙ্গারে রাইফেল ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা হয়।
সরদার আজিজ জানান, পরদিন শুরু হয় প্রশিক্ষণ। সকলকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলের ভেতর। সেখানে প্রথমে রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হলো। অবিরাম ওই প্রশিক্ষণ চলছিল। এক মাস যাবত চলে প্রশিক্ষণ। এটা ছিল বেসিক প্রশিক্ষণ। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলত ওই প্রশিক্ষণ। এই জন্যে দুপুরের খাবার হিসেবে সাথে নিয়ে যাওয়া হতো রুটি। মাঝে মাঝে সকলের ক্লাস নেয়া হতো। সকলের কাছে জানতে চাওয়া হতো প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা। এই ক্লাসে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রæ পক্ষকে পরাজিত করার কৌশল।
তিনি বলেন, এক মাস পর দজ্ঞতা যাচাইয়ের পরীক্ষা শুরু হয়। দুই কোম্পানিকে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধ করতে হবে। জঙ্গলে গিয়ে দুই কোম্পানির সদ্যরা পৃথক হয়ে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নেন। একে অপরে উপর আক্রমণ করতে হবে। ১০দিন ব্যাপী চলে ওই যুদ্ধ। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করে তাদের সক্ষমতা পরীক্ষা করেন।