ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, আলোচনায় যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৭ জানুয়ারী ২০২৩ ১০:২৬:০০ অপরাহ্ন | আইন-আদালত

সামনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই মানুষের মধ্যে জানার আগ্রহ বাড়ছে- এই পদে আওয়ামী লীগ কাকে চাইছে, কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। গেল এক দেড় মাস আগে থেকে প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ আলোচনা শুরু হলেও তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক সীমানা পেরিয়ে এই আলোচনা এখন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে মুখে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকলে জাতীয় সংসদে ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে।  

আগামী ২৪ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি  মো. আবদুল হামিদের এই পদে থাকার মেয়াদ শেষ হবে। তবে এই পদে এবারও ভোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেবে- তা প্রায় নিশ্চিত।

জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দলগুলোর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাছাড়া এই দলগুলোর আসনসংখ্যাও খুবই কম। প্রার্থী দিলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটে জেতার সম্ভাবনা নেই।  

আওয়ামী লীগ যাকে প্রার্থী করবে, তিনিই হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি- এটা প্রায় নিশ্চিত। আর এ কারণেই রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ কাকে প্রার্থী করবে বা মনোনয়ন দেবে সেটি নিয়েই আলোচনা চলছে।  

গত কয়েক দিন ধরে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে দুটি নাম ব্যাপক আলোচিত। বার বার ঘুরে ফিরে নাম দুটিই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতি সচেতন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। এদের একজন হলেন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

যদি একাধিক প্রার্থী থাকেন, সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ সদস্যরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৯১ সালের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর ওই সংসদেই একবার রাষ্ট্রপতি পদে দুই জন প্রার্থী থাকায় সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন। এরপর আর কোনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী দেখা যায়নি। আর তাই ভোটেরও প্রয়োজন পড়েনি। ক্ষমতাসীন দল যাকে প্রার্থী করেছে তিনিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সংবিধান অনুযায়ী দেশে যে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। সরকারপ্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এরপরও জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ধরনের সংকট তৈরি হলে রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।  

এই প্রেক্ষাপটে আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এসব বিষয় চিন্তায় রেখে তেমন একজনকে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পদে তিনি কাকে মনোনীত করবেন, সেই ইঙ্গিত দেননি।  

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ কাকে মনোনীত করছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতার কাছে বাংলানিউজ তা জানতে চায়। এক্ষেত্রে তারা প্রায় কাছাকাছি মন্তব্য করেন। তাদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটুকু রয়েছে বা কতটুকু তিনি প্রয়োগ করতে পারেন, তা বিষয় নয়।

এটি দেশের সর্বোচ্চ পদ, এই পদটিতে কাকে মনোনীত বা নির্বাচিত করা হবে সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি হয় তো সিদ্ধান্ত নিয়েও রেখেছেন কিন্তু তিনি সেটা প্রকাশ না করলে চূড়ান্তভাবে কেউই কিছু বলতে পারবে না। যাদের নাম আলোচনায় এসেছে বা আলোচনা চলছে তাদের মধ্য থেকেও কেউ হতে পারেন। আবার এমনও হতে পারে, যার নাম আলোচনায় নেই বা কেউ ভাবছেনই না, অথচ প্রধানমন্ত্রী যোগ্যতার বিবেচনায় তাকেই ঠিক করেছে রেখেছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদের জন্য।

গত কয়েকদিন ধরে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে জাতীয় সংসদের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ঘুরে ফিরে এমন আলোচনায় শোনা গেছে। তাদের অনেকেই মনে করছেন শিরীন শারমিনের রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত। ইতোমধ্যে স্পিকার প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিত পেয়েছেন- এমন কথাও কারো কারো মুখে শোনা গেছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও অনেকেই মনে করছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীই হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক দিনের ইচ্ছা একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি করার। দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা, সংসদ উপনেতা ও স্পিকার নারী। এই একই সময় একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি করা হতে পারে।  

শিরীন শারমিন রাষ্ট্রপতি হলে স্পিকারের চেয়ারে কে আসছেন, সংসদের ভেতরে-বাইরের সেই আলোচনাও সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনিকে স্পিকার করা হতে পারে এমন আলোচনাও আছে এবং অনেকে মনে করছেন।

একইভাবে রাষ্ট্রপতি পদে আলোচনায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনেতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম। তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদায় দীর্ঘদিন এ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ১৯৯৬ সালের মেয়াদে আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে তিনি অর্থ সচিব ছিলেন। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন মসিউর রহমান।  

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সময় তিনি দলের নির্বাচন কমিশনে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গত ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলেও তিনি নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার যুক্তি হিসেবে এসব বিষয় আলোচনায় আসছে। কেউ কেউ বলছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আগামী পাঁচ বছর পর রাষ্ট্রপতি করা হতে পারে। এবার মসিউর রহমানের সম্ভাবনাই বেশি।

রাষ্ট্রপতি পদে আরও আলোচনায় রয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নাম।  

আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দিনাজপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক  প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে মনে করছেন।  

এমন আলোচনাও আছে, শিরীন শারমিন রাষ্ট্রপতি হলে স্পিকার পদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু তিনি এই পদে যেতে আগ্রহী নন। এ ধরনের বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। যাদের নাম আলোচনায় এসেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দেশে, জাতীয় জীবনে, দেশের স্বার্থে স্ব স্ব অবস্থানে তাদের ভূমিকাও আলোচিত হচ্ছে। তবে আসলে কে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ বিষয়ে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, অনেকটা ধারণার ওপরই নামগুলো আলোচনায় এসেছে। কাকে রাষ্ট্রপতি করা হবে নিশ্চয়ই নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) তা ঠিক করে রেখেছেন। এত আগে তিনি তা প্রকাশ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। যেসব নাম আলোচনায় এসেছে, তাদের ঘনিষ্ঠ বা সমর্থকদের মাধ্যমে এসেছে।