ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ছাত্রলীগের হামলাকারীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন জাবির নিরাপত্তা প্রহরী শামসুল

জাবি প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৫৫:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা
ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে দেয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মধ্যরাতে তাদের নিজ বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী শামসুল।
 
শামসুলের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী পাথালিয়া ইউনিয়নের ওয়াইলা গ্রামে। ২০১৭ সালে পিতার অবসরের পর উত্তরাধিকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান। ওই এলাকায় জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনেরও বাড়ি। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি লিটন জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এলে শামসুল ছাত্রলীগের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন।
 
১৫ জুলাই রাত ৮টার দিকে বটতলায় যখন শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ তখন শামসুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত ছিলেন। রাত ১০টার পর তিনি বাসায় যান। এরপর মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবনে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এসময় হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে তাদের ধাওয়া দিলে তারা ক্যাম্পাস ছাড়েন। এরপর জাবি শাখা ছাত্রলীগের একটি অংশ সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ও নিরাপত্তা প্রহরী শামসুলের বাসায় আশ্রয় নেন।
 
স্থানীয়রা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লিটন ও শামসুলের প্রভাবে ৫ তারিখ পর্যন্ত ওয়াইলা ও বটতলা বাজার এলাকায় ঘুরাফেরা করেছেন। বিভিন্ন সময় এলাকার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিতেন। এতে স্থানীয়রা ভীত থাকতেন। ৫ আগস্ট সকালেও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এলাকায় ঘুরাঘুরি করেন যাতে কেউ ঢাকা যেতে না পারেন। সেখানে শামসুলও ছিলেন।
 
আহসানউল্লাহ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শামসুলের বাসার দো’তলার হলরুমে থাকতেন। তার বাড়িতেই রান্না হতো। প্রায় ১০-১২ দিন তারা ওই বাসায় থেকেছেন বলে দাবি করেন।  
 
নিজের বাসায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে নিরাপত্তা প্রহরী শামসুল দাবি করেন, তিনি উপাচার্যের বাসায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। মধ্যরাতে লিটন ফোন করে কয়েকজনকে তারা বাসায় রাখতে অনুরোধ করলে তিনি থাকতে দেন।
 
সামছুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আপনি আমার পরিচিত। এখন আপনি যদি এতো রাতে আমার বাসায় যান থাকতে আমি কি আপনাকে বের করে দিতে পারি? যারা থেকেছে তারা আমার পরিচিত। লিটন ভাই ফোন দিয়ে বলেছে, আমিতো না করতে পারি না। দুই-তিনজন ওই রাতে ছিল। পরের দিন তারা চলে গেছে।’
 
যদিও কথার এক পর্যায়ে তিনি আবার সব অস্বীকারও করেন, তার বাসায় কেউ থাকেনি। তিনি কাউকে আশ্রয় দেননি। উল্টো অভিযোগ করেন, তার ডিশ ব্যবসা স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা দখলে নিয়েছে। সেটার প্রতিবাদ করায় তার শত্রুপক্ষ মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে।
 
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবের পিয়ন খোকন ২০০১ সালে ডিশ ব্যাবসা শুরু করেন। কিন্তু ২০১৫ সালে প্রভাব খাটিয়ে পাথালিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ, জাবির নিরাপত্তা প্রহরী শামসুল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হালিম তা দখলে নিয়ে নেন। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তারা ওই ব্যবসা পরিচালনা করেছে।
 
খোকন বলেন, আমরা দখলে নেইনি। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সহায়তায় সেই ডিশ ব্যবসা পুনরুদ্ধার করে এখন আমরা পরিচালনা করছি। ডিশের ব্যবসা কার সেটা আপনি খোঁজ নেন। এলাকার সবাই জানে আমিসহ কয়েকজন ২০০১ সালে এই ব্যবসা শুরু করি। ২০১৫ সালে শামসুল, তৌহিদ, হালিমরা এটা দখলে নেয়। তখন সময় খারাপ ছিল। কিছু করতে পারি নাই।