
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে পুরো জাতি অস্থিরতার মধ্যে আছে। নির্বাচন দিয়ে অস্থিরতা দূর করুন। আর একটি রাজনৈতিক দলকে বলবো এমন কিছু বলবেন না যাতে দেশ আবারও অস্থির হয়ে উঠে।
তিনি বলেন, সংস্কারের কথা বলে অনেকে নির্বাচন পিছানোর কথা বলছেন। সংস্কার সাধারণ মানুষ কয়জন বুঝে? দুইবেলা ভাত, মাথার গোঁজার ঠাই, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং শান্তি চায় মানুষ। জনগণের কাছে এই মৌলিক অধিকারগুলোই হচ্ছে সংস্কার।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কুমিল্লার লাকসাম স্টেডিয়ামে রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে এক এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। লাকসাম উপজেলা, পৌরসভা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম। জনসভার শুরুতে ৩১টি কবুতর উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির ৩১ দফাকে স্বাগত জানানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি ফেসবুকে ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে বিদেশে বসেই কেউ কেউ সব সংগ্রাম করেছে। আমরা কিছুই করিনি। বিদেশে বসে অনেক কিছুই লেখা যায়, বলা যায়। এসময় বিএনপি মহাসচিব জুলাই বিপ্লবে জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, দেশকে আবার অস্থির করার পায়তারা চলছে। আমরা চাই এই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক। কেননা ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে গঠিত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আজকে একটি ফ্যাসিবাদ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখান থেকে ছাত্রজনতার সমন্বয়ে আমরা বিদায় করেছি। এখন একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন এ সরকারকে সমর্থন না দিলে কাজ করতে পারবে না। তাই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ৭১ দেশ স্বাধীন করেছিলাম, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ভালো কিছু উপহার দিতে পারে নাই। তারই কন্যা সংসদ, বিচার বিভাগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা, ভোটাধিকার, অর্থনীতি সব ধ্বংস করে দিয়েছে। এ থেকে দেশকে সুস্থধারায় ফিরে আনতে তারেক রহমান শ্লোগান দিয়েছেন টেকব্যাক বাংলাদেশ। আরেকটি শ্লোগান দিয়েছে ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথেই ফয়সালা হয়েছে। হাসিনা পালিয়েছে।
তিনি বলেন, এই লাকসামে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক অত্যাচারের শিকার হয়েছে। ভয়ংকর রূপে আর্বিভূত হয়েছিলো মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বিএনপির কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেয়নি। লাকসামের ত্রাস ছিলেন। এখন কোথায়?
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে আমাদের সাবেক এমপিসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। জুলাই বিপ্লবেও ২ হাজার মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে। সেই শহীদদের সম্মান জানাই, সম্মান জানাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাই গণতন্ত্রের জননীকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিজেদের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই না। কেউ কোনো বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। অযথা দেশকে বিভ্রান্ত করবেন না। ২৪ যেমন আমাদের স্মরণীয়, ৭১-ও স্মরণীয়। ৭১ নিয়ে কটাক্ষ কেউ কথা বলবেন না।
তিনি বলেন, অনেক বয়স হয়েছে। আর হানাহানি চাই না। দেশ নিয়ে শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে এখনো ষড়যন্ত্র করছে। আগেও বলেছি ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী। তারা শেখ হাসিনা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে না। এরা দেশের মানুষকে হত্যা করেছে।
সমাবেশে মনোহরগঞ্জ উপজেলার আহবায়ক শাহ সুলতান খোকন, লাকসাম উপজেলার সদস্য সচিব আব্দুর রহমান বাদল এবং পৌর সদস্য সচিব বেলাল রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, ত্রাণ ও পূর্নবাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন, কর্মসংস্থান সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মো. মোস্তাক মিয়া, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) কর্ণেল অব. আনোয়ারুল আজিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহবায়ক উৎবাতুল বারী আবুসহ অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।