ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দুঃখ ঘুচবে সাবেক ছাত্রনেতাদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:১৭:০০ পূর্বাহ্ন | রাজনীতি

 

সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মনোনয়নের জন্য এরই মধ্যে প্রার্থীদের আমলনামা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। বরাবরের মতো এবারও মাঠে সক্রিয় একঝাঁক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার তাদের প্রত্যাশা বেশি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট ও তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনা করবে দল, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

 

১৯৪৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ৩০টি কমিটি হয়েছে। এরমধ্যে সাবেক ২৯ কমিটির ৫৮ জন সভাপতি/আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ২৭ জন এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সক্রিয়। তাদের মধ্যে মাত্র নয়জন বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্য। একইভাবে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদকসহ অন্য পদের নেতাদের জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিত্ব করার হারও খুব কম। প্রতি নির্বাচনের আগেই সাবেক ছাত্রনেতারা আশায় থাকেন, এবার বুঝি তার ডাক পড়বে। সাংগঠনিক রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায় সময় দিয়ে অবস্থান তৈরি করলেও খুব কমই জাতীয় সংসদের জন্য মনোনয়ন পাচ্ছেন।

 

 এবার তো ভিন্ন আমেজ আছে। সব জায়গায় মানুষ পরিবর্তন চায়। যেহেতু স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ঘোষণা দিয়েছেন, সেজন্য স্মার্ট নেতৃত্ব লাগবে। সে হিসেবে আমরা আশাবাদী। 

 

 

জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছাত্ররাজনীতিতে ব্যয় করে হতাশার জীবন পেয়েছেন অসংখ্য ছাত্রনেতা। হাতেগোনা কয়েকজন রাজনীতির পাশাপাশি পড়াশোনা ঠিক রেখে ভালো চাকরিতে ইন করেছেন। অনেকে কোনো রকম ব্যবসা-বাণিজ্য করে টিকে আছেন। কিন্তু রাজনীতির সেই আকাঙ্ক্ষা কারোই দমে যায়নি। যদিও বেশিরভাগই সুযোগ পান না।

 

জাতীয় রাজনীতিতে এবং জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী/বিত্তশালীদের প্রভাবে সাবেক ছাত্রনেতারা কোণঠাসা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যারা জাতীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন, পাশাপাশি এলাকায়ও জনপ্রিয়তা তৈরি করেছেন- তাদের বিভিন্ন সময়ে মনোনয়নে মূল্যায়ন করতে দেখা গেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

 

 

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্রলীগের হাতেগোনা দু-তিনজন সাবেক নেতা দল বদল করেছেন। বাকিরা কেউ শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে চেয়ে জীবন শেষে করেছেন। বুকভরা হতাশা নিয়ে মারা গেছেন। জীবিতদের মধ্যে সাবেক সভাপতি-সম্পাদক ২৭ জন এখনো সক্রিয়। তাদের নয়জন সংসদে আছেন। তারা হলেন- তোফায়েল আহমদ, ওবায়দুল কাদের, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, শাহে আলম, অসীম কুমার উকিল, ইকবালুর রহিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, নজরুল ইসলাম বাবু ও মাহমুদ হাসান রিপন।

 

 

বাকি ১৮ জন এখনো শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন। স্বপ্ন দেখেন নেত্রী হয়তো এবার তাদের মনোনয়ন দেবেন। তারা হলেন- বাহালুল মজনুন চুন্নু, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (ঢাকা-৭), জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩), মো. আব্দুর রহমান (ফরিদপুর), মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম), ইসহাক আলী খান পান্না, বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকন, লিয়াকত শিকদার (ফরিদপুর), মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন (চট্টগ্রাম), এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট), সিদ্দিকী নাজমুল আলম, মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, এস এম জাকির হোসাইন (মৌলভীবাজার-১), রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, মো. গোলাম রাব্বানী, আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।

 

 

