হামলার বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই হামলার অজুহাত সৃষ্টির জন্যই রাশিয়া সেনা প্রত্যাহারের মতো ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে বলেও ধারণা তার।
শুক্রবার কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর প্রতিনিধিনিদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউসে উপস্থিত সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি নিশ্চিত যে, তিনি (পুতিন) হামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আমাদের এটা বিশ্বাস করার মতো যৌক্তিক কারণ রয়েছে এবং (এ ব্যাপারে) আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা করেই বসে— সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ও সমন্বিতভাবে দেশটির ওপর বহুমুখী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন শুক্রবারের বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। এছাড়া পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোকে শক্তিশালী করার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া যদি চায়, তাহলে এখনও কূটনৈতিকভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সংকটের সমাধান সম্ভব; কিন্তু মস্কো যদি সত্যিই হামলা করে বসে, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সংকট মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরেই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশীরাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই সংকট শুর হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।
গত দুই মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া। সম্প্রতি অবশ্য কিছু সৈন্যদল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; তবে এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্রসমূহ।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে—সীমান্তে সেনা উপস্থিতি কমায়নি রাশিয়া, বরং বাড়িয়েছে। ইউরোপের দেশসমূহের আঞ্চলিক সামরিক জোট অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশনে (ওসসিই) নিযুক্ত মার্কিন দূত মাইকেল কার্পেন্টার শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক বৈঠকে বলেছেন, গত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখ রুশ সেনার উপস্থিতি ছিল— বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছে ১ লাখ ৯০ হাজার, বা তারচেয়ে কিছু বেশি সংখ্যক সেনা।
ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়, মূলত সেজন্য দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টির করতেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। কারণ, ১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটোকে রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপিত্যবাদের বিরোধী।
বর্তমানের উদ্ভূত পরিস্থিতির একটি কূটনৈতিক সমাধানের পথ বের করতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বৈঠক করবেন বলে শুকবারের সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন জো বাইডেন। ইউরোপে হবে এই বৈঠক।
পাশাপাশি রাশিয়ার উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ২৪ ফেব্রুয়ারির বৈঠকের আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে কূটনৈতিক ভাবে এই সংকট সমাধনের পথ ‘চিরতরে বন্ধ’ হয়ে যাবে।