চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৫নং বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরাশঙ্খ খালে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হওয়া দেশের সর্বপ্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যামে আনোয়ারার কৃষি ক্ষ্যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বেরিবাঁধ আর স্লুইচগেইট ভাঙ্গনের ফলে এলিভেটর ড্যামের উল্লেখযোগ্য সুফল মেলেনি বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,ড্যামটি নির্মাণের ফলে আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলধর, বটতলী, চাতুরী ও সদর ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণসহ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ মে.টন বাড়তি ফসল উৎপাদন হওয়ার কথা যার বাজার মূল্য প্রায় ২৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। তাছাড়া শুকনো মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মে মাসে) জোয়ারের সাথে আগত লোনা পানির প্রভাব থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকার ফসল ও গাছপালা রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং আনোয়ারা উপজেলায় কৃষি উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
তবে, গত ৩বছরের কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,২০১৯ সালে আউশ ধান রোপন করা হয়েছিলো ১হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে এবং সে মৌসুমে আউশের ফসল উৎপাদন হয় ৩হাজার ৫৬৫ মেক্ট্রিক টন। পরবর্তী বছর ২০২০ সালে আউশ রোপনে করা হয়েছিলো ৩হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে এবং সে মৌসুমে আউশের ফসল উৎপাদন হয় ৯হাজার ৬৩২ মেক্ট্রিক টন। একই বছরের ১১ অক্টোবর এলিভেটর ড্যাম চালু হওয়ার পর ২০২১ সালে ৩হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে আউশ রোপন করা হয় এবং এই মৌসুমে আউশের ফলন হয় ৬হাজার ৮১৫ মেক্ট্রিক টন যা এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করার পূর্ব সময়ের চেয়ে কম।
২০১৯ সালে আমন রোপনে করা হয়েছিলো ৬হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে এবং সে মৌসুমে আমন ফসল উৎপাদন হয় ১৯হাজার ১৯৪ মেক্ট্রিক টন। পরবর্তী বছর ২০২০ সালে আমন রোপনে করা হয়েছিলো ৭হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে এবং সে মৌসুমে আমন ফসল উৎপাদন হয় ২১হাজার ৩৮৭ মেক্ট্রিক টন। একই বছরের ১১ অক্টোবর এলিভেটর ড্যাম চালু হওয়ার পর ২০২১ সালে ৭হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে আমন রোপন করা হয় যা বিগত বছরের গুলোর তুলনায় তেমন একটা বেশি না।
অপরদিকে বোরো মৌসুমে এলিভেটর ড্যাম চালু করার পূর্বে ২০১৯ সালে ৬হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হলেও এলিভেটর ড্যাম চালু হওয়া পর তা কমে ৫হাজার ৫০০ হেক্টরে নেমে এসেছে। আর উৎপাদন নেমে এসেছে ২৪হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন থেকে ২২হাজার ১০৬ মেট্রিক টনে।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষিকর্তা রমজান আলী বলেন,মাত্র কয়েকমাস হলো আমি এই উপজেলায় আসলাম এখানকার এলিভেটর ড্যাম এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে তেমন ধারণা হয়ে উঠেনি। সরেজমিনে গিয়ে তিনি বিষয়টি তদন্ত করবেন বলেও জানান।
এলিভেটর ড্যামের উপসহকারী প্রকৌশলী আজমানুর বলেন,যে ভরাশঙ্খ খালে ড্রেমটি নির্মাণ করা হয়েছে সেই খালটির উৎস হচ্ছে মুরলী খাল। যেদিক দিয়ে আসতো মিঠা পানি আর বিপরীত দিক দিয়ে বঙ্গোপসাগর,সাঙ্গু থেকে আসতো লোনা পানি। তাই ড্রেমটির টার্গেট হয়েছিলো লোনা পানি আটকে দেওয়া আর মিঠা পানি সংরক্ষণ করা। উপজেলার উত্তর পাশে নয়া রাস্তার মাথায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো)র বেরিবাঁধ দেওয়া হয়েছে। বেরিবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয়ে পাউবো পানি ছাড়েনি যার কারণে মিঠা পানি ভরাশঙ্খ খালে পৌঁছতে পারেনি তাই চাষাবাদে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার ইউএনও একটা কমিটি করেছে যার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সময় সময় স্লুইস গেইট খুলে পানি আসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এবং মিঠা পানি পাওয়া গেলে চাষাবাদ বৃদ্ধি হবে।