শ্যামলেন্দু দাস তিন বছর আগে অবসর নিয়েছেন। অধ্যাপনা করতেন একটি সরকারি কলেজে। পেনশন ছাড়া ভরসা ছিল ব্যাংকে থাকা লাখ তিনেক টাকা। কিন্তু সম্প্রতি তার সেভিংস অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স হয়ে গিয়েছে ১৩ টাকা।
সম্প্রতি বিনা মূল্যে করোনার টিকার বুস্টার ডোজের জন্য একটা ফোন পেয়েছিলেন শ্যামলেন্দু। সাড়াও দিয়েছিলেন সেই ফোনে। এর পরে ওটিপি শেয়ার করতেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রায় শূন্য হয়ে গিয়েছে। শ্যামলেন্দুর কথা অনুযায়ী, চার মিনিটের মধ্যে সব হয়ে গেছে।
এরপর শ্যামলেন্দু বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানাতে থানায় যান। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, শ্যামলেন্দু একা নন। প্রবীণদের ঠকাতে নতুন এক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভারতে। আবার এমনটাও হতে পারে, কোনো পুরোনো চক্রই নতুন এই পদ্ধতি নিয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, এ ধরনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফোন নম্বরে একটি এসএমএস আসছে। সেখানে বিনা খরচে বুস্টার ডোজ পাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। আর তাতে পা দিলেই চক্রটি ব্যাংকের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসএমএস করে পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করতে বা একটি ফোন নম্বরে কথা বলার জন্য মেসেজ আসছে। ফোন করলে কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করতে বলা হচ্ছে। অনেক সময়েই গ্রাহকরা বুঝতে পারছেন না যে, ওই লিঙ্কে ক্লিক করলে ‘টিম ভিউয়ার’ বা ‘কুইক সাপোর্ট’ ধরনের অ্যাপ খুলছে। সেই অ্যাপ খুলে যাওয়ার পর অপর প্রান্ত থেকে বলা হচ্ছে, মাত্র ১০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সেটা করলেই জালিয়াতরা ব্যাংকে অনলাইন লেনদেনের তথ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছে। আর তার পর সেই টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে।
এর আগে, কখনো টেলিকম সংস্থার, কখনো ব্যাংকের কেওয়াইসি তথ্য আপডেট করার নাম করে ফোন আসার নজির দেখা গেছে। এখন আবার করোনা নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন পদ্ধতিতে নেমেছে একটি চক্র। বুস্টার ডোজ যেহেতু প্রবীণদেরই মূলত দেওয়া হচ্ছে, তাই তারাই এখন এ পদ্ধতিতে জালিয়াতির মূল শিকার হচ্ছেন। পুলিশও এ নিয়ে চিন্তিত।
সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দমন শাখা) মুরলীধর শর্মা একটি টুইটবার্তায় লেখেন, ‘প্রতারকরা জনসাধারণকে ঠকানোর নতুন উপায় বের করেছেন। ফোন বা মেসেজ করে বুস্টার ডোজ দরকার কি না, তা জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। উত্তর হ্যাঁ হলে একটি লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে এবং লিঙ্কটিতে ক্লিক করার পর ওটিপি চাওয়া হচ্ছে। আপনারা সতর্ক থাকুন, এটি আপনার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি চক্রান্ত। এ রকম ফোন বা মেসেজ এলে কোনো লিঙ্ক ডাউনলোড করবেন না এবং ওটিপি শেয়ার করবেন না।’
কিন্তু এত প্রচারেও যে কাজ হচ্ছে না, তা বুঝতে পারছে পুলিশ। প্রায় প্রতিদিনই একাধিক অভিযোগ জমা হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন থানায়। সেখান থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে মানুষের সচেতনতার অভাব। অন্যদিকে, জালিয়াত চক্র নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করে চলেছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানান, সবসময় কারা জালিয়াতি করছে, তা ধরা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো একটি নম্বর থেকে সাফল্য মিললেই সেই নম্বরটি আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে নম্বরগুলো ভিন্ন রাজ্যের।