ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঈদের আমেজে করটিয়া হাট এখন বেচাকেনায় জমজমাট

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৬ এপ্রিল ২০২২ ১০:৪২:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

২০০ বছরের ঐতিহ্য বুকে ধারণ করে দেশের বৃহত্তম কাপড়ের হাটগুলোর মাঝে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে টাঙ্গাইলের করটিয়া হাট। জাতীয় অর্থনীতিতে অন্যতম অবদানকারী একটি বাজার হলো “করটিয়ার হাট”। “চমচম, কাঁসারবাসন ও শাড়ি এই তিনে টাঙ্গাইলে বাড়ি।” শুধু কথিত নয় বাস্তবেও তাই। বহু অতীত ঐহিত্য আর বাংলার চির পরিচিত লোক-সংস্কৃতি ইতিহাসে ক্রমধারার উত্তরাধিকারী টাঙ্গাইলের শাড়ি। প্রাচীনকাল থেকে টাঙ্গাইলের দক্ষ কারিগররা তাদের বংশ পরস্পরায় তৈরি করছেন নানা জাতের কাপড়। আর তাঁত শিল্পের বাণিজ্যমেলা বসে ঐতিহ্যবাহী করটিয়া হাটে। 

জানা যায়, আঁটিয়ার চাঁদ খ্যাত দানবীর ওয়াজেদ আলী খান পন্নী চাঁদ মিয়ার স্মৃতি বিজরিত করটিয়ায় অবস্থিত দেশের একটি প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন ও বৃহৎ করটিয়া হাট। দেশের প্রায় সকল জেলা থেকে ব্যবসায়ী, পাইকারী কাপড় ক্রয় ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। বৃহৎ হাটটিতে যেমন টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির সমাহার লক্ষ্য করা যায়। তেমনি দেশের অন্যান্য নাম করা অঞ্চলের তৈরিকৃত প্রিন্টের বিভিন্ন প্রকার শাড়ি ও থ্রিপিস পাওয়া যায়। এছাড়াও হাটে থান কাপড়, শার্ট, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবীর কাপড়, ছাপা কাপড়, গামছা, উড়না, তোয়ালে ও লুঙ্গির বেচাকেনা চোখে পড়ার মতো। বৃহৎ কাপড়ের হাটের সাথে জড়িত লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা। প্রায় দুই বছর মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে তাঁত শিল্পের মারান্তক ক্ষতিসাধন হয়েছে। তাঁত শিল্পের বাজার মন্দা কারণে অনেক তাঁতীরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। যা থেকে উঠে দাঁড়াতে তাঁতীরা এবারের ঈদে জমজমাট ব্যবসা করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া চেষ্টায় আছে। টাঙ্গাইল শহর থেকে এই হাটটির দূরন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে অবস্থান করায় হাট থেকে পরিবহনে যাতায়াত খুবই সহজ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করটিয়া হাট সপ্তাহে দুইদিন মঙ্গলবার ও বুধবার বসে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে শুরু হয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত চলে পাইকারী বেচাকেনা। বৃহস্পতিবার চলে খুচরা বেচাকেনা। এদিন খুচরা কাপড়ের সাথে চলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বেচাকেনা। পাইকারী ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্ধেক দামে শাড়ি কাপড় কেনা যায়। কিন্তু খুচরা বিক্রয়ের সময় শাড়ি কাপড়ের দামটা তখন বেড়ে যায়। 

হাটটি প্রায় ৪৫ একর জমিতে অবস্থিত। হাজার ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করছে। শাড়ি ছাড়াও হাটিতে শালের জন্য বিখ্যাত। অনেক জেলার কারিগরদের দ্বারা তৈরি শালটি এখান থেকে দেশ-বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এখানে টাঙ্গাইলের মুদ্রিত শাড়িও পাওয়া যায়। শাড়িগুলি পাথরাইল, কালিহাতীর বল্লা, রামপুর, এনায়েতপুর, নরসিংদীর বাবুর হাট, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, ঢাকার ইসলামপুর প্রভৃতি থেকে পাওয়া যায়। এই হাটটির বিভিন্ন নকশাযুক্ত এবং রঙিন শাড়ি শহরের মেগা শপিং মলেও এখন পাওয়া যায়।  হাটটি বিখ্যাত হলেও হাটের মূল সমস্যা ঘন ঘন লোডশেডিং। 

পাবনা জেলার ফরিদপুর এলাকার কাপড় ব্যবসায়ীরা বলেন, দুই বছর করোনার কারণে কাপড়ের ব্যবসা করতে পারি নাই। সুতার দাম বেশি মুজুরি বেশি। তবুও আমরা কাপড়ের জাত ব্যবসায়ী। এসব করেই আমাদের জীবিকা অর্জন করতে হয়। আমরা এবার চেষ্টায় আছি কাপড় বিক্রি করে লাভ কিভাবে করা যায়। 

জামালপুর জেলা থেকে আগত ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী কবীর সরকার বলেন, সুতার দাম বৃদ্ধির কারণে কাপড়ের দাম প্রতি পিসে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হলো। কিছু করার নাই এভাবেই চলতে হবে। 

আরেক ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিং ছাড়াও বৃষ্টি বাদলের দিনে আমাদের থাকা খাওয়ার সমস্যা হয়। হাটে চলাচলের রাস্তা সুরু। এ বিষয়ে দেখার যেন কেউ নেই। 

এ ব্যাপারে করটিয়া হাট কমিটির সভাপতি শাহজাহান আনছারী বলেন, পুরাতন হাটের অনেক সমস্যা আছে। হাটের পরিধিও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। হাটের সার্বিক উন্নয়নে কমিটির পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে।