ভারতীয় সংগীতাঙ্গনে আরও এক জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের পতন হলো। লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই এবার না ফেরার পথে যাত্রা করলেন উপমহাদেশের আরেক প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ি।
‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)’ রোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে মুম্বাইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার সূত্রে জানা গেছে। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
অসংখ্য বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া বাপ্পি লাহিড়ি একাধারে ছিলেন গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক। সংগীতাঙ্গনে তিনি বাপ্পি-দা নামেও সমধিক পরিচিত ছিলেন।
গত বছর এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাপ্পি। কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।
বেসরকারি ক্রিটিকেয়ার হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গত প্রায় একমাস বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। গত সোমবার তিনি বাড়ি ফেরেন। কিন্তু মঙ্গলবারই ফের অসুস্থ বোধ করেন। পরে পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হলো না তার।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সমৃদ্ধ এক পরিবারে জন্ম বাপ্পি লাহিড়ির। তার ডাক নাম ছিল আলোকেশ বাপ্পী লাহিড়ি। বাবা অপরেশ লাহিড়ি ছিলেন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় গায়ক এবং মা বাঁশরী লাহিড়ি ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও গায়িকা। বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে থেকেই সংগীতকলায় হাতেখড়ি বাপ্পির। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী চিত্রাণী, কন্যা রিমা এবং পুত্র বাপ্পা ছাড়াও অসংখ্য ভক্ত-গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বাপ্পি লাহিড়ি পোশাকের সঙ্গে স্বর্ণের অলঙ্কার ও কালো চশমা পরতে খুব পছন্দ করতেন। কালজয়ী সংগীতশিল্পী কিশোর কুমার সম্পর্কে তার মামা।
হিন্দিতে ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, বাংলায় ‘অমর সঙ্গী’, ‘আশা ও ভালবাসা’, ‘আমার তুমি’, ‘অমর প্রেম’ প্রভৃতি ছবিতে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন অসংখ্য গান। ২০২০ সালে তার শেষ গান ছিল ‘বাগি- ৩’ ছবির জন্য। তিনি বেশ কিছু গজলও লিখেছেন।
সংগীতের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের একটা পর্যায়ে বাপ্পি লাহিড়ি রাজনীতিতে পা রাখেন। যোগ দেন বিজেপিতে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েন। যদিও তিনি রাজনীতিতে কখনোই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না।