ঢাকা, শনিবার ৪ মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে পুকুর ভরাটের অভিযোগ

কাজী হুমায়ুন কবির | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৮:৩৫:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের সদরঘাট থানাধীন মাঝিরঘাট এলাকায় লায়ন্স শাহ আলম বাবুলের নামে ৮০ বছরেরও পুরানো এক পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ১৫ই ফেব্রুয়ারী পরিবেশ অধিদপ্তরেও একটি অভিযোগও জমা পড়েছে বলে জানা যায়। এলাকার বাসিন্দারা চাননা এই পুকুরটি ভরাট হয়ে যাক। 

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, এই পুরানো পুকুরটি ছিল মিঠাপানির পুকুর । এক সময় এই পুকুরটির পানিই ছিল আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের আগুন নিভানো ও এই এলাকার মানুষের ভরসা।  লায়ন্স শাহ আলম বাবুল এর লোকজন সেই পুকুরটি ভরানোর উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে এই পুকুরের চারপাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে আসছেন। এলাকার একজন বলেন, এই পুকুরের এক অংশ ভরাট করে প্রায় বছর খানেক আগে একটি গুদাম ঘর করা হয়। যার কারনে পুকুরের অংশটি আস্তে আস্তে ডোবায় পরিণত হচ্ছে। পুকুরটি ক্রমান্বয়ে ভরাট হতে থাকলে এলাকার বাসিন্দারা বাধা দেয়। উনার প্রভাবের কাছে অনেকে মুখ খুলতে পারছেনা। এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, ২০০৮ সালে এই পুকুরের পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে এই পুকুরের পানি দিয়ে আগুন নিভানো হয়েছিল। একসময় এই এলাকার মানুষেরা লেবার দিয়ে কাজ করালে এই পুকুরেই লেবাররা গোছল ও হাত মুখ ধোলাই করতো। যতটুকু জানি এই পুকুর নিয়ে গোলাভাগের মামলাও রয়েছে। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, একদিকে ডোবার পানি পাইপদিয়ে তোলা হচ্ছে। আরেকদিকে ঠেলাগাড়ি দিয়ে মাটি এনে পুকুরের অংশ ভরাট করা হচ্ছে। ডোবা ও পুকুর,দীঘী বা জলাধার নিয়ে যদিও বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এ পরিষ্কার বলা আছে, দিঘী বা জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট করা যাইবে না। এছাড়া"প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।

অন্যদিকে ২০০০ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মুখ্যসচিব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, "কোনো অবস্থাতেই খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে খাল-বিল, পুকুর, নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়/জলাধার বন্ধ করা যাবে না।"

তা সত্বেও নগরীর প্রায় দীঘি বা জলাধার গ্রাস দিনের পর দিন। চট্টগ্রামে বায়েজীদ বোস্তামী এলাকার শেরশাহ কলোনীর পুরানো দিঘীর পাড়সহ নগরের কয়েকটি দিঘী এখন হুমকির মুখে। মাঝির ঘাট এলাকার এই পুকুরটিও এখন ডোবায় পরিণত হয়েছে। ডোবা থেকে এখন হারাতে বসেছে তার অস্তিত্ব। হয়তো এই এলাকায় এমন একটি পুকুর ছিল ভবিষ্যতে তা আর কেউ জানবেনা। অসংখ্য প্লটের নিচে চাপা পড়ে যাবে। 

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মুনির হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি পারিবারিক কারনে বাড়িতে ছিলাম। এই অভিযোগের বিষয়টি জেনে আপনাকে জানাবো।

এ বিষয়ে লায়ন্স শাহ আলম বাবুলের ম্যানেজার অনিমেষ রায় চৌধুরী বলেন, এটা পুকুর ছিলনা। দীর্ঘদিন ধরে ডোবা হিসাবে আছে। তাই ডেঙ্গুর উপক্রম হবে বিধায় ডোবাটা ভরাট করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে লায়ন্স শাহ আলম বাবুল বলেন, এটা পুকুর নয়। এটা একটা ডোবা। এখানে মশা মাছি বসে। তাই আমি পরিবেশের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য মুলত ডোবাটা সমান করে ফেলছি।