ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নের জন্যে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে এক বিএনপি নেতার! এমনটি হয়েছে উপজেলার তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে। উপজেলা ও জেলার নেতাদের এহেন কর্মকাণ্ডে তৃনমুলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়ার।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্যে ১ ডিসেম্বর বুধবার প্রার্থী তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়। এর আগে ৩০ নভেম্বর ওই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দলের প্রার্থী ঠিক করতে স্থানীয় শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে তৃনমুলের সভা হয়। কিন্তু ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই সভা শেষ করেন দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত নেতারা। পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বসে আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগের আহবায়ক হাজী সফিউল্লাহ মিয়া, যুগ্ম আহবায়ক মো. আবু নাসের আহমেদ, হানিফ মুন্সি ও খোরশেদ আলম মনোনয়নের জন্যে ঢাকা পাঠাতে ইউনিয়ন ভিত্তিক নামের তালিকা করেন। এসময় জেলার দায়িত্বশীল নেতারাও সেখানে ছিলেন।
সুত্র জানায়, তালশহর ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয় তাতে প্রথম নম্বরে রয়েছে ইউনিয়ন বিএনপি’র সদস্য সুলেমান সেকান্দর ওরফে সুলেমান মিয়ার নাম। যদিও হালে তিনি আওয়ামীলীগ নেতা। স্থানীয় বিএনপি নেতারাও জানিয়েছেন, সুলেমান ও তার গোটা পরিবার বিএনপি’র রাজনীতিতে জড়িত সেটিই তারা জানেন। তার বড় ভাই মো. হারুন অর রশিদ বিএনপির একজন দাতা সদস্য। তথ্য খুজে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর তালশহর ইউনিয়ন বিএনপির যে পূর্নাঙ্গ কমিটি হয় সেখানে ২৮ নম্বর সদস্য হিসেবে সুলেমান মিয়ার নাম রয়েছে। আর তার বড় ভাই হারুন অর রশিদের নাম রয়েছে ২৫ নম্বর সদস্য হিসেবে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১৭ সালের ১ মে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যে কমিটি হয় সেখানে সুলেমান মিয়াকে ১৫ নং সদস্য হিসেবে রাখা হয়। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ তাকে বহিস্কার করেন। তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ ও সাধারন সম্পাদক মো. রাকিবুল হাফেজের স্বাক্ষরে ওই বছরের ১ নভেম্বর প্রদত্ত বহিস্কারাদেশের চিঠিতে বিএনপির পদ-পদবীর তথ্য গোপন করে সুলেমান মিয়া আওয়ামী লীগে যোগদান করেন বলে উল্লেখ করা হয় এবং আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তাকে সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করার কথা বলা হয়। বহিস্কারের চিঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের হাতেও দেয়া হয়। ওই চিঠি উপজেলা আওয়ামীলীগের একজন যুগ্ম আহবায়ক মো. আবু নাছের আহমেদ তার সিল-স্বাক্ষর দিয়ে বুঝে রাখেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের চারজন ক্ষমতাবানের মধ্যে একজন হিসেবে তালিকা তৈরির সময় উপস্থিত ছিলেন এই আবু নাসের আহমেদ। তবে সুলেমান মিয়া নিজেকে এখন তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবী করেন।
তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, 'সুলাইমান মিয়া বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তাকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করেছিলাম।পরবর্তীতে তিনি একটি পকেট কমিটি করেছেন। কিন্তু এ কমিটির কোনো বৈধতা নেই। আমাদের কমিটি ২০১৭ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে হয়েছে এবং সেটি উপজেলা ও জেলা অনুমোদন দিয়েছে। সুলেমান নিজেকে যে কমিটির সভাপতি দাবী করেন, সেটি বৈধ কোন কমিটি নয়।' তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নিয়াজ আকতার বলেন, 'তাদের পরিবারের কাউকে দেখি নাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে। তার ভাই হারুন অর রশিদ বিএনপির সদস্য ও পৃষ্ঠপোষক। সুলেমানকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য কিভাবে সুপারিশ করা হলো, তা বুঝতে পারছি না।' ইউনিয়ন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ মিয়া বলেন, 'সুলেমান মিয়ার পুরো পরিবার বিএনপি করতো। এখন শুনছি আওয়ামী লীগ করে! তার ভাই হারুন ইউনিয়ন বিএনপির ডোনার।' তবে সুলেমান মিয়া দাবী করে বলেন, 'জন্মগতভাবেই আমি আওয়ামী লীগ। আমি কখনো বিএনপি করিনি। আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আমার কমিটিই বৈধ। হাজী সফিউল্লাহ এই কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন।'
আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহবায়ক মো. আবু নাছের আহমেদ জানান, 'সুলেমান মিয়া বিএনপি করতো তা সঠিক। এজন্যে আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বহিস্কারও হয়েছিলেন। তবে তাকে কেন চেয়ারম্যান পদে সুপারিশ করা হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না।' তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, 'উপজেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। সুলেমানের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি।