ঢাকা, শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সড়কে যত চাঁদাবাজীর খাত

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ০৯:১৮:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কিছু মানুষ আছে যারা সংসার চালাতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে, আর কিছু মানুষ আছে চাকুরীর সুবাধে মাসিক আয় করে, দেশে এমন মানুষও আছে যারা কোন আয় না করে সড়কে চাঁদা বানিজ্য করে লাখ লাখ টাকা অবৈধ পেয়ে আরামে সংসার চালায়। আবার অনেক মানুষ আছে যারা বেতনের পাশাপাশি ঘুষ ও সড়ক থেকে চাঁদা নিয়ে অতি দ্রুত কোটিপতি হবার স্বপ্ন দেখে। যাদের কারনে সড়ক হয়না দখলমুক্ত। কোন সমস্যা সামনে আসলে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে। ফুটপাত দখল, ষ্ট্যান্ডবাজী, সড়ক দখল. ব্যাটারী চালিত রিকসা ও গ্যারেজ দিয়ে সড়কে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে প্রতি দিনে, মাসে ও বছরে আয় করছে কোটি কোটি টাকা। যারা সড়ক, ফুটপাত দখল ও অবৈধ ষ্ট্রান্ড দিয়ে টাকা আয় করে তাদের সাথে যুক্ত থাকে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন। যার কারনে শেষ হয়না জনদূর্ভোগ, যানজট, পরিচ্ছন্নতা। সড়কে বাজার বসাতে সিটি করপোরেশন কিংবা সরকারের কোনো সংস্থা ইজারা কিংবা অনুমোদন দেয়নি। তারপরও সড়ক দখল করে হকাররা বাজার বসিয়েছে। চসিক হকারদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। একের পর এক নিয়ম করেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে নগরীর নতুন নতুন এলাকা হকারদের দখলে চলে যাচ্ছে। হকারদের এতো উৎপাতে মধ্যেই বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগকে ম্যানেজ করে গড়ে উঠছে অবৈধ ষ্ট্রান্ড।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর ১৬ থানা এলাকার আভ্যন্তরীণ সড়কে অবৈধভাবে চলছে গ্রাম সিএনজি, অটোরিকশা, টমটম, ম্যাক্সিমা, ব্যাটারীচালিত রিক্সাসহ অসংখ্য যানবাহন। মাঝে মাঝে এসব অবৈধ গাড়িগুলোকে সার্জেন্টরা টু করলেও তারা জরিমানার বিপরীতে ছাড়া পেয়ে যায়। জানা যায়, নগরীতে বাস-মিনিবাসের বৈধ রুট আছে ১৮টি, হিউম্যান হলারের ১৮টি ও অটো টেম্পোর রুট ২২টি। বিআরটিএ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২ লাখ ৭২ হাজার ৮৮০টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের ফিটনেস দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈধ এসব যানবাহনের বিপরীতে নগরীতে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যাও কম নেই। এমনকি নগরীর ১৬ থানা এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কে অবৈধভাবে চলছে গ্রাম সিএনজি অটোরিকশা, টমটম, ম্যাক্সিমা, ব্যাটারীচালিত রিকসা বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য যানবাহন।¡ স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতার সমন্বয়ে এসব রুটে বাণিজ্যর মাধ্যমে চলছে বলে অভিযোগ আছে। পাশাপাশি সড়কের মোড়ে মোড়ে যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশির নামে টাকা আদায়ের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে শাহ আমানত ব্রিজ, বহদ্দারহাট, কাপ্তাই রাস্তারমাথা, ষোলোশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড, সিটি গেট, সল্টগোলা ক্রসিং, টাইগারপাস, কোতোয়ালি মোড়, ইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং অন্যতম।

 

চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত বৈধ ষ্ট্যান্ডের পাশাপাশি বাস, ট্রাক, টেম্পো, টেক্সি ও রিকসা ষ্ট্যান্ড রয়েছে। এগুলোর কারণে নগরজুড়ে অসহনীয় যানজটে ভুগছেন নগরবাসী। কিন্তু এদের অবৈধ সুযোগে চাঁদা নিচ্ছে একটা শ্রেনী।

