নগরের অধিকাংশ এলাকার ফুটপাত ও সড়কে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছে হকাররা। জনভোগান্তি ও যাত্রিদের চলাচল ও নির্বিঘ্ন নিরাপত্তার অভিযোগ রয়েছে হকারদের বিরুদ্ধে। নগরের এমন কোন এলাকা নেই যেখানে হকাররা দোকান বসায় না। তাদেরকে পূজী করে কয়েকটি স্তরে চাদাবাজীও চলে। একটা শ্রেনী হকারদের বসার সুযোগ নিয়ে চাঁদাবাজী করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মি, সমিতি ও প্রশাসনের লোকরা তাদের বসার সুযোগে দিনে সপ্তাহে বা মাসিক টাকা নেয়। হকাররা ও তাদের পরিবার চালানোর জন্য দোকান নিয়ে বসার সুযোগ পেয়ে এই চাঁদাটুকো প্রতিদিন দিয়ে দেয়। অনেক হকাররা অভিযোগ করে বলেন, যারা চাদার টাকা তোলেন অনেক সময় চাদার টাকা না দিলে হকারদের উচ্ছেদসহ নির্যাতন করেন। হকার সমিতি সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের পুরো নগর জুড়ে প্রায় ২৫হাজার হকার রয়েছে। তারা ফুটপাত ও রাস্তায় দোকান বসিয়ে কোন রকম তাদের সংসার চালায়। এত হকারদের উচ্চেদ করলে তারা যাবে কোথায়, সামনে রমজান মাস, ঈদ উৎসব। সব মিলিয়ে বেচা কেনার একটা সময়। এসময় তাদেরকে উচ্ছেদ করলে ২৫হাজার পরিবার অসহায় হয়ে পড়বে।
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম নগরীকে হকারমুক্ত করার অঙ্গিকার দিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় হকার উচ্ছেদ করতে গেলে আসে নানা বাধা বিপত্তি। আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে মারমুখী অবস্থানে যায় হকাররা। এ নিয়ে ১২০০ হকারকে আসামী করে একটি মামলাও হয়। এই মামলা নিয়ে তারা বসে নেই। প্রতিদিনই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। তাদের বক্তব্য সাবেক মেয়র মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরী হকারদের জন্য হকার মার্কেট করেছে। কিন্ত সেখানে এতো হকাররা বসতে পারবে না। সেই জায়গাও নেই। তাই হকারদের সঠিক পুর্নবাসন করে তারপর হকারদের উচ্ছেদ করা হোক। নতুবা সমস্যা বাড়বে। হকাররা যুগপৎ আন্দোলন করবে। কারন হকারদের সাথে অনেক কারখানার মালিকদেরও স্বার্থ জড়িত। হকারদের উচ্ছেদ করলে কারখানা মালিকরাও পথে বসতে হবে। কোন ঘোষনা বা পুর্নবাসন না করে রমজান মাসের আগে হকারদের উচ্ছেদ করাটা অমানবিক। শুধু তাই নয় তাদের পরিবারও পড়বে বিপাকে। তারা এই রমজানে এমন অসহায় হয়ে পড়বে যা কল্পনাতিত। নেতৃবৃন্দ বলেন, পুর্নবাসন করা পর্যন্ত হকার উচ্ছেদ না করে একটি নীতিমালার অধিন করে দিলে তারা তা মেনেই ফুটপাতের পাশে অস্থায়ী ভাসমান দোকান বসাবে। এ নিয়ে আজকে নিউমার্কেট এলাকায় একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ হকারদের দুর্বিষহ জীবন তুলে ধরেন। তারা বলেন, হকাররা স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের চাহিদা পুরন করে থাকে। এই রমজান ঈদে অনেক স্বল্প আয়ের লোক আছে যারা অধিক মুল্যে পোশাক কিনতে, জুতা কিনতে পারবেনা। এই হকাররাই তাদের চাহিদা পুরণ করবে। তারা বলেন, নগরে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করাটা অশোভন। তবু পেটের দায়ে বসতে হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা বা পুর্নবাসন করা হোক। তাদের বসার জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা বরাদ্দ দেয়া হোক। তাহলে সকল জটিলতার অবসান হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হকার সমিতির সভাপতি মিরন হোসেন মিলন বলেন, গ্রামে গঞ্জ থেকে আসা চট্টগ্রাম নগরে ২৫ হাজার হকার আছে। সাবেক মেয়ররা এসব হকারদের সহযোগীতা করেছে। এখন এসব হকারদের উচ্ছেদ করা হলে তারা সবাই পথে বসবে। তাদের পুনর্বাসন করা হোক, আমরা ফুটপাত ও সড়কের অংশ ছেড়ে দিবো। সমিতির নেতৃবৃন্দ মেয়রের কাছে কোন প্রস্তাব নিয়ে গেছে কিনা এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদেরকে তিনি ডাকেননি। আমরা এখনো উনার কাছে যাইনি। তবে অনেক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতির সভাপতি নুর আলম লেদু বলেন, বিকল্প কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত হকাররা হঠাৎ কোথায় যাবেন। তাই পুর্নবাসন করলেই আমরা ফুটপাত ছেড়ে দিবো। আর না হয় আমরা কোথায় যাবো। দেশের শৃংখলা রক্ষার্থে একটা জাতীয় হকার নীতিমালা করা হোক। সেই নীতিমালা না করে এতোগুলো হকারকে উচ্ছেদ করলে আরো সমস্যা সৃষ্টি হবে। মাননীয় মেয়র সাহেব হঠাৎ ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার হকারকে উচ্ছেদ করলো। এরা এখন কোথায় যাবে? প্রয়োজনে হকারদের সার্থে একটি জমি অধিগ্রহন করা হোক।
বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির দুলাল বলেন, তাদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে সরকারী সিদ্ধান্ত। হকাররা যদি মোভিং পজিশনে থাকতো সমস্যা ছিলনা। তবে তারা স্থায়ী ভাবে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দোকান করছে। তারা এক একটা দোকানের পজিশন ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা এককালীন বানিজ্য করে।তাছাড়া দৈনিক ভাড়াতো তোলে একটি মহল। তিনি বলেন, বিভিন্ন মার্কেটের মুখগুলো পর্যন্ত এমন ভাবে দখল করছে এতে ক্রেতাদের চলাফেরা ও মার্কেটের মুল দোকানমালিকদের চলাফেরা যেমন কষ্টকর তেমনি নিরাপত্তাহীন। তাদেরকে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হোক।