ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পানছড়িতে অটোরিকশার দাপটে অসহায় জনসাধারণ

পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : রবিবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ০৮:৩৮:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
 
ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের দাপটে পথঘাটে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে যেমন উচ্চহারে অটোরিকশা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে জীবনের ঝুঁকিও। যানজট যেন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। জনগনের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই; এমন অভিযোগ খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলাবাসীর। 
 
রবিবার (১২ফেব্রুয়ারি) হাটবারে পানছড়ি বাজার ও তার আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্তত হাজারো খানেক অটোরিকশা-ইজিবাইক। সড়কের যান চলাচলের নিয়মকানুন জানা না থাকায় দেখা যায় যত্রতত্র পার্কিং, গাড়িতে যাত্রী উঠা-নামা। ফলে অন্যান্য যানবাহনের চলাচলে বিঘ্ন ছাড়াও পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। 
 
পানছড়ির ৪টি অটোরিক্সা মালিক ও চালক সমিতির তথ্যমতে, ৫৮০টি তালিকাভুক্ত  থাকলেও সমিতির বাইরে আরোও পাঁচশতেরও বেশি অবৈধ যানবাহনের কাছে জিম্মি স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্রুতগতিতে চলার ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়া, যত্রতত্র পার্কিং, যানজট বৃদ্ধি ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগসহ এ নিয়ে প্রতিদিন আসে অসংখ্য অভিযোগ। এগুলো নিয়ন্ত্রণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সর্বোপরি উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা খুবই জরুরী। তা না হলে আগামীতে আরে বেশি সমস্যায় পড়বে পানছড়িবাসী নিজেরাই।
 
পানছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জ্ঞান রঞ্জন চাকমা জানান, বিশেষ করে হাটের দিন পানছড়ি জিরো পয়েন্ট থেকে কলাবাগান ব্রিজ ও চেঙ্গী ব্রীজ পর্যন্ত সব মিলিয়ে এক কিলোমিটারের কম এলাকা পাঁড়ি দিতে পায়ে হেঁটেও ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগে। অটোরিকশা ওয়ালারা ফুটপাতসহ রাস্তায় জ্যাম করে দাঁড়িয়ে থাকে। যার ফলে শুধু শরীরটা নিয়ে হেঁটে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।
 
এ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল  কাদের জানান, পানছড়ির প্রতিটি রাস্তায় ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা এলোমেলোভাবে রাখায় প্রতিনিয়ত জরুরী সেবার রুগী নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সামান্য ৫০০ গজ রাস্তা পাঁড়ি দিতে মাঝে মাঝে আধা ঘন্টা সময় লাগে। 
 
ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক চালক সাইফুল হোসেন বললেন, আমরাতো উপজেলা পরিষদ ও সমিতির স্টিকার নিয়ে চালাচ্ছি। তবে স্টিকারবিহীন প্রায় ৫-৬ শত নতুন ইজিবাইক ও অটোরিকশা ঢুকছে। সেগুলোর কী হবে? অবৈধ বা অনুমোদনহীন অতিরিক্ত অটোরিকশা না থাকলে রাস্তা জ্যাম হতো না। 
 
কথা হয় বয়োবৃদ্ধ মোঃ শাহ আলমের সাথে। তিনি আগে রিক্সা চালাতেন। বয়স ও যাত্রীর অভাবে জীবিকার তাগিদে এখন অটোরিকশা চালান। তিনি বলেন,পায়ে টানা রিকশায় এখন আর যাত্রীরা উঠতে চায়না। তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋন নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনেছি। এভাবেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে অটোরিকশা।
 
আগামীতে নয়, এই মুহূর্তেই এই সব অটোরিকশা নিয়ে চরম সমস্যা দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ বলেন , যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য যানবাহন জরুরী। একথা যেমন সত্য তেমনি অতিরিক্তও ভালো না। অটোরিকশাগুলো এখন পানছড়ি'র বিষফোঁড়া। এগুলোর যন্ত্রণায় রাস্তা পার হতেও আতঙ্কিত হই আমরা। যখন-তখন উল্টে যাচ্ছে ।  
 
তারই প্রমান যেন আজ হাটবাজারের দিনেই।দুপুরে বেপরোয়া গতিতে ব্যাটারীচালিত অটোরিকসা বাজারের পাশ্বস্থ সিনিয়র মাদ্রাসা'র পুকুরে নেমে পড়ে। এতে পুর্ণ মোহন  ত্রিপুরা নামে বয়োবৃদ্ধের ডান হাত ভেঙ্গে যায়। তাই বৈধ অটো রিকশাগুলো রেখে বাকী সব তুলে দেয়া অতিজরুরী। এবং অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজারের ও উপজেলার স্ট্যান্ড পরিকল্পিত পূনর্বিন্যাসের প্রয়োজন। 
 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া আফরোজ বলেন, অটোরিকশা রেজিষ্ট্রেশনের জন্য স্টিকার দিয়েছি। এগুলোর বাইরে সবই অবৈধ। আমি প্রতিটি মাসিক আইনশৃঙ্খলা  মিটিংয়ে পরিবহন চালক ও মালিক সমিতির  নেতাদের  এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও অটো চালকদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। নিয়ম না মানলে খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।