এর বাইরে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক, উপ-সম্পাদক, সহ-সম্পাদক ও সদস্য পদের কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রনেতাদের সংখ্যা অগণিত। এরাও নানা প্রক্রিয়ায় নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবেক সহ-সভাপতি সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর সদর), সাবেক সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম (সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম), সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক শাহজাহান শিশির (কচুয়া চাঁদপুর), সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ (কচুয়া, চাঁদপুর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন (গাজীপুর) ও শেখ সোহেল রানা টিপু (রাজবাড়ী), কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সভাপতি কামরুল হাসান রিপন (যাত্রাবাড়ী, ঢাকা), সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু (নোয়াখালী-৪), সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান টুটুল (সরিষাবাড়ী, জামালপুর), সাবেক সহ-সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন (সোনাগাজী, ফেনী), সাবেক অর্থ-সম্পাদক মোর্শেদুজ্জামান জামান সেলিম (গৌরীপুর ময়মনসিংহ), সাবেক সহ-সম্পাদক বদিউল আলম (পটিয়া, চট্টগ্রাম), সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম), সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার কবির (মুন্সিগঞ্জ), সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন মারুফ (চাঁদপুর), সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মাসুদ হোসেন দুলাল (নারায়ণগঞ্জ), সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (ফরিদপুর), সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আবু আব্বাস ভূঁইয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সাবেক সহ-সভাপতি শিহাব উদ্দিন (সেনবাগ, নোয়াখালী), সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমির (হাতিয়া, নোয়াখালী), সাবেক সদস্য ইসকান্দার মির্জা শামীম, সদস্য সাজু (রামগতি, লক্ষ্মীপুর), সাবেক সহ-সভাপতি লুৎফুন্নার মুন্নি (বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী), সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এতেশামুল হক রুমি (বুড়িচং, কুমিল্লা), সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন (নেত্রকোনা), সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মুস্তাফা আলমগীর (নেত্রকোনা), সাবেক সহ-সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহানুর (কিশোরগঞ্জ), আবু তাহের (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা), সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুর রহমান (পিরোজপুর), মাজহারুল ইসলাম মানিক (পাবনা), সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা), ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন (চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ), ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল (বানিয়াচং, হবিগঞ্জ), দেলোয়ার হোসেন ফারুক (লাকসাম, কুমিল্লা), অহিদুর রহমান জয় (মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা), সাবেক সহ সভাপতি আশরাফ হোসেন, সাবেক সহ-সভাপতি মুন্না (ঠাকুরগাঁও)।

 

 

কিন্তু ব্যবসায়ী ও অর্থ-বিত্তের মালিকদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না এসব ছাত্রনেতা। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে নতুন করে যুক্ত হয়েছে হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীদের চাপ। এত চাপে পিষ্ট অনেকে হতাশ হয়ে ছিটকে পড়ছেন। কেউ নেত্রীর (শেখ হাসিনা) দিকে তাকিয়ে টিকে আছেন। এরা শেখ হাসিনাকেই নিজেদের রাজনীতির অক্সিজেন মনে করেন।

 

 

 এবারের নির্বাচনে জনমত জরিপের ওপর ভিত্তি করে জনপ্রিয় প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন। আমাদের সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যারা জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন তারা সবাই মনোনয়ন পাবেন বলে আশা রাখি। 

 

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন  বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে জনমত জরিপের ওপর ভিত্তি করে জনপ্রিয় প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন। আমাদের সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যারা জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন তারা সবাই মনোনয়ন পাবেন বলে আশা রাখি।’

 

 

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী  বলেন, ছাত্ররাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতি দুটো পৃথক প্ল্যাটফর্ম। ছাত্ররাজনীতি মূলত রাজনীতির পাঠশালা। জাতীয় রাজনীতিতে কৃষক শ্রমিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। আমরা দেখেছি, সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই জাতীয় রাজনীতিতে এসেও নিজের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন, গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন। পাশাপাশি নিজ এলাকায়ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। অতীতে এমন নেতাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়নের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গ্রহণযোগ্য ও এলাকায় জনপ্রিয় সাবেক ছাত্রনেতাদের বিবেচনা করা হবে বলে আমার বিশ্বাস।

 

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন  বলেন, এবার তো ভিন্ন আমেজ আছে। সব জায়গায় মানুষ পরিবর্তন চায়। যেহেতু স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ঘোষণা দিয়েছেন, সেজন্য স্মার্ট নেতৃত্ব লাগবে। সে হিসেবে আমরা আশাবাদী।

 

 সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই জাতীয় রাজনীতিতে এসেও নিজের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন, গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন। পাশাপাশি নিজ এলাকায়ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। অতীতে এমন নেতাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়নের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করেছে। 

 

তিনি বলেন, নেত্রী তো ঘোষণাই দিয়েছেন, ‘শত ফুল ফুটতে দাও, আমি সবচেয়ে সুন্দরটি বেছে নেবো।’ সম্প্রতি নাটোরে তিনি তৃণমূলে জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সে হিসেবে জনপ্রিয়তার বিবেচনায় আমরা এগিয়ে। এলাকার মানুষ চায় তরুণ নেতৃত্ব। তবে, সর্বোপরি নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

 

ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি অহিদুর রহমান জয় হতাশা প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের দখলে থাকবে আগামী নির্বাচনে দলীয় নমিনেশন।’