রাশিয়ার চলমান সামরিক আগ্রাসন মোকাবেলায় এ মাসের শুরুতে ইউক্রেনকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। খবর বের হয়েছে, এ ট্যাংকে ব্যবহারের জন্য যে গোলা পাঠানো হবে সেটিতে, বিষাক্ত ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম রয়েছে। আর ইউরেনিয়ামযুক্ত গোলা পাঠানোর সিদ্ধান্তে বেজায় ক্ষীপ্ত হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তিনি হুমকি দিয়েছেন, যদি যুক্তরাজ্য এ ধরনের কোনো অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। রুশ প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমারা ‘পারমাণবিক অস্ত্রের উপাদান’ সমৃদ্ধ অস্ত্র পাঠাচ্ছে।
তবে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংকের সঙ্গে এ গোলা পাঠাবেই। উল্টো দেশটি এর পক্ষে সাফাই গেয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই গোলায় ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম রয়েছে, কিন্তু এটির তেজস্ক্রিয়তা কম এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিও নেই। এছাড়া তারা দাবি করেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম হলো একটি আদর্শ উপাদান। পারমাণবিক অস্ত্রের সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ট্যাংকের গোলায় কয়েক যুগ ধরে ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম ব্যবহার করেছে। রাশিয়া এটি জানে, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করছে। রয়্যাল সোসাইটির মতো স্বাধীন গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরাও জানিয়েছেন, ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়ামযুক্ত অস্ত্রের প্রভাব জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর খুবই কম।’
ব্রিটিশ সাবেক আর্মি কমান্ডার ও রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ কর্নেল হামিস দে ব্রেটন-গর্ডন বলেছেন, পুতিনের এ ধরনের মন্তব্য ভুয়া তথ্য।
তিনি বলেছেন, এটি ‘হাস্যকর’ যে পুতিন ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়ামের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পর্কের কথা বলেছেন।
প্রাকৃতিকভাবে যে ইউরেনিয়াম পাওয়া যায় সেটিকে সমৃদ্ধ করার পর যে ইউরেনিয়াম থেকে যায় সেটিই ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম। এটি মূলত গোলাসহ অন্যান্য অস্ত্রের শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়।
তবে যুক্তরাজ্য এরপক্ষে সাফাই গাইলেও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এ নিয়ে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যুক্তরাজ্যের ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়ামের অস্ত্র পাঠানোর মানে হলো তারা ১৯৯৯ সালের যুগোস্লাভিয়া আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই এ বিষয়টি লন্ডনের জন্য খারাপভাবেই শেষ হবে।’
ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়ামের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল ইরাক ও বালকান অঞ্চলে। এরপর সেসব অঞ্চলে শিশু জন্মের ওপর প্রভাব পড়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২২ সালে জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম ইউক্রেনের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, ‘ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম ও বিষাক্ত উপাদান সাধারণ বিস্ফোরকে ব্যবহার করা হলে এটি ত্বকের সমস্যা, কিডনি বিকল এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়ামের রাসায়নিক বিষক্রিয়া এর সম্ভাব্য তেজষ্ক্রিয়তা থেকে আরও গুরুতর বিষয়।’
এদিকে যুক্তরাজ্য ইউরেনিয়ামযুক্ত অস্ত্র পাঠালেও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে তাদের এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই।