ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

কি কি ছিলো ৯০ দশকে; কি কি দেখবে না আগামী প্রজন্ম!

আরফান আলী : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:০৫:০০ অপরাহ্ন | সাহিত্য
সময় চিরবহমান। টাকা পয়সা, ধনসম্পদ হারিয়ে গেলে কোনো না কোনো উপায়ে ফিরে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু একবার গত হওয়া সময় হাজার চেষ্টা করেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে বিশ্ব, পরিবর্তন হচ্ছে সভ্যতা। বিজ্ঞানের আধুনিকতার ছোয়ায় বিলিন হচ্ছে প্রাচীন জিনিসপত্র ও খেলনা জিনিস।
যাদের জন্ম ১৯৯০ থেকে ২০০৫ এর মধ্যে হয়েছে তারা যা দেখেছে আগামী প্রজন্ম তা দেখবে না। শুধু বাবা দাদার মূখে গল্পই শুনতে পারবে।
চলুন জেনে নেই কী কী ছিলো নব্বইয়ের দশকে:
 
কুয়া: যখন আদিম মানুষ নদীর কাছ থেকে এসে নদনদীর সীমানার বাইরে সমতল ভূমিতে ঘর বেধে বসবাস শুরু করে তখন দূর থেকে পানি আনতে কষ্ট হয়। পরে তারা মাটি খুড়ে তলদেশ পর্যন্ত, এরপর বেরিয়ে আসে পানি। এর পরের প্রজন্মে মানুষ সেই গর্তটিকে ইট ও সিমেন্টের তৈরি স্লাপ দিয়ে একের পর এক বসিয়ে উপরে নিয়ে আসে যেন চারদিক থেকে মাটি পড়ে গর্ত মুড়ে না যায়। এর নামই হলো কুয়া। কুয়া থেকেই পানি উত্তলন করতো নব্বই দশকের মানুষ। এখন কুয়া দেখাই যায় না। বর্তমানে টিউবওয়েল বা বৈদ্যুতিক মটর দিয়ে পানি উত্তলন করা হয়। 
 
গরু ও লাঙল দিয়ে হালচাষ : আগেকার দিনে হালচাষ করতো কোদাল দিয়ে। এরপর কৃষকরা ব্যবহার করতে শুরু করলো একজোড়া গরু, লাঙল ও জোয়াল দিয়ে। তখনকার সময়ে দেখা যেত ফজরের আযানের আগেই একজোড়া গরু হাতে এবং কাধে লাঙল ও জোয়াল নিয়ে গ্রামের মেঠো পথ ধরে অন্য গ্রামে গিয়ে হালচাষ শুরু করে। সকাল সকাল বাড়ির গৃহিণী রান্নাবান্না শেষ করেই পাঠিয়ে দিতো কৃষকের কাছে। খাবার শেষ করে আবার শুরু করে হালচাষ। এভাবে দুপুর পর্যন্ত (অনেকেই সন্ধ্যা পর্যন্ত) চালাতো। বর্তমানে এরকম চিত্র দেখায় যায় না। ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে এখন কৃষি জমি চাষ করা হয়। 
 
হুকা: নারিকেলের আচ্চি (খোল) এবং কাঠ বা বাশ দিয়ে বানানো হতো হুকা। এই হুকা দিয়েই আগের মানুষ ধুমপান করতো। হুকার আগায় তামাক, আগুনসহ ছাই। এবং হুকার নিচে নারিকেলের খোলে দিতো পানি। এরপর মুখ লাগিয়ে ধুমপান করতো।
আগের দিনে দেখা যেতো কৃষক ক্ষেতে গরু দিয়ে হালচাষ করতো, ধুমপানের নেশা হলেই ক্ষেত থেকে জুড়ে হাক ছাড়তো, এরপর তার গিন্নি (স্ত্রী) হুকা সাজিয়ে নিয়ে যেতো। হাল ছেড়ে ক্ষেতের আইলে বসে হুকা টানতো আর কাশি দিতো। এমনি দৃশ্য দেখা দিতো শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার নবীনগর গ্রামের তমিজউদদীনের বাড়িতে এবং মৃত বাহাজউদ্দীনের ছেলে শরাফত মিয়ার বাড়িতে।
 
