ঢাকা, মঙ্গলবার ৭ মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার চাই

মমিনুল ইসলাম মোল্লা | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৭ জুন ২০২৩ ০৪:৫৬:০০ অপরাহ্ন | মতামত
 
 
আরও একটি প্রাণ ঝরলো। আবার ও সাংবাদিক এর রক্তে
রঞ্জিত হলো দেশ। 
১৪জুন অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন গোলাম রাব্বানী নাদিম ও তার সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। পথে বকশিগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে সামনে থেকে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর
করে। পরবর্তীতে হাসপাতালে মারা যান। গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরে নাদিমসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহামুদুল আলম বাবু। ১৪ জুন মামলাটি খারিজ করেন আদালত।
 
নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই হামলা করে আমার স্বামীকে হত্যা করেছেন। নাদিম হত্যার প্রতিবাদ ওয়াও ন্যায় সংগত বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের দেশব্যাপ কর্মসূচি চলছে। আমরাও নাদিম হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড-নির্যাতনের দায়মুক্তি দিবসে ইউনেস্কো প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২০-২০২১ সময়কালে বিশ্বব্যাপী সংঘটিত ঘটনাবলীর আলোকে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই সময়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ১১৭ জন সাংবাদিক। ৯১ জন কাজের বাইরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।’
বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিচার হয় না।দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, মামলা, হুমকি ও পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাধার শিকার হয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট এর গবেষনা অনুযায়ী ১৯৯৬ থেকে বাংলাদেশে পেশাগত কারণে ১২সাংবাদিক খুন হয়েছেন।এরা সকলেই রাজধানীর বাইরে কর্মরত ছিলেন।ঢাকায় খুন হওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেনঃ সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রী রহিমা খানম, (২৮ জানুয়ারি২০১১) এনটিভির ভিাডও এডিটর আতিকুর রহমান(০৯) কেরানীগঞ্জের দি নিউ এজের সাংবাদিক আঃ লতিফ পাপ্পু (২ মার্চ০৪) সাংবাদিক আলতাফ হোসেন সাপ্তাহিক বজ্রকণ্ঠ, (৭ এপ্রিল১১) ও সাগর –রুনি ।(১১ ফেব্রæয়ারি ১২)।সাংবাদিকদের জন্য মৃত্যুভ্যালী খুলনা।খুলনায় নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে ডুমুরিয়া, খুলনার দৈনিক অনির্বাণের প্রতিনিধি নহর আলী, একই যায়গার শুকর আলী, দৈনিক পুর্বাঞ্চলের সিনিয়র রিপোর্টার হারুন আল রশিদ, (২ মার্চ ০২) দৈনিক সংগ্রামের খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো চফি বেলাল হোসেন, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবির বালু (২৭ জুন০৪) খুলনা ব্যুরো চীফ মানিক সাহা (১৫ ফেব্রæয়ারি০৪)।এছাড়া সন্ত্রাসীরা অপহরন করে চিরদিনের মত নিখোঁজ করে দিয়েছে খুলনার ডুমুরিয়ার সাংবাদিক সরদার শুকুর হোসেনকে, ।তিনি ৫ জুলাই ০২ নিখোঁজ হন।এভাবে হারিয়ে যান চুয়াডাঙ্গার দিন বদলের কাগজের বজলুর রহমান (১২ জুন ৯৬)।এছাড়া সন্ত্রাসীদের কোপনলে প্রাণ দিয়েছেন বরিশালের মুলাদি প্রেসক্লাবের সভাপতি সফিকুল ইসলাম টুটুল (২৩ ডিসেম্বর০৯),গাজীপুরের সাম্প্রতিক সময়ের সাংবাদিক এস এম আহসান হাবিব বারী, (আগস্ট০৯ ),নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জের ইনকিলাব প্রতিনিধি আবুল হাসান আসিফ(ডিসেম্বর ০৯) , সিলেটের সাপ্তাহিক ২০০০ প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানী , (২৮ এপ্রিল১০)বরিশালের মুলাদীর মনির হোসেন বারী ( ২৩ ডিসেম্বর১০)।
এছাড়া ৭ ডিসেম্বর ১১ গাইবান্ধার দৈনিক ভোরের ডাকের জেলা প্রতিনিধি ফরিদুল ইসলাম রঞ্জু নিহত হন, ৭ এপ্রিল ১১, চট্টগ্রামের দৈনিক আজকের প্রত্যাশার প্রতিনিধি মাহবুব টুটুল নিহত হন।সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক মোঃ আলা উদ্দিন নিহত হন ১৯৯৬ সালে, একই সময়ে নিহত হন ঝিনাইদহ জেলার ইলিয়াস হোসেন দিলিপ, ৯৬ সালেই খুন হন নীলফামারীরর কামরুজ্জামান, ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম খুন হন ৬ জুলই ৯৮ । সুত্রে জানা যায়, ২০০০সালে নিহত হন মীর ইলিয়াস হোসেন (ঝিনাইদহ), ১৬ জুলাই ২০০০ খুন করা হয় দৈনিক জনকণ্ঠ প্রতিনিধি সামছুর রহমানকে (যশোর), ২ অক্টোবর০৪ নিহত হন বগুড়ার দুর্জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক দিপঙ্কও চক্রবর্তী, ১৭ নভেম্বর০৫ খুন হন দৈনিক সমকালের ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান গৌতুম দাস।এছাড়া ২৯ সেপ্টেম্বর নিজ বাসায় খুন হন কুমিল্লা নিবাসী দৈনিক কুমিল্লা মুক্তকণ্ঠের সম্পাদক গোলাম মাহফুজ।এছাড়া আমরা হারিয়েছি দেনিক স্ফুলিঙ্গের আঃ গাফ্ফার চৌধুরি (৯৪) , মোঃ কামাল হোসেন,পাক্ষিক মুক্তমনের সাটাফ রিপোর্টার নুরুল ইসলাম ওরফে রানা ( আগস্ট ০৯) শফিকুল ইসলাম টুটুটল (১০) বীর দর্পণের সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন দিলিপ(জানু২০০০)।
সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়ার পেছনে দায়ী কারণগুলো হচ্ছেঃ তদন্তকাজে ধীরগতি , চার্জশীট প্রদানে বিল¤ব , তদন্তের নামে কালক্ষেপন, মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, মূল আসামীকে পাশ কাটিয়ে চার্জশীট প্রদান, দুর্বল অভিযোগ উত্থাপন, ও চার্জশীটভূক্ত আসামীদের গ্রেফতার না করা। এছাড়া বাদীকে হুমকি প্রদান ও নি¤œ আদালতের দীর্ঘসূত্রীতার কথা উল্লেখ করা যায়।আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাব, বিবাদী পক্ষ শক্তিশালী হওয়ায় কেউ সহজে সাক্ষ্য দিতে চায় না।ফলে আসামীরা সহজে ছাড়া পেয়ে যায়।সমপ্রতি দুটি হত্যা মামলার আসামীরা বেকসুর খালাস পায়।নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যগণ জানান, সাংবাদিক সমাজ ছাড়া অন্য কোথাও আমাদের যাওয়ার যায়গা নেই।কিন্তু তারা যদি সহকর্মীদের খুনিদের বিচার না চেয়ে বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে তাহলে আমরা কখনোই ন্যায় বিচার পাব না।