জানা যায়, প্রতিদিন ছয় হাজারের বেশি আন্তজেলা বাস ও ট্রাক চট্টগ্রাম শহরে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু স্থায়ী বাস টার্মিনাল আছে মাত্র দুটি আর ট্রাক টার্মিনাল একটি। স্থায়ী বাস টার্মিনাল দুটি বহদ্দার–হাট ও কদমতলী এলাকায়। স্থায়ী ট্রাক টার্মিনালটি নিমতলায়। বৈধ স্ট্যান্ডে ঠাঁই না থাকায় নগরের ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এলাকাসহ, রাজাখালী, চাকতাই, বন্দর, পোর্ট কানেকটিং রোড, ইপিজেড, অক্সিজেন মোড়, চান্দগাঁও, শাহ আমানত সেতুসংলগ্ন সড়ক, মনসুরাবাদ, কদমতলী বিআরটিসির বাসস্ট্যান্ড থেকে স্টেশন রোড, মাদারবাড়ী, অলংকার মোড় থেকে এ কে খান গেট ও বড়পুল, নিমতল এলাকার অনেক এলাকায় অবৈধ ষ্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। যা থেকে সুযোগে চাঁদা তুলে প্রশাসনের সোর্স, কতিপয় ট্রাকসমিতির লোকসহ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ। তবে জানা যায়, স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ট্রাক মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সে দাবি এখনো পূরণ হয়নি। 

আর ফুটপাত ও সড়ক দখল করা অবৈধ হকারদের চলছে রমরমা বানিজ্য। তারা অসহায়ের কথা বলে ব্যবসা করছে। কিন্ত তাদের এই ব্যবসার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চাঁদা তুলছে এক শ্রেনীর সুবিধাভোগীরা। নগরে এমন কোন সড়ক নেই যেখানে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা করছে অবৈধ দোকানীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, অক্সিজেন মোড় থেকে পতেঙ্গা কাঠগড় বাজার এবং কর্নেলহাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত পুরো নগরীতেই সড়কে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য। নিউমার্কেট মোড়, জুবিলী রোড, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, তামাকমুন্ডি লেন, শাহ আমানত সিটি করপোরেশন মার্কেট, গোলাম রসুল মার্কেট, চকবাজার, ষোলশহর, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকার অবস্থা আরো ভয়াবহ। এসব এলাকায় ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় যানবাহন থেকে যাত্রী ও মালামাল ওঠানামা হয়ে থাকে সড়কের উপরেই। 

তারপর রয়েছে চোরাই তেলের অবৈধ টংয়ের দোকান। পুরো নগর জুড়ে রয়েছে প্রায় ২০০টার মতো ছোট বড় চোরাই তেলের টংয়ের দোকান। যেখান থেকে কতিপয় নামধারী সাংবাদিক, পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ মাসিক হিসাবে টাকা নেন তাদের থেকে। চোরাই তেলের এক দোকানী বলেন, ভাইরে টাকাতো যা কামাই করি, তার বড় অংশ সাংবাদিক পরিচয়ধারী ও পুলিশকেই দিয়ে দিতে হয়। তারপর স্থানীয় পোলাপাইনদেরও দিতে হয়।

এ নিয়ে নগর পিতা কয়েকদফা তাদের উচ্ছেদে পদক্ষেপ নিলেও উচ্ছেদকৃত জায়গা খালী থাকায় ও সঠিক তদারকির অভাবে দিনের পর দিন সড়ক ও ফুটপাত দখল করে চলেছে অবৈধ দোকানীরা। সেই সাথে বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের সঠিক তদারকির অভাবে নগড় জুড়ে চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অবৈধ গ্রাম সিএনজি, অটোরিকশা, টমটম, ম্যাক্সিমা, ব্যাটারীচালিত রিক্সাসহ অসংখ্য যানবাহন। এসব যানজট ও দুর্ভোগ থেকে নগরের জনগণ মুক্তি চান। চান একটি সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশের নগর।