মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়তার শেষ নেই। পাশাপাশি চাহিদাও বেড়েছে ঘরে ঘরে। গৃহিণীদের নিত্যদিনের সঙ্গী ফুলঝাড়ু। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় এক নামে ডাকা হয় উলুফুল বলে। আর সমতলবাসীদের কাছে পরিচিত ফুলঝাড়ু হিসেবে। চাহিদা বেশি থাকায় উলুফুল পাহাড় পর্বতের ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যিক চাষাবাদ না হলেও পাহাড়ের জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেওয়া এ ফুলের রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। স্থানীয় মানুষ তা সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরাও ফুলঝাড়ুর ব্যবসায় লাভের মুখ দেখছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এই পেশায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে রোয়াজারহাট মুরাদ নগরের ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আকতার হোসেন বলেন-- বিশ বছরের অধিক সময় ধরে আমি এই ফুলঝাড়ু ব্যবসার সাথে জড়িত। রাঙ্গামাটি, রাজস্থলী, পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা এই ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করি। শীতের একটু আগে এবং শীতের শেষে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা সংগ্রহ করতে থাকে। ফুলঝাড়ু ১৫ থেকে ২০ দিন রোদে শুকানোর পর গুদামজাত করি। কোন সময় ছয় মাস পর বিক্রি আবার কোন সময়ে এক বছরের অধিক সময় পরে বিক্রি করা হয়। বিশ দিন শুকানোর কাজে দুই থেকে তিন জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। দৈনিক ৭শত থেকে ৯শত টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয়। বিশেষত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ১৮ থেকে ২০টি ফুলঝাড়ুর কাঠি দিয়ে একটি আটি বাধেঁন আর এক জোড়া দাম ১০০ বিক্রি হয়। পরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জিপ বা ট্রাকের মাধ্যমে সমতলের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান।
বাণিজ্যিক ভাবে ফুলঝাড়ুর সুফল দেখে অনেকেই নিজের অব্যবহৃত টিলা-পাহাড়ে ফুলঝাড়ু আবাদের সম্ভাবনা দেখছেন। পাহাড়ের মাটি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা ফুলঝাড়ুর মাধ্যমে বদলে যেতে পারে প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাও। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এটি সরবরাহ করতে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ঝাড়ু ব্যবসায়ীরা।
লাভজনক এ ব্যবসায় অনেকে আসতে চাইছে। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেকে আসতে পারছেনা। যদি এই খাতে লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করে তাহলে সরকার এ ব্যবসা থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
রাঙ্গুনিয়া বন কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন--- পাহাড় থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ থেকে শুরু করে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। লাভজনক এ ব্যবসা থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে। এবছর এখন পর্যন্ত প্রায় রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে । পুরো মৌসুমে রাজস্ব গেলো বছরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ছোটখাটো সিএনজি টোটো গাড়ি করে নেওয়া ফুলঝাড়ু থেকে রাজস্ব আদায় করা হয় না।বড় ট্রাক বা ছোট ট্রাক থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়।
পোমরা ইউনিয়নের সৌদিয়া গেইটের বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ খন্দকার আরিফুল হক বলেন---ফুলঝাড়ু রাঙ্গামাটি, রাজস্থলী, পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসার সময় রাজস্ব আদায় শেষে পাস নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায। আমরা এই বিটে শুধু দেখি পাস নিয়েছে কি না। এখানে অর্থের কোন প্রকাশ লেনদেন হয় না।