ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রায়পুরে কর্মসংস্থান সৃ‌ষ্টিতে ভূমিকা রাখছে “বেঙ্গল সু”

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ ,লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০১:২৬:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
৪৩টি দেশে রফতানি হচ্ছে বিশ্বমানের পণ্য।  লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার “রাখালিয়ায় অবস্থিত  বেঙ্গল সু ইন্ড্রাষ্ট্রির” উৎপাদিত স্যূ” দেশের সীমানা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে বিশ্বের ৪৩টি দেশে।সাথে লক্ষ্মীপুর কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে এ যাচ্ছে এ স্যূ। দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইতালি, জাপান, কানাডা, জার্মান, ভারত, চায়না ও ফ্রান্স।শতভাগ রপ্তানি মুখী অত্যাধুনিক এ প্রতিষ্ঠান থেকে গত অর্থ বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার জুতা রপ্তানি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার নারী - পুরুষ কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানে। পর্যায়ক্রমে তা ৭ হাজারে উন্নিত হবে।
 
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ( মানব সম্পদ)  নজরুল ইসলাম বলেন, বেঙ্গল সু যে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তার অংশীদার লক্ষ্মীপুরবাসি। প্রায় সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রেতাদের প্রতিনিধি (বায়ার) সরাসরি রাখালিয়ায় অবস্থিত বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজ পরিদর্শনে আসে। বায়াররা লক্ষ্মীপুরের মতো এলাকায় কাজের মান, পরিবেশ, শ্রমিক দেখে সন্তুষ্ট হয়। ইতালি, ফ্রান্স, চিন, যুক্তরাজ্য বেঙ্গল সু ইন্ডাস্ট্রিজের সু র  প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন নিয়মিত। শুধু জুতাই নয় বেঙ্গল লেদার থেকে মানিব্যাগ, পার্টস, সাইট বেগ সহ নানা ব্যবহার যোগ্য পণ্য উৎপাদিত হয় এ প্রতিষ্ঠানে।
 
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকরা কোম্পানিটি পরিদর্শনে আসেন।
 
জানা যায়, ১৫ একর ৭৩ শতাংশ জমির উপর  অবস্থিত কারখানাটি ২০১১ সালে  সু উৎপাদন শুরু করে। শুরু থেকে এই কোম্পানি আন্তর্জাতিক মানের জুতা ও চামড়াজাত পণ্য তৈরি করে আসছে। গ্রামের দুস্থ, অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের জুতা তৈরিতে প্রশিক্ষিত করা হয়। এ কারখানায় বর্তমানে দেড় হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। বেকারত্ব নিরসনে ভূমিকা রেখেছে ব্যাপক ভাবে প্রতিষ্ঠানটি। এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করছে নিয়মিত এই ফ্যাক্টরি।
 
প্রাভেটাইজেশন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সনে রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া বাজার সংলগ্ন স্থানে সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হয় নোয়াখালী টেক্সটাইল মিল। ক্রমান্বয়ে বৃহৎ অংকের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৩ সনে মিলটি লে-অফ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকারের বেসরকারিকরণ নীতিমালার আওতায় নোয়াখালী টেক্সটাইল মিলটি বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তরের লক্ষ্যে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ৯বার টেন্ডার আহবান করে ব্যর্থ হয়ে ২০০৪ সনে ১০ম বারের মত টেন্ডার আহবান করলে আলী হায়দার চৌধুরীসহ অপরাপর মালিকগণ মিলটির সর্বোচ্চ মূল্য ৪ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ডাকের মাধ্যমে মিলটি ক্রয় করেন।
 
২০০৪ সনের ১২ জুলাই বিটিএমসি কর্তৃক ১৫.৭৩ একর ভূমিসহ মিলটির দখল হস্তান্তর করে।  ২০০৬ সনের ৭ জুন মালিকানা চুক্তি  সম্পাদিত হয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষের বিদ্যুৎ সরবরাহে অপ্রতুলতা ও গ্যাস সংযোগ না থাকায় মিলটি টেক্সটাইল মিল হিসেবে ফের চালু করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া মিলের অভ্যন্তরীণ মেশিনারিজ-যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় থাকার কারণে অকেজো হয়ে যায়।
 
অন্যদিকে মিলটির ক্রয়কারীগণের প্রধান ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল লেদার কমপেক্স লিঃ ১৯৮৩ সন হতে অত্যন্ত সুনামের সাথে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানী করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের অর্থনীতিতে রাখছে বিশাল অবদান।তাই বেঙ্গল লেদার এখানে কাপড়ের পরিবর্তে জুতা উৎপাদন শুরু করে।
 
বর্তমানে তারাই দেশের সর্ববৃহৎ পাকা চামড়া রপ্তানীকারী প্রতিষ্ঠান। রপ্তানীর সুবাদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতানের সাথে বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠিত চামড়াজাত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সাথে সু-সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি তার যোগ্যতায় বাংলাদেশ ফিনিস্ড লেদার, লেদার গুডস্ এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের ৪ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ সুনামের সাথে ।
 
বেঙ্গল স্যূ ইন্ডাষ্ট্রির জেনারেল ম্যানেজার ( জিএম) বিপ্লব পাল বলেন , বাংলাদেশ চামড়া রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে সমগ্র বিশ্বে পরিচিত। রপ্তানী বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে বর্তমানে জুতা শিল্পের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে প্রক্রিয়াজাতকরণ চামড়া বিদেশীরা ক্রয় করে তা দ্বারা জুতা তৈরি করে বেশ মুনাফা অর্জন করছে। জুতা-শিল্প পরিবেশ বান্ধব শিল্প। এতে কোন প্রকার তরল বর্জ্য নির্গত হয় না বিধায় এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নয়। বেঙ্গল সু ইন্ড্রাস্ট্রিজ শতভাগ রপ্তানিমুখী একটি প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ বান্ধব এ কারখানা বিভিন্ন দেশে জুতা রপ্তানি করে এরই মধ্যে সুনাম অর্জন করেছে এলাকার সন্তান হিসেবে, জন্মস্থানের প্রতি দায়িত্ববোধ সর্বোপরি লক্ষ্মীপুরকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করার লক্ষ্যে এ বিশ্বমানের ‘স্যূ’ ফ্যাক্টরী নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলের টিপু সুলতান স্যর।তাছাড়া তিনি এ ‘সু’ ফ্যাক্টরীকে বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর গর্বের প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মেধাভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস করেন তিনি। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিয়মিত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না থাকায় উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়েছে। আমরা শ্রমিকদের দুপুরের খাবার ও যাতায়াত ফ্রি করে দিয়েছি।