ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ না হলেও তুলনামূলক ভালোটা চাই

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৩ মার্চ ২০২৪ ০১:৫৪:০০ অপরাহ্ন | সাহিত্য

ভেবেচিন্তে বলতে গেলে আমরা প্রতিদিন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে কি ঢুকাচ্ছি? আর খাদ্য চক্রের মাধ্যমে কি খাচ্ছি? ভেজাল আর ভেজালে আমাদের পেট সয়ে গেছে। এখন আসল আর নকলের পার্থক্য খুুঁজি না। কেউ নিজে থেকেই, কেউবা অপরের দেখাদেখি আবার কেউবা বাধ্য হয়েই কুখাদ্য খেয়ে চলছি। কুখাদ্য বলতে যা স্বাস্থ্যসম্মত বা মানসম্মত নয় এমন। জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত উপ-শহরের একজন মাংস ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান। তিনি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পঁচা-বাসি মাংসে আগে থেকে সংগৃহীত রক্ত বা কেমিকেল মিশিয়ে তাজা হিসেবে বিক্রিকালে স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এ অভিযোগ পেয়ে ওই দিনই সাংবাদিকরা প্রমাণসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। মিডিয়ার বদৌলতে সেদিন থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে হাফিজুর রহমান সাময়িক গা ঢাকা দেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি জামালপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরিফুল ইসলাম অভিযান পরিচালনা করেন। মাংস ব্যবসায়ী মজিবর রহমান তার দোকানে ডিজিটাল মিটার ব্যবহার না করে দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার করেন। তার বাটখারার ওজন কম থাকার কারণে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। সেই সাথে তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেন। এ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আসমাউল হুসনা দিগপাইত উপ-শহরের কলেজ রোড়ের শিমুল কসমেটিক্স এন্ড কনফেকশনারী দোকানে অভিযান চালান। ওই দোকানে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশী কসমেটিক্স রাখা ও বিক্রি করা হয়। এ কারণে তার কর্মচারী মঞ্জু মিয়ার নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। উল্লেখিত দুইদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে এ উপ-শহরের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দেন। এতে খুব সহজেই বোঝা যায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকটাই গলদ রয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা অনেকটাই সতর্ক হয়েছেন। একটি কথা না বললেই নয়। এ বিষয়ে দিগপাইত ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মাংস ব্যবসায়ীদের ডেকে সভা করেছেন। সভায় তিনি মাংস ব্যবসায়ীদেরকে বাহির থেকে মাংস আমদানি না করার নির্দেশ দেন। কোনক্রমেই নিস্তেজ, দুর্বল, অসুস্থ ও বুড়া গাই গরু জবাই করা চলবে না। প্রয়োজনে ষাঁড় ও বলদ গরুর সাথে বকনা গরু চলবে। চাহিদা মোতাবেক প্রতিদিন গরু/পশু জবাইয়ের পূর্বে তার নির্ধারিত ব্যক্তি (ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা/চৌকিদার) কে দেখাতে হবে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি গরু বা পশু দেখে দেড়শ টাকার রশিদসহ সীল/তারিখ দিয়ে দিবে। ছোট ব্যবসায়ীরা ইউনিয়ন পরিষদের সীলকৃত পশুর মাংস ছাড়া অন্য কোন মাংস (বিনা রশিদে) সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারবে না। এতে ইউনিয়নবাসীসহ আশেপাশের এলাকার গ্রাহকরা একটু খুশিই হয়েছেন। গ্রাহকদের মধ্যে এমনও আলোচনা-সমালোচনা শুনা যাচ্ছে যে, চেয়ারম্যান মহোদয় যদি ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা/চৌকিদারকে এ দায়িত্ব না দিয়ে কোন একজন পশু চিকিৎসককে দায়িত্ব দিতেন তাহলে সবচেয়ে ভালো না হলেও তুলনামূলক ভালো হতো। কারণ- আমরা বাঙালিরা আর কিছু পারি আর না পারি অন্যের সমালোচনা ঠিকই করতে পারি। আশা করি চেয়ারম্যান মহোদয় গ্রাহকদের এ ইচ্ছে টুকু পূরণ করে বাধিত করবেন। মনে হয় না যে, তার পক্ষে এটা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন হবে। সম্ভবত এ বিষয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাকে সহযোগিতাও করবেন। তবে যাই হোক- রোজার মাস এলেই মজুদদারি, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরীদের যেন পোয়াবারো। তারা তাদের অপতৎপরতায় সদা সচেতন। চলছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। প্রত্যেকটি মুসলমান ভাইবোন রোজা রাখার চেষ্টা করেন। সাধ্যমত সবাই অপেক্ষাকৃত ভালো খাবার খাওয়ারও চেষ্টা করেন। তাই রোজাদাররা যাতে পবিত্র ও স্বাস্থ্যকর এবং মানসম্মত খাবার খেতে পারেন এ কথা মাথায় রাখা দরকার। রোজার মাসের পবিত্রতা রক্ষার্থে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক। এটাই সচেতন মহলের কাম্য।

 

কামরুল হাসান:

(লেখক: সাংবাদিক ও ডিরেক্টর- বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা এবং সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা)