ঢাকা, রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

কলকলিঘাট মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সরদার আজিজু রহমান

এমএ রহিম, সিলেট: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৫ মে ২০২৩ ০৯:৪৬:০০ পূর্বাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন



১৩ এপ্রিল দুপুর একটার দিকে ভারতের কলকলিঘাট মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান। ওই ক্যাম্পটি ছিল ইয়ুথ ক্যাম্প।

দৈনিক বায়ান্নকে সরদার আজিজুর রহমান জানান, ওই ক্যাম্পে গিয়ে দেখলেন ৪০-৪৫ জন বাংলাদেশি যুবক। সকলের বয়স ২৫ বছরের নিচে। অধিকাংশই ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। ২-৩ জন পাওয়া গেছে তারা বয়সে তরুণ ও মেট্রিক লেবের ছাত্র। তাদের সবাইকে পরিচালনা করছিলেন ভারতীয় একজন সুবেদার। ওই সুবেদার আবদুল আজিজ (সম্ভাব্য নাম) সরদার আজিজ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সব জানালেন সুবেদার সাহেবকে। সব জেনে নাম ঠিকা লিপিবদ্ধ করলেন। সরদার আজিজের থাকার জন্যে পৃথক ব্যবস্থা করা হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই ইয়ুথ ক্যাম্পে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো না। এখানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। এই প্রশিক্ষণের মধ্যে ছিল শারীরিক। আত্মপক্ষকে কিভাবে নিরাপদ রাখতে হয় তার প্রশিক্ষণসহ মানসিক প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হলো। প্রতিদিনই চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। ভারত সরকার নিয়মিত খাবার সরবরাহ করতো ক্যাম্পটিতে। খাবারের মধ্যে ছিল চাল, আটা, সবজি, ডালডা, গুড়া দুধ ইত্যাদি। এসব খাবার ট্রাক্টরে করে পৌঁছে দেয়া হতো ওই ক্যাম্পটিতে। এভাবে প্রায় দেড় মাস কেটে যায়। ইতোমধ্যে ক্যাম্পটিতে আরো লোক জড়ো হয়। যার সংখ্যা হবে আড়াইশ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আজিজ জানান, দেড় মাস পর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি টিম ওই ক্যাম্পে আসে। ক্যাম্পের সকলকে খালি গায়ে মাঠের মধ্যে দাঁড় করায়।

সেনাবাহিনীর টিমের সদস্যরা সকলকে পরীক্ষা নিরিক্ষা করলেন বিভিন্নভাবে । পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে ৩-৪ জনকে অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করলেন। এদেরকে পাঠিয়ে দিলেন শরনার্থী ক্যাম্পে। লিখে নিলেন বাছাইকৃত সকলের নাম ঠিকানা।

তিনি বলেন, ৪-৫ দিন পর তিনটি বড় ট্রাক আসে ওই ক্যাম্পে। ট্রাকগুলো তেরপাল দিয়ে মোড়ানো ছিল। সাথে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫-৬ জন সদস্য। ক্যাম্পের সকলের নাম ধরে ডাকা শুরু হলো। প্রত্যেককে ট্রাকে তোলা হলো। ট্রাকে উঠে সবাই মেঝেতে বসে পড়লো। এর পরপরই তেরপাল দিয়ে পুরো ট্রাক মুড়িয়ে দেয়া হলো। যাতে কেউ পড়ে না যায়। তখন সকাল ১০ টা। সরদার আজিজও ছিলেন একটি গাড়িতে। গাড়ি চলতে শুরু করলো। ঝাকুনির কারণে তিনি বুঝতে পারলেন গাড়ি চলছে দুর্গম এলাকা দিয়ে। দুর্গম এলাকা হলেও গাড়ির গতি ছিল ক্ষীপ্র। দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে। অনেক সময় কেটে গেছে। কিন্তু গাড়ি থামানোর কোনো আলামত নেই। তীব্র ঝাকুনি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কারণে গাড়ির ভেতরের অনেক ছেলে প্রসাব, পায়খানা ও বমি করতে শুরু করেছে। এতে গাড়ির মেঝের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠে। অনেকে কাহিল হয়ে পড়েন। এক সময় গাড়ি থামে। তখন কারো মুখ থেকে কথা বেড় হচ্ছিল না। ঘড়িতে রাত তখন ৯ টা। সেখানে আরো ৫-৬টি গাড়ি এসে থামে। তেরপাল খুলে নেয়া হয় সব গাড়ির। সবাইকে ধরাধরি করে গাড়ি থেকে নামানো হয়। সরদার আজিজ দেখলেন পাথরের বোল্ডার দিয়ে তৈরি রাস্তার উপর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অবস্থান ছিল গহীন জঙ্গল। কয়েকটি দলে ভাগ করে সকলকে ৬-৭ মিনিটের পথ হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো একটি ছড়ার পাড়ে। ওই ছড়ায় বুক সমান পানি ছিল। নির্দেশ দেয়া হলো সবাইকে ওই ছড়ার পানিতে গোসল করার জন্যে। সবাই গোসল করলেন। গোসল শেষে ডাঙ্গায় উঠার পর সকলের হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি করে লুঙ্গি ও গামছা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিচালনা করছিলেন ওই কার্যক্রম।

সরদার আজিজ জানান, গোসল শেষে সকলকে ৫-৬ মিনিটের পথ হাটিয়ে নিয়ে যায় নতুন এক স্থানে। এই স্থানটি হচ্ছে লোয়ারবন ব্যারাক। সেখানে গিয়ে দেখলেন তেরপাল বিছানো রয়েছে। সবাইকে সারিবদ্ধভাবে বসতে বলা হলো। খাবার দেয়া হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে প্লেটে করে ভাত আর বাটিতে করে সবজি দেয়া হলো। খাবার শেষে সবাই ক্লান্ত দেহে ঘুমিয়ে পড়েন।