ঢাকা, বুধবার ১ মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে শিরনী বিতরণ তিন’শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন মহল্লাবাসি

বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০১:১৯:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

শিরক-বেদাত এমনকি কুসংস্কার বলে সমাজ থেকে একে একে মোবারকপুর্ন কাজগুলোকে যখন বাঁধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তখন ঝিনাইদহ জেলা শহরের ব্যাপারীপাড়ায় শত শত বছর ধরে ‘শিরনী’ বিতরণের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন মহল্লাবাসি। প্রতি বছর দুই ঈদে ব্যাপারীপাড়ার একাধিক স্থানে শিরনী বিতরণ করা হচ্ছে। কোন ধরণের হৈ হুল্লোড় ও বিশৃংখলা ছাড়াই মহল্লার মুরব্বীদের তত্বাবধানে চলে ভাত ও গোস্ত বিতরণ। মহল্লার হতদরিদ্র পরিবার ছাড়াও অনেক সচ্ছল পরিবারও এই শিরনী নিয়ে থাকেন। ব্যাপারীপাড়ার এক’শ ঘর থেকে ভাত ও গোস্ত রান্না করে দরগাহ তলায় আনা হয় এবং সেগুলো সমান ভাবে বন্টন করা হয়। ঈদুল ফিতরের দিন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম মধুর নেতৃত্বে পাড়ার যুবকরা ব্যাপারীপাড়ার বটতলা ঈদগাহ মাঠে এই শিরনী বিতরণ করেন।
ব্যাপারীপাড়ার সবচে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি আনিচুর রহমান দফাদার জানান, মুলত তাদের পুর্বপুরুষরা শত শত বছর আগে এই শিরনী বিতরণ প্রথা চালু করে গেছেন। তিনি জানান, ব্যবসার জন্য তাদের পুর্বপুরুষরা ইরাক থেকে ঝিনাইদহে আসেন। ব্যবসার সুখ্যাতির কারণে এই পাড়ার নামকরণও ‘ব্যাপারীপাড়া’ হয় বলে তিনি জানান।
আনিচুর রহমান আরো জানান, তাঁর বড় ভাই আব্বাস উদ্দীন (রহঃ), পিতা. ফজের আলী দফাদার, দাদা হাজী তারণ আলী দফাদার, পরদাদা বদর উদ্দীন দফাদার ও উর্ধ্বতন পুরুষ আমির আলী দফাদারও এই শিরনী বিতরণের কাজ করে গেছেন। তাদের পুর্বপুরুষেরা প্রায় ৫/৭’শ বছর ঝিনাইদহে বসবাস করছেন এবং সবাই শিরনী বিতরণ করে গেছেন। তারাই মুলত এখানকার আদি বসতি বলে বৃদ্ধ আনিচুর রহমান জানান।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, পীরের উদ্দেশে নিবেদিত তৈরি খাদ্যকে শিরনী বলে। ‘শিরনী’ শব্দটি ফারসি। বাংলার মুসলিম সমাজে এটি ‘শিন্নি’ নামেও প্রচলিত। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বরকত ও পুণ্য লাভের আশায় আল্লাহ পাকের প্রতি নিবেদন করে শিরনী বিতরণ করা মুসলমান সমাজের একটি রেওয়াজ। মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, দরগাহ ও মাযার প্রভৃতি স্থানে মানুষ শিরনী বিতরণ করে এই উদ্দেশ্যে যে, এতে মহান আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট হয়ে তাদের বিপদ-আপদ ও রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করবেন। কাজের সফলতা ও উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যেও শিরনী করা হয়। শিরনী প্রথার প্রচলন ইসলামের প্রাথমিক যুগে না থাকলেও পীর ও সূফিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে এই প্রথার প্রচলন হয়। ২০/৩০ বছর আগেও গ্রামে গ্রামে শিরনী বিতরণ প্রথা চালু ছিল। বর্তমান যুগে শিরক-বেদাত এমনকি কুসংস্কার বলে কিছু মানুষ অপপ্রচার চালিয়ে গ্রামে গ্রামে পাড়া মহল্লায় শিরনী বিতরণ প্রথা রোধ করতে পারলেও ব্যাপারীপাড়া বটতলা ঈদগাহ মাঠে প্রায় তিন’শ বছর ধরে এই প্রথা চালু রয়েছে।