আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের দাবিতে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা পরিষদের সকল সদস্য এবং পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন রাঙামাটি বৈষম্য বিরোধী সাধারণ ছাত্র আন্দোলনকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাঙামাটি বৈষম্য বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে একটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন।
শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলোর মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের ৪ দফা দাবি নিম্নরূপ:
১. ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিরুদ্ধে বিচার: শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের দ্বারা পরিচালিত হত্যাযজ্ঞের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। তারা মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার না হলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।
২. সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিচার: আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী মহাজোটের শরীক দলগুলোর দ্বারা পরিকল্পিত হত্যা, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তারা দাবি করেছেন, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য বন্ধ করতে হবে।
৩. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সংস্কার: প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা, এবং হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বারংবার কায়েমের চেষ্টা করছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ। নতুন সরকারকে তাদের নিয়োগ বাতিল করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এসব কর্মকর্তাদের কারণে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের চেষ্টা হচ্ছে।
৪. অবশেষে সুযোগের সমতা: প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য দ্রুততম সময়ে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে যেসব ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
এসময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো জনপ্রতিনিধি কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। যারা এখনো দায়িত্ব পালন করছে তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। যদি এর মধ্যে পদত্যাগ না করে, তাহলে ছাত্র সমাজ গণভবনের মতো পৌরসভা অবস্থা তৈরি করবে। পরে, বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী ও পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।
এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রাঙামাটিতে বৈষম্য এবং ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রবর্তিত হবে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।
এদিকে, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে মাঠ দখলে বিএনপি, আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেকটাই ঘরে। জেলায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শোক দিবস উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ১৫ আগষ্ট ঘিরে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা শরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তারা অবস্থান নিয়েছেন যাতে করে শোক দিবসকে ঘিরে আওয়ামী লীগের কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে। পাশাপাশি রাঙামাটি জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানোর অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ সকল অপরাধীদের বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।