সুনামগঞ্জ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মচারীকে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে ধরেছে শিক্ষার্থীরা। ওই কর্মচারীর নাম মো. ফাহিম মিয়া, তিনি সুনামগঞ্জ ঔষধ প্রশাসনের অফিস সহকারী। তার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের হাজিপাড়াস্থ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অস্থায়ী অফিসে এই ঘটনা ঘটে। তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়ার আমিনুল ইসলাম নামের একজনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা তাকে টাকাসহ হাতেনাতে ধরে। এসময় ড্রাগ সুপার অফিসে ছিলেন না।
পরে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই কর্মচারি জানিয়েছে, ঘুষের টাকার মাসোয়ারা স্বাস্থ্য ও জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়ে থাকে। ওই কর্মচারীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন, জেলা প্রশাসনের প্রাক্তন সিনিয়ির নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. বুরহান উদ্দিন (বর্তমানে দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মত) ও সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য সহকারী ওমর ফারুকসহ অন্যান্য ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মো. ফাহিম মিয়াকে ঘুষের টাকাসহ আটকের পর এসব তথ্য জানান তিনি। অবশ্য মো. ফাহিম মিয়া যাদের নাম প্রকাশ করেছে সবাই এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়া শিক্ষার্থীদের জানান, ড্রাগ লাইন্সেস আবেদন করতে ২৮০০ টাকা ফি দিতে হয়। কিন্তু এ জন্য ঘুষ দিতে হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। ২০২০ সাল থেকে ১২২ জনের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে লাইন্সেস প্রদান করা হয়েছে। এসময় শিক্ষার্থীরা অফিস তল্লাশি করে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করে।
তাহিরপুরের বড়ছড়ার আমিনুল ইসলাম বলেন,‘ ২০ হাজার টাকার নিচে কাউকেই ড্রাগ লাইসেন্স দেওয়া হয়না। প্রথমে ১০ হাজার জমা দিয়েছি, পরে ১০ হাজার দিতে হয়েছে। আমার এলাকার অনেকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়ে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ’
শিক্ষার্থী উসমান গনী জানান, ফার্মেসীর জন্য ড্রাগ লাইসেন্স নিতে আসা একজন ভোক্তভোগীর তথ্যের ভিত্তিতে হাজিপাড়াস্থ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অফিসে ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা হয় অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়াকে। তার কাছ থেকে ড্রাগ লাইন্সেস দেওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের ১২২ টি নথি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিমাসে সে কাদের মাঝে ঘুষের টাকা বণ্টন করতো সে তালিকাও উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে ১০ হাজার টাকাসহ পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। ’
এ ব্যপারে জেলা প্রশাসনের প্রাক্তন সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. বুরহান উদ্দিন বলেন,‘ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে আমি হয়ত দুই অথবা তিন বার সভায় গিয়েছিলাম। এসব কাজ মূলত ঔষধ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের। আমি চার মাস আগে সুনামগঞ্জ থেকে বদলী হয়ে চলে এসেছি। এসব অভিযোগ সম্পুর্ন ভিত্তিহীন।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেনের সাথে কথা বলতে চাইলে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য সহকারী ওমর ফারুক বলেন,‘ আমাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মিথ্যা। আমরা কমিটির সদস্য হিসেবে সভায় গেলে নিয়ম অনুযায়ী কিছু সম্মানী দেওয়া হত। এর বেশি কিছু নয়। সে তার অপকর্ম এখন অন্যদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।
সুনামগঞ্জ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ সুপার আবু জাফর গণমাধ্যমকে বলেছেন,‘ তিনি গত ২ মে সুনামগঞ্জে যোগদান করেছেন। তার আম্মা অসুস্থ্য, গ্রামের বাড়িতে আছেন। এসব বিষয়ে কিছুই জানা নেই তার। এসে খোঁজ-খবর নেবেন।’
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আব্দুল আহাদ বলেন,‘শিক্ষার্থীরা সুনামগঞ্জ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মচারীকে ঘুষের ১০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন কাগজপত্রসহ আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে। আমরা দুদকের সাথে কথা বলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।