ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

ভুঁড়ি হাতে ভাইরাল কবিরের শঙ্কা সংসার নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৯ জুন ২০২২ ০৫:১৩:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রক্তাক্ত শরীর, বাম হাতে চাপ দিয়ে ধরে আছেন বেরিয়ে যাওয়া ভুঁড়ি। অন্য হাতের ৪টি আঙ্গুল উড়ে গেছে বিস্ফোরণে। সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের পর এমন বিভৎস ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  এমন অবস্থার ছবি দেখে যেকোনো মানুষই ধারণা করতে পারেন মানুষটির বাঁচার সম্ভাবনা কতটুকু। তারপরও চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় বেঁচে যান তিনি।  

বলছি ভুঁড়ি নিয়ে ভাইরাল হওয়া মো.কবিরের কথা। বাড়ি বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার চরফ্যাশনে। ঘটনার দিন নিজেই চলে এসেছেন চমেক হাসপাতালে। এমন অবস্থা দেখে দ্রুত নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। দুই দফা অপারেশন শেষে এখন চিকিৎসাধীন হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে।  

চিকিৎসকরা বলছেন, এমন প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তারপরও চেষ্টা করেছি তাকে বাঁচানোর, আল্লাহ রহমতে তিনি বর্তমানে ভালো আছেন।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের এমএস রেসিডেন্স ডা. সৈয়দ আফতাব উদ্দিন বলেন, সময়মতো না এলে রোগীকে বাঁচানো যেত না। তিনি যখন হাসপাতালে আসেন তখন বিপি নেমে যাচ্ছিল। প্রাথমিক অবস্থায় অস্ত্রোপচার করে অবস্থা স্থিতিশীল করি। পরের দিন দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেটে জোড়া লাগানো হয়।

এসময় ওই রোগীর চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন ডা. সিয়াম আহমেদ ও ডা. আমজাদ।  

তারা জানান, তখনও হাসপাতালে রোগীর ভিড় ছিল। আমরা চিকিৎসা দিতে প্রায় হিমশিম খাচ্ছিলাম। এ অবস্থায় এমন রোগী দেখে তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় লেগে পড়লাম। শেষ পর্যন্ত আমাদের চেষ্টায় বাঁচাতে পেরেছি। তবে বর্তমানে অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও আরও করেকদিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে তাঁকে।

ভাইরাল ছবির মতোই বিভৎস কষ্টের জীবন কবিরের। ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ ৬ সদস্যের সংসার তাঁর। কাজ করতেন শুঁটকি পল্লীতে। অর্ধাহারে অনাহারে কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পেতে বছর সাতেক আগে আসেন চট্টগ্রামে। তার এক বোন জামাইয়ের মাধ্যমে কাজ নেন বিএম ডিপোতে। কনটেইনারে করে আসার তুলা খালাসির কাজ করেন তিনি। নিজে চট্টগ্রাম থাকলেও স্ত্রী সন্তান থাকতেন ভোলায়। সংসারের দোটানায় শেষ পর্যন্ত স্ত্রী সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করেন ৫ বছর আগে।

প্রায় ৭ বছর ধরে এ কনটেইনার ডিপোতে কাজ করছেন তিনি। কখনো এমন ভয়ঙ্কর আগুন দেখেননি। আগুন লাগার পরও দূর থেকে দেখছিলেন অবস্থা। হঠাৎ বিস্ফোরণে এক খণ্ডাংশ এসে লাগে তাঁর পেটে। এতেই বেরিয়ে আসে ভুঁড়ি।

৫ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে অসুস্থ আর ছোট দুই মেয়ে পড়ছে স্কুলে। অন্য দুইজন থাকে বাড়িতেই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির এমন অবস্থায় কপালে চিন্তার ভাঁজ স্ত্রী তাসনূর বেগমের।

হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও সুস্থ হয়ে ফেরার পর কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়েই তার একমাত্র ভাবনা। সংসারের কথা উঠতেই তাসনুর বেগমের চোখের কোণে জল। কাপড়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে হঠাৎ কাঁদতে শুরু করলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার ৬ জনের সংসার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিই। আমার সন্তানরা এখনও ছোট। তিনি তো ভারি কাজ করতে পারবেন না। কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়েই আমার ভাবনা চিন্তা।  

হাসপাতালের চিকিৎসকরা ভালো করে চিকিৎসা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছি। সকলেই আন্তরিক, ওষুধপত্র ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। আল্লাহ’র রহমত আছে বলেই বেঁচে আছি।