ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মহেশখালী ধলঘাটায় মাদ্রাসা কাম সাইক্লোন সেন্টার, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ইউপি চেয়ারম্যান পরিবারের বাস ভবন ও টর্চালসেল

স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৬ অগাস্ট ২০২৪ ০৫:১৫:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা আহসান উল্লাহ বাচ্চু ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি নুরানী মাদ্রাসা কাম সাইক্লোন সেন্টার দখলে রেখেছেন। নির্মাণের পর থেকে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে ধলটার সাবেক চেয়ারম্যান পেশী শক্তি পরবর্তী দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের বসতবাড়ী হিসাবে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আছসছে। আর সেখানে গড়ে তুলেছে টর্চারসেল, মাদক, জুয়া ও অস্ত্রের সমাহার। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনও তা উদ্ধার করতে কোন উদ্যোগ নেয়নি।অথচ বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এলাকার হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে মানবেতর জীবন কাটালেও আশ্রয় নিতে পারেনা এই আশ্রয় কেন্দ্রটিতে।

 

 

অভিযোগ রয়েছে - খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি থেকে শুরু করে একাধিক মামলার আসামি আহসান উল্লাহ বাচ্চু  এই সাইক্লোন সেন্টারে তৈরি করেছেন টর্চারসেল। বাহির থেকে নিরীহ লোকজন ধরে নিয়ে সেখানে অত্যাচার, নির্যাতন করে টাকা ও সম্পত্তি দখলে নিতেন বাচ্চু। তার রয়েছে একটি বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনীও। এরা দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্ম করে এই সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়ে থাকেন৷  সেখানে রাতভর চলে জুয়া ও মাদকের আসর। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র মজুদের নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করেন এই সাইক্লোন সেন্টার৷ 

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান - সরকারি এই সাইক্লোন সেন্টারটি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে বাচ্চু বাহিনী। রাতের বেলা এখানে চলে অবৈধ সকল কর্মকাণ্ড৷ সন্ধ্যা নামলে এই আশ্রয়ন কেন্দ্র পরিনত হয় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে। মাদক, জুয়া ও অস্ত্রের প্রশিক্ষণও চলে সেখানে। এই সাইক্লোন সেন্টারের পাশ দিয়ে লোকজন চলাচল করতেও ভয় পান৷ আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সাইক্লোন সেন্টারের দখলমুক্ত করে সাধারণ মানুষের জন্যে উম্মুক্ত করা হোক। 

 

 

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়- গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আহসান উল্লাহ  বাচ্চু ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। কিন্তু ১৬ আগষ্ট থেকে আবারো এলাকায় প্রবেশ করে হানাহানি শুরু করেছে তারা৷ এই বাচ্চুর সেকেন্ড ইন কমান্ড কলিম উল্লাহ ও রাইফেল নাছির। তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে হত্যা, ঘের দখল, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে একাধিক মামলা। কয়েকটি মামলায় দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন এরা দুজন। ধলঘাটার নিরীহ লোকজনকে হত্যা করে কালো অধ্যায় রচিত করেছে এই বাচ্চু বাহিনী। নিহতের মধ্যে রয়েছে - নূর আহমেদের ছেলে আবুল কাশেম , আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল আজিজ , আমির সোলতানের ছেলে গিয়াসউদ্দিন ও বাদশা মিয়ার ছেলে রহমত উল্লাহ হত্যা। 

 

 

 

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ফোরামের সভাপতি ফজলুর কাদের চৌধুরী বলেন- ঘূর্ণিঝড় প্রবন এলাকা ধলঘাটা ইউনিয়ন। প্রতি বছর এই দ্বীপের বাসিন্দারা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। 

 

দ্বীপের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সাইক্লোন সেন্টারটি সরকার নির্মাণ করেছেন ঘূর্ণিঝড়ের সময়  মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে। কিন্তু একজন ইউপি চেয়ারম্যান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি নিজে দখলে নিয়ে সংসার সাজিয়েছেন, করেছেন অপরাধের আস্তানা।  বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও লজ্জার। 

 

 

 

 

ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান-  আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে এই আশ্রয়ন কেন্দ্র ছাড়ার জন্যে বহুবার ইউএনও ও ডিসি বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এতে কোন কাজ হয়নি। এই বাচ্চু বাহিনীর হাতে এলাকার সাধারণ মানুষ জিম্মি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সে করেনি এমন কোন অপকর্ম নেই এলাকায়।

 

 

এবিষয়ে জানতে ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু'র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন ধরনের মন্তব্য না করে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।

 

 

 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন- এই ধরনের অভিযোগ আগেও একবার এসেছিল। সরকারি একটি সাইক্লোন সেন্টার দখল করে একজন ইউপি চেয়ারম্যান কোনভাবেই থাকতে পারেনা।খুব দ্রুতই উক্ত সাইক্লোন সেন্টার দখলমুক্ত করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।