ঢাকা, সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ই আশ্বিন ১৪৩১

জীবন বীমা হয়ে গেল জীবন হুমকি

সোনাগাজী উপজেলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৩ জানুয়ারী ২০২২ ০৮:০১:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সফরপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী আমির হোসেন শতভাগ বোনাসের আশায় একটি জীবন বীমা করে ছিলেন। কিন্তু ১০ বছর পর লভ্যাংশসহ টাকা তুলতে গিয়ে এখন জীবন-সংকটে তিনি।সৌদি আরব প্রবাসী আমির হোসেন। দশ বছর আগে দেশে এসে একটি জীবন বীমা করেছিলেন। এবার হিসাব চাইতে গিয়ে বীমা কর্মকর্তার মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তার।আমিরের আয়ের ওপর নির্ভরশীল তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও মা-বাবা। জীবন বীমায় প্রতারিত হয়ে এখন তাদের সবার চোখেই অন্ধকার।

 

অভিযুক্ত বীমা কর্মকর্তা নুরুল আলম মিন্টুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে ও আইনের ফাঁক দিয়ে  বেরিয়ে তিনি এখন দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সোনাগাজী উপজেলার ডাক বাংলা শাখার ব্রাঞ্চ কো- অর্ডিনেটর অ্যান্ড ইনচার্জ তিনি। অন্য দিকে, প্রবাসী আমির হোসেন সোনাগাজী উপজেলার সফরপুর গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি তিনি সৌদি আরব থেকে ৫ মাসের ছুটিতে দেশে এসেছেন।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, কর্মঠ রেমিট্যান্স যোদ্ধা থেকে এখন পাগল হওয়ার দশা হয়েছে আমিরের। ছেলের দুর্ভাগ্য নিয়ে আহাজারি করছেন তার বৃদ্ধ মা। পুরো বাড়িতেই শোকের মাতম। স্ত্রী সালমা আক্তার অভিযোগ করেন, ২০১১ সালে প্রবাস থেকে দেশে ফিরলে নুরুল আলম মিন্টুর পীড়াপীড়ি ও শতভাগ বোনাসের প্রলোভনে একটি জীবন বীমা করে ছিলেন আমির। প্রতি বছর ২২ হাজার ৬০ টাকা করে টানা ১০ বছর বীমার কিস্তি পরিশোধ করার পর এবার লভ্যাংশ সহ টাকা তুলতে গেলে টাল বাহানা শুরু করেন মিন্টু। শুধু তাই নয়, আমিরকে আর ও একটি বীমার প্রস্তাব দেন তিনি।

 

এবারে বলা হয়,আগের বীমার লভ্যাংশ সহ পাঁচ লাখ জমা রাখলে ৬ বছর পর ১০ লাখ টাকা পাবেন তিনি। প্রস্তাবে রাজি হয়ে নতুন বীমাটি ও করেন আমির। কিন্তু টাকা ঠিক মতো জমা হয়েছে কি না জানতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ডাকবাংলা অফিসে গিয়ে হাজির হন তিনি। বীমা কোম্পানি থেকে আমির কে জানানো হয়, ৫ লাখ টাকা নয়, তার নামে ৮০ হাজার টাকা কম জমা পড়েছে।

 

পরে বিষয়টি নিয়ে বীমা কর্মকর্তা মিন্টুর কাছে ব্যাখা চান আমির। কিন্তু কোনো সদুত্তর না দিয়ে আমিরকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন মিন্টু। এ সময় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমির। এ বিষয়ে আমির হোসেন বলেন, আমি তার কাছে টাকার হিসাব চাইলে সে আমাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে আমার মাথায়ও আঘাত করা হয়। পরে পরিবারের লোকজনের কাছে শুনেছি আমি বেশ কয়েক দিন পাগলের মতো ছিলাম। আমাকে বেঁধে রাখা হয়েছে তখন।

 

তিনি বলেন, জীবন বীমা করেছি জীবনের নিরাপত্তার জন্য। এখন আমার পরিবার এর ছয় জনের জীবন অনিশ্চিত। ছুটির মেয়াদ শেষ, আমি কী ভাবে আবার বিদেশ যাব জানি না। ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পার্শ্ববর্তী একটি ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষী মোঃ হারুন জানান, শুধু আমির নয় প্রতিদিনই ডাকবাংলা অফিসে এমন ঘটনা ঘটছে। সেদিন আমিরকে তিনি নিজ চোখেই মারতে দেখেছেন। এই ঘটনায় মামলা হলেও মাত্র এক দিন জেল খেটে বেরিয়ে যান মিন্টু। আমিরের ওপর হামলার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।

 

মিন্টু দাবি করেন,তাকে মারতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে যান আমির। তিনি বলেন, টাকা কম দেয়ার সুযোগ নেই। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি।স্থানীয় মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফারইস্টের এমন অভিযোগ শুধু ফেনীর ডাকবাংলায় নয়, অন্য শাখা গুলোতে ও হচ্ছে। গ্রাহক হয়রানি বন্ধে সরকার এর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ডাকবাংলা শাখার ক্যাশ অফিসার মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তবে নুরুল আলম মিন্টু যে কাজ করেছেন তা ঠিক হয়নি। কারণ গ্রাহকরা আমাদের লক্ষ্মী। 

 

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম পলাশ বলেন, ঘটনাটি শুনে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গেছে। তদন্ত করেছে। মামলা হওয়ার পর আসামিকে ও গ্রেপ্তার করেছে। এখন আসামি জামিনে বেরিয়ে আসলে আমাদের কিছু করার নেই।