সাদাকালো টেলিভিশন (টিভি) : বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিস্কৃত রঙিন টিভি আবিষ্কারের পর থেকেই অকেজো সাদাকালো টেলিভিশন। সাদাকালো টেলিভিশন আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে নানা কৌতুহল সৃষ্টি হয় মানুষের মনে। এটি ছিলো একমাত্র বিনোদন মাধ্যম। আগেকার দিনে বিটিভি চ্যানেলে প্রতি শুক্রবার (ছুটির দিনে) বিকেল ৩টায় বাংলা ছায়াছবি অনুষ্ঠিত হতো। সিনেমা দেখার জন্য বিকেল ২টার দিকেই সব কাজ শেষ করে টিভির সামনে বসতো ছোট বড় সবাই। কখন ৩টা বাজবে!
তখন টিভি চালানো হতো ব্যাটারি দিয়ে। সপ্তাহে ১দিন দূরের বাজার থেকে সাইকেল দিয়ে চার্জ করে আনতো। আহ! কত রঙিন ছিলো তখনকার সময়। বর্তমানে মানুষ স্মার্ট ফোনে একা একা বিনোদন নিচ্ছে। আগেকার দিনে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে সাদাকালো টিভি দেখতো। তখনকার সময়ে জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন রাজ্জাক, আলমগীর, সালমান শাহ, মান্না। নায়িকাদের মধ্যে ছিলেন শাবানা, মৌসুমি, শাবনুর, পপি ও পূর্ণিমা। 
 
বেয়ারিং গাড়ি: বিভিন্ন গাড়ির চাকা বা মেশিনে বেয়ারিং ব্যবহৃত হয়। যখন এটার মেয়াদ শেষ হয় তখন খুলে রাখা হয়। এই পরিত্যক্ত বেয়ারিং দিয়ে আগেকার দিনের ছেলেরা কাঠ বাশ দিয়ে ও তিনটি বেয়ারিং দিয়ে গাড়ি তৈরি করতো। একজন গাড়িতে বসতো অন্যজন পিছনে বসে ধাক্কা দিতো। এইভাবে গ্রামের পথে পথে ঘুরে বেড়াতো। বর্তমানে তা দেখা যায় না। এখনকার ছেলেপেলেরা স্মার্ট ফোনে আসক্ত হওয়ায় এগুলো খেলা খেলে না। তারা শুধু ভিডিও গেইমস, পাবজি- ফ্রিয়ার ফায়ার খেলায় ব্যস্ত।
 
বৌ-ছি, কানামাছি ও গোল্লাছুট খেলা: আগে ফোন ছিলো না তাই মাঠেঘাটে ছেলেপেলের অভাব ছিলো না। বিকেল নামলেই জায়গায় জায়গায় ছুটাছুটি করতো এলাকার শিশুকিশোর। একেকদলে একেকটা খেলায় ব্যস্ত থাকতো। কেউ বৌ-ছি কেউ গোল্লাছুট কেউ বা কানামাছি খেলতো। আসুন জেনে নেই কিভাবে কোন নিয়মে এগুলো খেলা হতো:-
বৌ-ছি : ‘‘ছেলেমেয়েরা দুই দলে ভাগ হতো। টস করে যাদের নাম উঠতো তারা আগে ছি (দম) দিতো। তাদের দল থেকে একজনকে কয়েক ফুট দূরে গোল দাগ দিয়ে বউ বানাইয়ে রেখে বাকি খেলোয়াড়রা ছি দিতো। দৌড়াতে দৌড়াতে এক দমে কিছু ছন্দ বলতো আর অন্যদলের খেলোয়াড়দের দৌড়ানি দিতো। এই সুযোগে বউ তাদের বাকি খেলোয়াড়রা যেখানে জড়ো হইয়ে আছে সেখানে যেতো’’
 
গোল্লাছুট :“বৌ-ছি খেলার মতো দুইটি দল থাকতো। এক দল গোল দাগের মধ্য থেকে কোনো দম ছাড়াই দৌড়াইয়ে অন্য প্রান্তে যাওয়ার চেষ্টা করতো। এদের মধ্যে একজনকে গোল্লা রাখা হতো। যদি দৌড়ানির সময় অন্য দলের খেলোয়াড় ছুতে পারে তাহলে ওই খেলোয়াড় মরা বলে গণ্য করা হয়।”
 
কানামাছি : “এই খেলায় একজনের চোখ বেধে অন্যরা তার আসেপাশেই থাকবে। যদি অন্য কাউকে ধরতে পারে তখন তাকে চোখ খোলে যাকে ধরবে তাকে চোখ বেধে দেওয়া হয়। এভাবেই কানামাছি খেলা হতো”
 
নব্বই দশকের মানুষ যা যা করেছে বা দেখেছে বর্তমান প্রজন্ম বা আগামী প্রজন্ম তা করতে হইতো পারবে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সভ্যতা পরিবর্তন হচ্ছে। এখন যা দেখা যাচ্ছে হইতো আগামী প্রজন্মে আরও উন্নত কিছু দেখবে। আগামী প্রজন্ম যা দেখবে তার পরের প্রজন্ম হইতো তাদের থেকেও উন্নত কিছু দেখবে।