চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রয় করা মিথ্যা চান্দা/পিরানহা মাছ থেকে সাবধান। চট্টগ্রাম নগরের বাজারসহ গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে, রূপচাঁদা মাছ হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর পিরানহা মাছ। এই মাছটি চিনার উপায় হল, এদের সামনের দাঁত অবিকল মানুষের মতো। এই মাছ মূলত মাংসাশী শ্রেণির। এ পিরানহা মাছ সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি ব্ল্যাক বেলি পিরানহা(কালো পেটওয়ালা) ও আরেকটি রেড বেলি পিরানহা (লাল পেটওয়ালা)। এ মাছের প্রধান আবাসস্থল দক্ষিণ আমেরিক, ব্রাজিলসহ আমাজন অঞ্চলে। এক সমীক্ষায় জানা যায়, এই মাছ খেলে ফুসফুস ক্যানসার, ব্রেন ক্যানসার, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগ শরীরে দানা বাঁধে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা এই মাছকে দুই তিন নামে বিক্রয় করে থাকে। এক এক বাজারে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে বিক্রি করতে দেখা যায়। কখনো রূপচাঁদা মাছ, বা কখনো চান্দা মাছ, আবার চাঁদা মাছ বলেন।
এই মাছ কোথা থেকে আসে জিজ্ঞেস করলে রাউজানের এক মৎস্য ব্যবসায়ী জাফর আলি বলেন, এই মাছ পুকুর থেকে এনেছি। অন্যান্য মাছের তুলনায় প্রতি কেজি অনেক কম মূল্য বিক্রি হয় এবং স্বাদ একটু বেশি থাকার কারণে সাধারণ মানুষের পছন্দ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় এই মাছ বিক্রি করি। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা পিরানহা মাছকে সামুদ্রিক রূপচাঁদা মাছ হিসেবেই বিক্রয় করে থাকেন। অনেক সময় গ্রাামে ভেনগাড়ি করেও মৎস্য হকাররা বিক্রি করেন। এখন দেশের মধ্য অনেক মৎস্য ব্যবসায়ীও এই মাছ চাষ করছেন। নিজের পুকুরে পিরানহা মাছ চাষ করেন রাঙ্গুনিয়ার রফিক হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, এ মাছ একটি হিংস্র এবং রাক্ষুসে মাছ। তিনি ২ বছর ধরে নিজের পুকুরে এই মাছ চাষ করেন, এখন তার পুকুরে এই মাছ ছাড়া আর কোনো মাছ নাই, এই পিরানহা মাছ অন্য সব মাছ খেয়ে ফেলে। যে জলে এই মাছ হয়, সেখানে নামলে সবোর্চ্চ ১৪-১৫ মিনিট সময় লাগে একজন আস্ত মানুষকে হজম করতে। এই মাছ কী করে ধরে জিজ্ঞেস করতে রফিক হোসেন বলেন, এই মাছগুলি ধরতে ও মারতে পুকুরে তীব্রমাত্রায় বিষ প্রয়োগ করতে হয়।
জানা যায়, সারা বিশ্বে মানুষখেকো মাছ হিসেবে পরিচিত পিরানহা মাছের মানুষের প্রথম আঘাতের স্থান হচ্ছে পায়ের আঙ্গুল। তিন ধরনের শব্দ উৎপন্ন করার মাধ্যমে এদের নিজস্ব একটি ভাষা আছে। জলাশয় বা নদীর অন্যান্য মাছ সমূলে ধ্বংস করে। ক্ষুধার্ত সময় এক পিরানহা আরেক পিরানহা মাছকেও খেয়ে থাকে। ধারালো দাঁত আর প্রায় মানুষের মতো জিহ্বা থাকার কারণে সে তার লক্ষ্যবস্তুতে শরীরের ১০ গুণ বেশি শক্তিতে কামড় দিতে সক্ষম। ৩০টি পিরানহা মাছ একটি হরিণকে খেতে সময় নেয় মাত্র ৫-৭ মিনিট। এ মাছের এমন কিছু বিষক্রয়া আছে যা আমাদের পাকস্থলী বিনষ্ট করার প্রধান হাতিয়ার। ১ বোতল অ্যালকোহলের চাইতেও এ মাছের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি অংশ বেশি ক্ষতিকর। পিরানহা মাছের চর্বি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। এ মাছে থাকে ফসফেট আমাদের মূত্র প্রদাহ সৃষ্টি করে, নববিবাহিতা নারীর বন্ধ্যত্ব সৃষ্টির থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও রক্ত বের করে দেয়। এই মাছ খেলে ফুসফুস ক্যানসার, ব্রেন ক্যানসার, স্ট্রোক, মানসিক সমস্যাসহ মানুষের দেহে ইত্যাদি রোগ শরীরে সৃষ্টি করে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানী বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এই মাছটি মাংশাসী এবং শিকারী জাতের মাছ। এটা আমাদের দেশে কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা ছড়িয়ে যাচ্ছে। জলজ জীচবৈচিত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যার কারনে বাংলাদেশ সরকার প্রজ্ঞাপন জারী করে এই মাছটি নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে।